দ্বিতীয় পর্ব : দ্য মিউল - ১৮. ফাউণ্ডেশন-এর পতন
টাইম ভল্টের পরিবেশ ঠিক বুঝিয়ে বলা যাবে না। কালের প্রবাহে এটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তা না, কারণ দেয়ালগুলোর অবস্থা যথেষ্ট ভালো, মজবুত, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রয়েছে, সেই সাথে সুন্দরভাবে রং করা, মনে হয় যেন জীবন্ত, এবং স্থায়ীভাবে বসানো চেয়ারগুলো আরামদায়ক, বোঝাই যায় আজীবন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এটা প্রাচীন তাও বলা যাবে না, কারণ তিন শতাব্দীর ঘটনাপ্রবাহ কোনো ছাপ ফেলেনি। রহস্যময়তা এবং ভয়ের অনুভূতি তৈরি করারও কোনো চেষ্টা নেই-কারণ এটা সকলের জন্য উন্মুক্ত।
তারপরেও বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি বারবারই দেখা দিয়েছে, কিছু দূর হয়েছে, কিছু এখনো ঝুলে আছে-এবং সেটা হচ্ছে কামড়ার অর্ধেক জুড়ে তৈরি করা ফাঁকা গ্লাস কিউবিকল। তিন শতাব্দীর মাঝে চারবার হ্যারি সেলডনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি এখানে বসে ভবিষ্যৎ বংশধরদের উদ্দেশ্যে কথা বলেছেন। দুইবার তার কথা শোনার জন্য সেখানে কেউ উপস্থিত ছিল না।
তিন শতাব্দী এবং নয় প্রজন্ম পরেও এই বৃদ্ধ-যিনি ইউনিভার্সাল এম্পায়ার-এর স্বর্ণালি দিনগুলো দেখেছেন তিনি তার গ্রেট-আন্দ্রা গ্রেট গ্র্যাণ্ড চিল্ডরেনদের চাইতে গ্যালাক্সি সম্বন্ধে অনেক অনেক বেশি ধারণা রাখেন।
গ্লাস কিউবিকল ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে তার আবির্ভাবের জন্য।
প্রথমে এলেন মেয়র ইণ্ডবার তৃতীয়, উৎকণ্ঠায় নিরব নিথর হয়ে থাকা জনপথের মাঝ দিয়ে জমকালো গ্রাউণ্ড কার চালিয়ে, সাথে এল তার নিজস্ব আসন, অন্য সবগুলোর চেয়ে উঁচু এবং প্রশস্ত। সেটা বসানো হল একেবারে সামনে। দ্রুত সবকিছুর উপর কর্তৃত্ব বিস্তার করলেন ইণ্ডবার। শুধু সামনের ফাঁকা গ্লাস কিউবিকল বাদে।
বা পাশের গম্ভীর অফিসার কুর্নিশ করল, “এক্সিলেন্স, রাতে আপনার অফিসিয়াল অ্যানাউন্সম্যান্টের সাব-ইথারিক ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে।”
“গুড, এর মাঝে টাইম ভল্ট নিয়ে তৈরি করা বিশেষ ইন্টার প্ল্যানেটারি প্রোগ্রামগুলো চলতে থাকুক, কী হবে বা হতে পারে সে ধরনের কোনো পূর্বানুমান বা হিসাব-নিকাশ প্রচার করা যাবে না। জনগণের মনোভাব কেমন, সন্তোষজনক?”
“এক্সিলেন্স, ভীষণরকম সন্তোষজনক। গুজব ছড়ানো বন্ধ হয়ে গেছে। আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে মানুষের মাঝে।”
“গুড।” ইশারায় অফিসারকে চলে যেতে বললেন তিনি, তারপর সুন্দরভাবে নেকপিস ঠিক করে নিলেন।
দুপুর হতে ঠিক বিশ মিনিট বাকি!
একজন দুজন করে মেয়রাল্টির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বর্গ বণিক সমিতির গুরুত্বপূর্ণ। নেতারা আসতে লাগলেন। মেয়রের সাথে দেখা করলেন সবাই। আর্থিক প্রতিপত্তি এবং মেয়রের সুদৃষ্টির মাত্রা অনুযায়ী সবাই কিছু না কিছু প্রশংসাসূচক বাক্য শ্রবণ করলেন, তারপর গিয়ে বসলেন যার যার জন্য নির্দিষ্ট করা আসনে।
হেভেনের রাও এসেছে। অনুমতি ছাড়াই সে মেয়রের আসনের দিকে এগোল।
“এক্সিলেন্স!” কুর্নিশ করল রাণ্ডু।
ভুরু কোঁচকালেন মেয়র। “তোমাকে তো দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।”
“এক্সিলেন্স, আমি এক সপ্তাহ আগে অনুরোধ জানিয়েছিলাম।”
“অত্যন্ত দুঃখিত, আসলে রাষ্ট্রের কাজ আর সেলডনের আবির্ভাব নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত-”।
“এক্সিলেন্স, আমি বুঝতে পেরেছি, কিন্তু আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, ইণ্ডিপ্যাণ্ডেন্ট ট্রেডারদের শিপগুলো ফাউণ্ডেশন ফ্লিটের মাঝে ভাগ করে দেওয়ার আদেশ বাতিল করুন।”
রেগে উঠলেন ইণ্ডবার। “এখন আলোচনার সময় নয়।”
“এক্সিলেন্স, এখনই একমাত্র সময়,” আকুতি ঝরে পড়ল রাণুর কণ্ঠে। “স্বাধীন বণিক বিশ্বগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে আমি আপনাকে বলছি, এধরনের পদক্ষেপ মেনে নেওয়া যাবে না। সেলডন আমাদের পক্ষ নিয়ে আমাদের সমস্যা সমাধান করে দেবার আগেই এই আদেশ ফিরিয়ে নিতে হবে। পরে সংশোধনের কোনো সুযোগ থাকবে না এবং আমাদের জোট ভেঙে যাবে।”
শীতল দৃষ্টিতে রাণ্ডুর দিকে তাকালেন ইণ্ডবার, “তুমি কী জানো আমি ফাউণ্ডেশন আর্মড ফোর্সেস এর প্রধান? মিলিটারি পলিসি নির্ধারণ করার অধিকার আমার আছে না নাই?”
“এক্সিলেন্স, আছে, কিন্তু কিছু বিষয় একেবারেই অযৌক্তিক।”
“আমার কাছে তো কোনোটাই অযৌক্তিক মনে হচ্ছে না। এরকম জরুরি সময়ে তোমাদের হাতে আলাদা ফ্লিট ছেড়ে দেওয়া বিপজ্জনক। নিজেদের ভেতর বিবাদ করলে লাভ হবে শক্রর। আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে, অ্যাম্বাসেডর, সামরিক এবং রাজনৈতিক দুভাবেই।”
গলার পেশি ফুলে উঠেছে, টের পেল রাণ্ডু। মেয়রের সম্মানসূচক উপাধি এড়িয়ে গেল সে। “আপনি এখন নিরাপদ বোধ করছেন। ভাবছেন সেলডন সমস্যার সমাধান করে দেবেন। কিন্তু এক মাস আগে যখন আমাদের শিপ টারেন এ মিউলকে পরাজিত করে তখন আপনি ছিলেন অনেক নরম। আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, স্যার, ফাউণ্ডেশন শিপ পাঁচপাঁচটা সরাসরি যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে এবং স্বাধীন বণিক বিশ্বসমূহের ফ্লিট আপনাকে বিজয় এনে দেয়।”
বিপজ্জনক ভঙ্গিতে ভুরু কোঁচকালেন ইণ্ডবার, “টার্মিনাসে আপনার আর থাকার দরকার নেই। আজ সন্ধ্যার ভেতরে ফিরে যাবেন। তা ছাড়া, ডেমোক্রেটদের সাথে আপনার সম্পর্ক অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে।”
“যখন ফিরে যাবো,” জবাব দিল রাণু, “আমার সাথে আমাদের শিপগুলো ফিরে যাবে। ডেমোক্রেটদের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। শুধু জানি যে কমাণ্ডিং অফিসারদের বিশ্বাস ঘাতকতার জন্য ফাউন্ডেশন শিপ মিউলের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সাধারণ সৈনিক, ডেমোক্র্যাট হোক আর যাই হোক, তাদের কোনো দোষ নেই। ফাউণ্ডেশন-এর বিশটা শিপ তাদের রিয়ার এডমিরালের আদেশে হোরলেগরে আত্মসমর্পণ করে, অথচ তারা ছিল নিরাপদ এবং অক্ষত। রিয়ার এডমিরাল আপনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ-আমার ভাতিজার ট্রায়ালের সময় সেই প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করে। শুধু এটাই না আরো অনেক কিছু জানি আমরা। কোনো বিশ্বাসঘাতকের অধীনে আমাদের শিপ আর জনগণের জীবনের উপর ঝুঁকি নিতে পারি না।”
“টার্মিনাস ত্যাগ করার সময় আপনাকে কড়া প্রহরায় রাখা হবে।”
সরে এল রাণ্ডু পিঠে টার্মিনাস প্রশাসকের অবজ্ঞাপূর্ণ দৃষ্টির বাণবিদ্ধ হচ্ছে বুঝতে অসুবিধা হল না।
বারোটা বাজতে দশ মিনিট বাকি!
টোরান বেইটা দুজনই এসেছে। রাণ্ডুকে দেখে হাত পা নেড়ে ডাক দিল।
মৃদু হাসল রাণ্ড, “তোমরাও এসেছে। ব্যবস্থা করলে কীভাবে?”
“আমাদের টিকেট হল ম্যাগনিফিসো,” দাঁত বের করে হাসল টোরান। “টাইম ভল্ট নিয়ে একটা কম্পোজিশন শোনাতে বলেছে ইণ্ডবার, কোনো সন্দেহ নেই নিজেকে মহানায়ক প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু ম্যাগনিফিসোর এক কথা আমাদের ছাড়া সে আসবে না। কেউ ওর মত পাল্টাতে পারে নি। এবলিং মিসও ছিলেন সাথে, এইত একটু আগে কোথায় যেন গেলেন। তারপর হঠাৎ উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন করল, “কী হয়েছে, আঙ্কেল? তোমাকে খুব একটা ভালো দেখাচ্ছে না।”
মাথা নাড়ল রাণু, “না দেখানোরই কথা। সময় ভালো না, টোরান। মিউলের পালা শেষ হলেই আমাদের পালা আসবে, আমি ভয় পাচ্ছি।”
দীর্ঘদেহী একজনকে আসতে দেখে হাসি ফুটল বেইটার কালো চোখে, একটা হাত বাড়িয়ে বলল, “ক্যাপ্টেন প্রিচার, আপনি তা হলে স্পেস ডিউটি পালন করতে এসেছেন?”
বেইটার হাত ধরে সামান্য মাথা নোয়ালো ক্যাপ্টেন, “ঠিক তা না, ড. মিস কেন যেন আমাকে এখানে উপস্থিত থাকতে বলেছেন, তবে সাময়িক। আগামী কালই হোম গার্ডে ফিরে যাচ্ছি। কয়টা বাজে?”
বারোটা বাজতে তিন মিনিট বাকি!
ম্যাগনিফিসোর অবস্থা ভয়ানক। ভীষণ মনমরা, শরীর বাকাচোরা করে নিজেকে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। বড় বড় চোখ দুটোতে অস্বস্তি। তীর্যক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে চারপাশে।
বেইটার হাত ধরে টানল, এবং যখন শোনার জন্য মাথা নোয়ালো বেইটা। সে ফিস ফিস করে বলল, “আপনার কী মনে হয়, মাই লেডি, আমি…আমি যখন ভিজি সোনার বাজাবো তখন এই এত বড় লোকেরা এখানে থাকবেন?”
“প্রত্যেকেই, কোনো সন্দেহ নেই,” তাকে আশ্বস্ত করল বেইটা, মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। “এবং আমার বিশ্বাস তারা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করে নেবে যে তুমি গ্যালাক্সির সবচেয়ে সেরা বাদক এবং তোমার কনসার্টের মতো কনসার্ট জীবনে কখনো দেখেনি। কাজেই তুমি সোজা হয়ে ঠিক মতো বস। নইলে লোকে আমাদের দেখে হাসবে।”
বেইটার ছদ্ম রাগের ভঙ্গি দেখে দুর্বলভাবে হাসল ম্যাগনিফিসো। ধীরে ধীরে হাড্ডিসার দেহের ভাজ খুলে বসল সোজা হয়ে।
দুপুর-
-এবং গ্লাস কিউবিকল এখন আর ফাঁকা নয়।
তার আবির্ভাব কেউ লক্ষ করেছে কিনা সন্দেহ আছে। পরিষ্কার এক বিভাজন; এক মুহূর্ত আগে কিছুই ছিল না, পরমুহূর্তেই আছে।
কিউবিকলের ভেতর একজন লোক, হুইলচেয়ারে বসা, বৃদ্ধ, বলিরেখাপূর্ণ মুখে অসম্ভব উজ্জ্বল একজোড়া চোখ, এবং তার কণ্ঠস্বর সজীব, তারুণ্যদীপ্ত। মেলানো একটা বই উল্টো করে কোলের উপর ফেলে রাখা, কোমল সুরে কথা বললেন তিনি।
“আমি হ্যারি সেলডন!”
জমাট নীরবতার মাঝে তার কণ্ঠস্বর বজ্রপাতের মতো শোনালো।
“আমি হ্যারি সেলডন! জানি না আপনারা কেউ এখানে আছেন কি না, তবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার প্ল্যানে কোথাও বিচ্যুতি ঘটবে সেই ভয় এখনো দেখা দেয়নি। প্রথম তিন শতাব্দীতে নন ডেভিয়েশনের সম্ভাবনা নয় চার দশমিক দুই শতাংশ।
থেমে হাসলেন তিনি, “ভালো কথা, আপনারা কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে বসতে পারেন। কেউ ধূমপান করতে চাইলে করতে পারেন। আমি তো আর রক্ত মাংসের শরীর নিয়ে এখানে উপস্থিত নেই। কাজেই কোনো আনুষ্ঠানিকতারও প্রয়োজন নেই।
“এবার বর্তমান সমস্যা নিয়ে কথা বলা যাক। এই প্রথমবারের মতো ফাউণ্ডেশন একটা গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে বা তার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তার আগ পর্যন্ত সাইকোহিস্টোরির শক্ত নিয়মের সাহায্যে প্রতিটা আক্রমণ ঠেকানো হয়েছে সুনিপুণভাবে। বর্তমান আক্রমণ হল অতিরিক্ত প্রভুত্ব পরায়ণ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ফাউণ্ডেশন-এরই অতিরিক্ত বিশৃঙ্খল এক আউটার গ্রুপের আক্রমণ। এটার প্রয়োজন ছিল, ফলাফল স্পষ্ট।”
অভিজাত দর্শকদের গাম্ভীর্যের মুখোশ খসে পড়তে লাগল। চেয়ার ছেড়ে অর্ধেক উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন ইণ্ডবার।
সামনে ঝুঁকলো বেইটা। মহান সেলডন কী বলছেন? কয়েকটা শব্দ সে শুনতে পারেনি।
“-যে সমঝোতার প্রয়োজন দুটো উদ্দেশ্যে। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী সরকারের ভেতর স্বাধীন বণিকদের বিদ্রোহ একটা নতুন ধরণের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। লড়াই এর মনোভাব সৃষ্টি করার মতো উপাদানগুলো আবার মানুষের মাঝে ফিরে আসছে। যদিও কঠোর হাতে দমন করা হয়েছে, গণতন্ত্রের পুনরুত্থান-”
গলা চড়াল সবাই। এতক্ষণের ফিসফিসানি পরিণত হয়েছে কর্কশ শব্দে, এবং সবাই পৌঁছে গেছে আতঙ্কের শেষ সীমায়।
টোরানের কানের কাছে মুখ নিয়ে জিজ্ঞেস করল বেইটা, “উনি মিউলের কথা বলছেন না কেন? বণিকরা তো বিদ্রোহ করে নি।”
শ্রাগ করল টোরান।
বেড়ে উঠা বিশৃঙ্খলতার মাঝে বৃদ্ধ হাসি মুখে কথা বলেই চলেছেন।
“ফাউণ্ডেশন-এর উপর চাপিয়ে দেওয়া গৃহযুদ্ধের ফলাফল হিসেবে একটা নতুন এবং দৃঢ় কোয়ালিশন গভর্নমেন্ট প্রয়োজনীয় এবং সুবিধাজনক আউটকাম। এখন শুধুমাত্র ওল্ড এম্পায়ারের অবশিষ্ট অংশ পরবর্তী অগ্রগতির মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াবে এবং আগামী কয়েক বছরে তার কোনো সম্ভাবনা নেই। অবশ্য আমি পরবর্তী-”
হৈ হট্টগোলের মাঝে সেলডনের কথা আর শোনা যাচ্ছে না। মনে হতে লাগল তিনি নিঃশব্দে ঠোঁট নাড়ছেন।
এবলিং মিস এসে রাঙুর পাশে দাঁড়াল, চেহারা উত্তেজনায় লাল। চিৎকার করছে সে। “সেলডন ভুল ক্রাইসিসের কথা বলছেন, তোমরা বণিকরা গৃহযুদ্ধের কথা ভাবছিলে?”
“একটা পরিকল্পনা ছিল, হা।” মিনমিনে গলায় বলল রাণ্ডু। “মিউলের কারণে সেটা আমরা বাদ দেই।”
“তা হলে মিউল পৃথক একটা সমস্যা, সাইকোহিস্টোরিতে তার কথা বলা হয়নি। এখন কী হবে?”
জমাট নীরবতার মাঝে বেইটা হঠাৎ খেয়াল করল কিউবিকল আবার ফাঁকা। দেয়ালের আণবিক উজ্জ্বলতা নেই। নিয়ন্ত্রিত বায়ু প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
কোথাও সাইরেণ বাজছে তীক্ষ্ণ স্বরে। রাণু এই শব্দের অর্থ সবার কাছে পরিষ্কার করে দিল, “স্পেস রেইড!”
হাতঘড়ি কানের কাছে নিয়ে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল এবলিং মিস, “বন্ধ হয়ে গেছে, বাই দ্য গ্যালাক্সি! এখানে কারো ঘড়ি চলছে?”
কমপক্ষে বিশজন তাদের ঘড়ি কানের কাছে তুলল এবং বিশ সেকেণ্ডেরও কম সময়ের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেল যে-কোনোটাই চলছে না।
“তা হলে,” মুখে সেঁতো হাসি, বলার ভঙ্গি যেন চূড়ান্ত রায় পড়ে শোনাচ্ছে, “কিছু একটা টাইম ভল্টের নিউক্লিয়ার পাওয়ার থামিয়ে দিয়েছে-এবং আক্রমণ শুরু করেছে মিউল।”
গোলমাল ছাপিয়ে শোনা গেল ইণ্ডবারের চিৎকার, “সবাই বস! মিউল এখান থেকে পঞ্চাশ পারসেক দূরে।”
“ছিল,” পাল্টা চিৎকার করল মিস, “এক সপ্তাহ আগে। ঠিক এই মুহূর্তে টার্মিনাসে বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে।”
বেইটা টের পেলো একটা অদ্ভুত গম্ভীর হতাশা ঘিরে ধরছে তাকে। কঠিনভাবে চেপে ধরছে। জোরে নিশ্বাস ফেলার পরই সেটা কিছুটা হালকা হল সেইসাথে গলার দুপাশে ব্যথা অনুভব করল সে।
বাইরেও প্রচণ্ড গোলমালের শব্দ শোনা যাচ্ছে। দরজা খুলল দড়াম করে। দ্রুত পায়ে একজন দৌড়ে গেল মেয়রের দিকে।
“এক্সিলেন্স,” ফিসফিস করে বলল সংবাদ বাহক, “শহরের কোনো ভেহিকলই চলছে না। সকল ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। টেন্থ ফ্লিট পরাজিত হয়েছে এবং মিউলের শিপগুলো এই মুহূর্তে অ্যাটমোস্ফিয়ারের ঠিক বাইরে। জেনারেল-”
হাঁটু ভেঙে পড়ে গেলেন ইণ্ডবার, মেঝেতে পড়ে থাকলেন অক্ষমের মতো। পুরো হলে আর কেউ উঁচু গলায় কথা বলছে না। এমনকি দরজার বাইরে জমে উঠা ভিড়ের সবাই প্রচণ্ড ভয় পেলেও নিশ্চুপ, এবং বিপজ্জনকভাবে ঠাণ্ডা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
উঠে দাঁড়ালেন ইণ্ডবার। ঠোঁটের কাছে ওয়াইনের গ্লাস ধরল কেউ একজন। চোখ খোলার আগেই ঠোঁট নাড়লেন তিনি, এবং যে কথাগুলো বললেন তা হল, “আত্মসমর্পণ!”
বেইটার মনে হল সে কেঁদেই ফেলবে-দুঃখ বা অপমানে নয়, বরং একটা ভয়ংকর হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দে। তার জামার হাত ধরে টানল এবলিং মিস, “কাম, ইয়ং লেডি।” ।
তাকে প্রায় কোলে করেই চেয়ার থেকে উঠিয়ে নেওয়া হল।
“আমরা চলে যাচ্ছি,” বলল মিস, “আপনার মিউজিশিয়ানকে সাথে নিন।” মোটাসোটা বিজ্ঞানীর ঠোঁট দুটো বর্ণহীন, কাঁপছে।
“ম্যাগনিফিসো, দুর্বল গলায় ডাক দিল বেইটা। প্রচণ্ড আতঙ্কে জড়োসড়ো হয়ে আছে ক্লাউন। চোখদুটো কাঁচের মতো স্বচ্ছ আকার ধারণ করেছে।
“মিউল,” আর্তনাদ করে উঠল সে। “মিউল আমাকে ধরতে আসছে।”
বেইটার স্পর্শ পেয়েই পাগলের মতো দাপাদাপি শুরু করে দিল। টোরান এগিয়ে এসে জায়গামতো একটা ঘুসি মেরে অজ্ঞান করে ফেলল তাকে, তারপর বস্তার মতো ম্যাগনিফিসোকে কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে এল।
পরের দিন, মিউলের ঘিনঘিনে কালো যুদ্ধযানগুলো টার্মিনাস গ্রহের ল্যাণ্ডিং ফিল্ডে অবতরণ করল ঝাঁকে ঝাঁকে। আক্রমণকারী জেনারেল অন্য গ্রহের তৈরি গ্রাউণ্ড কারে চড়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল টার্মিনাস সিটিতে, যেখানে পুরো শহরের এটমিক কারগুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে নিপ্রাণ হয়ে।
পূর্বের মহাপরাক্রমশালী ফাউণ্ডেশন-এর সামনে হ্যারি সেলডনের আবির্ভাবের ঠিক চব্বিশ ঘণ্টা পরে সেটা নতুন শত্রু কর্তৃক দখলের ঘোষণা দেওয়া হল।
ফাউণ্ডেশন বিশ্বগুলোর মাঝে, স্বাধীন বণিকরাই টিকে আছে, এবং এবার মিউল-কনকোয়ারার অফ দ্য ফাউণ্ডেশন- দৃষ্টি ফেরালো তাদের দিকে।
*