ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার by আইজাক আসিমভ, chapter name দ্বিতীয় পর্ব : দ্য মিউল - ১৫. দ্য সাইকোলজিস্ট

দ্বিতীয় পর্ব : দ্য মিউল - ১৫. দ্য সাইকোলজিস্ট

বহুবিধ কারণেই “বিশুদ্ধ বিজ্ঞান” হিসেবে পরিচিত উপাদানগুলো ফাউণ্ডেশনে সবচাইতে মুক্ত জীবনযাপন করে। যে গ্যালাক্সিতে ফাউণ্ডেশন-এর কর্তৃত্ব-এবং এমনকি অস্তিত্ব পর্যন্ত নির্ভর করছে তার অতি উন্নত প্রযুক্তির উপর-এমনকি গত দেড় শতাব্দীতে ফিজিক্যাল পাওয়ারে প্রভূত উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও-উত্তরাধিকার সূত্রে বিজ্ঞানীরা একটা বিশেষ ধরনের নিরাপত্তা বোধ অর্জন করে। তাদের প্রয়োজন আছে, এবং সেটা তারা জানে।

তেমনিভাবে, বহুবিধ কারণে এবলিং মিস-যারা তাকে চেনে না শুধু তারাই নামের সাথে উপাধি যোগ করে-ফাউণ্ডেশন-এর “বিশুদ্ধ বিজ্ঞান” এর সবচাইতে মুক্ত উপাদান। সে বিজ্ঞানী, এমন এক বিশ্বের, যেখানে বিজ্ঞানকে সম্মান করা হয়-এবং প্রথম সারির। তার প্রয়োজন আছে, এবং সেটা সে জানে।

আর তাই যখন অন্যরা হাঁটু গেড়ে কুর্নিশ করে, সে জোর গলায় বলে বেড়ায় যে তার পূর্বপুরুষরা কখনো কোনো ঘৃণ্য মেয়রকে কুর্নিশ করেনি। এবং তার পূর্বপুরুষদের সময়ে ভোটের মাধ্যমে মেয়র নির্বাচিত হত, এবং ইচ্ছা হলেই তাদের লাথি মেরে গদি থেকে সরিয়ে দেওয়া যেত এবং জন্মসূত্রে যে লোক উত্তরাধিকার হিসেবে এই পদ লাভ করে সে একটা জাত গর্দভ।

সেজন্যই যখন এবলিং মিস স্থির করল যে নিজেকে দর্শন দিয়ে ইণ্ডবারকে সে ধন্য করে দেবে তখন স্বাভাবিক জটিল অফিসিয়াল নিয়ম কানুনের ধার ধারল না। মানুষের বিরক্তি উৎপাদনে সক্ষম এমন দুটো জ্যাকেট কাঁধের উপর ফেলে মাথায় চাপাল অদ্ভুত ডিজাইনের বিদঘুঁটে একটা টুপি, কটু গন্ধের একটা সিগার ধরিয়ে, দুজন গার্ডের বাধা উপেক্ষা করে হুড়মুড় করে এগিয়ে চলল মেয়রের প্রাসাদের দিকে।

অনধিকার প্রবেশের ব্যাপারটা হিজ এক্সিলেন্স টের পেলেন তখন যখন তিনি নিজের শৌখিন বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত। সেখান থেকেই তিনি শুনতে পেলেন একটা উচ্চৈঃস্বরের কোলাহল ক্রমশ এগিয়ে আসছে।

ধীরে ধীরে ইণ্ডবার চাড়া তোলার যন্ত্রটা নামিয়ে রাখলেন; ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন; ধীরে ধীরে ভুরু কোঁচকালেন। কারণ ইণ্ডবার প্রতিদিন কাজ থেকে কিছু সময়ের ছুটি নেন, এবং আবহাওয়া ভালো থাকলে দুই ঘণ্টা বাগানে কাটান। বাগানে তিনি বর্গাকারে এবং ত্রিভুজাকারে ফুল ফুটিয়েছেন, লাল এবং হলুদ রঙের মিশ্রণ, পার্থক্য বোঝানোর জন্য মাঝখানে একটা করে বেগুনি ফুল, আর পুরো বাগান ঘিরে রেখেছে ঘন সবুজ উদ্ভিদের বর্ডার। বাগানে কেউ তাকে বিরক্ত করতে পারে না-কেউ না। মাটি মাখা গগ্লাভস খুলে বাগানের ছোট্ট দরজার দিকে এগোলেন ইবার। স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করলেন “কী হচ্ছে এসব?”

মানবসভ্যতার শুরু থেকেই এধরনের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মানুষ ঠিক এই সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন বা শব্দগুলো ব্যবহার করে আসছে। এর কোনো রেকর্ড নেই কারণ কখনোই এই প্রশ্ন থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়নি।

কিন্তু এবার আক্ষরিক উত্তর পাওয়া গেল, কারণ একটা লাফ দিয়ে মিস এর শরীর এগিয়ে এল সামনে, হাতের ঝাঁপটা দিয়ে সরিয়ে দিল তার ভেঁড়াখোঁড়া ঝোলার কোণা টেনে রাখা এক সৈনিককে।

বিরক্ত ভঙ্গিতে ভুরু কুঁচকে সৈনিকদের সরে যেতে ইশারা করলেন ইণ্ডবার, আর মিস ঝুঁকে তোবড়ানো টুপি তুলল মাটি থেকে, লেগে থাকা কাদা মাটি পরিষ্কার করল ঝাড়া দিয়ে, টুপি দিয়ে নিজের বাহুতে কয়েকটা বাড়ি মারল, তারপর বলল:

“শোন, ইণ্ডবার, তোমার ঐ (ছাপার অযোগ্য) ভৃত্যগুলো আমার এই ঝোলা নষ্ট করার জন্য দায়ী। ভেতরে অনেকগুলো ভালো পোশাক ছিল।” নাটুকে ভঙ্গিতে কপাল মুছল সে।

মুখ বিকৃত করে কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে আছেন মেয়র, পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার শীর্ষবিন্দু থেকে রাগত স্বরে বলেন, “আমাকে জানানো হয়নি যে তুমি দেখা করার অনুরোধ জানিয়েছ। নিশ্চয় তোমাকে কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়নি।”

চরম অবিশ্বাস নিয়ে এবলিং মিস তাকাল মেয়রের দিকে, “গ্য-লাক্সি,ইণ্ডবার গতকাল আমার নোট পাওনি? তার আগের দিন আমি সেটা এক ধূসর ইউনিফর্মের হাতে দিয়েছিলাম। সরাসরি তোমার হাতেই দিতাম, কিন্তু জানি যে তুমি আনুষ্ঠানিকতা খুব পছন্দ করো।”

“আনুষ্ঠানিকতা!” অসহিষ্ণু দৃষ্টি সরালেন মেয়র। তারপর ঝাঁজালো গলায় বললেন, “নিখুঁত সংগঠন কখনো দেখেছো? ভবিষ্যতে সাক্ষাৎ লাভের জন্য তুমি অনুরোধের তিনটা কপি নির্দিষ্ট অফিসে জমা দেবে। তারপর অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এবং দেখা করতে আসার সময় উপযুক্ত পোশাক পরে আসবে-উপযুক্ত পোশাক, বুঝতে পেরেছ-এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবে। এবার যেতে পারো।”

“পোশাক আবার কী দোষ করল?” সমান তেজে জিজ্ঞেস করল মিস। “ঐ (ছাপার অযোগ্য) শয়তানগুলো থাবা বসানোর আগে এটাই ছিল আমার সেরা পোশাক। যা বলতে এসেছি সেটা বলা হয়ে গেলেই চলে যাবো। গ্যালাক্সি, সেলডন ক্রাইসিস এর ব্যাপার না হলে এই মুহূর্তে চলে যেতাম।”

“সেলডন ক্রাইসিস!” প্রথমবারের মতো আগ্রহ বোধ করলেন মেয়র। মিস একজন প্রথম শ্রেণীর সাইকোলজিস্ট-একজন ডেমোক্র্যাট, বর্বর কিসিমের লোক, এবং নিঃসন্দেহে বিদ্রোহী, কিন্তু একজন সাইকোলজিস্টও বটে। এতটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়লেন মেয়র যে মিস হঠাৎ করেই একটা ফুল ছিঁড়ে নেওয়ায় বুকের ভেতর খচ করে যে কাঁটা বিঁধল সেটার কথাও বলতে পারলেন না। গন্ধ শোকার জন্য ফুলটা তুলে ধরল মিস, তারপর নাক কুঁচকে ছুঁড়ে ফেলে দিল।

“এসো আমার সাথে। জরুরি আলোচনার উপযুক্ত করে বাগানটা তৈরি হয়নি।” শীতল কণ্ঠে বললেন ইণ্ডবার।

বিশাল ডেস্কের পেছনে চেয়ারে বসে তিনি ভালো বোধ করলেন যেখান থেকে তিনি মিস-এর খুলি আঁকড়ে থাকা অল্প কয়েক গোছা চুলের দিকে তাকাতে পারছেন; আরও ভালো বোধ করলেন যখন চারপাশে তাকিয়ে বসার জন্য দ্বিতীয় কোনো চেয়ার না পেয়ে অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল মিস; সবচেয়ে ভালো লাগল যখন নির্দিষ্ট কন্টাক্ট স্পর্শ করতেই একজন কর্মচারী দ্রুতপায়ে ভেতরে এসে যথাযথ নিয়মে কুর্নিশ করল, তারপর ডেস্কের উপর ধাতু দিয়ে বাঁধাই করা একটা মোটাসোটা ভলিউম রেখে চলে গেল।

“এবার ঠিক আছে,” ইণ্ডবার বললেন, পরিস্থিতি আবার আয়ত্তে আনতে পেরে খুশি। “তোমার এই অযাচিত সাক্ষাৎকার সংক্ষিপ্ত করার জন্য যা বলার সংক্ষেপে বল।”

“আজকাল আমি কী করছি তুমি জানো?” অলস ভঙ্গিতে প্রশ্ন করল মিস ।

“তোমার রিপোর্ট এখানে আছে,” সন্তুষ্টির সাথে জবাব দিলেন মেয়র, “সেইসাথে একটা সারসংক্ষেপ। যতদূর বুঝতে পেরেছি, সাইকোহিস্টোরির গণিতের সাহায্যে তুমি হ্যারি সেলডনের কাজ ডুপ্লিকেট করার চেষ্টা করছ, এবং ফাউণ্ডেশন এর জন্য ভবিষ্যৎ ইতিহাসের নির্ধারিত গতিপথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছ।”

“ঠিক,” শুকনো গলায় বলল মিস। “সেলডন যখন ফাউণ্ডেশন তৈরি করেন তিনি এখানে পাঠানো বিজ্ঞানীদের সাথে কোনো সাইকোলজিস্টকে পাঠাননি-যেন ঐতিহাসিক গতিপথে ফাউণ্ডেশন অন্ধভাবে এগিয়ে যেতে পারে। আমার গবেষণায় আমি টাইম ভল্ট থেকে পাওয়া অনেক উপাদান ব্যবহার করেছি।”

“এগুলো আমি জানি, মিস। দ্বিতীয়বার বলে সময় নষ্ট করার দরকার নেই।”

“দ্বিতীয়বার বলছি না,” চিৎকার করল মিস, “কারণ এখন যা বলব তা রিপোর্টে নেই।”

“রিপোর্টে নেই মানে?” বোকার মতো বলল ইণ্ডবার। “কীভাবে-”

“গ্যালাক্সি! আমাকে নিজের মতো করে বলতে দাও, বাটকু। আমার প্রতিটা মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা বন্ধ কর, নইলে এখান থেকে বেরিয়ে যাব, তারপর তোমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ক, কিছু যায় আসে না। মনে রাখবে ফাউণ্ডেশন যেভাবেই হোক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবে, কিন্তু আমি বেরিয়ে গেলে তুমি তা পারবে না।”

টুপি আছড়ে ফেলায় কাদা লাগল মেঝেতে, যে ডায়াসের উপর ডেস্ক বসানো দুদ্দাড় সিঁড়ি ভেঙে তার উপর উঠল মিস। রাগের সাথে কাগজপত্র একপাশে সরিয়ে বসল ডেস্কের কোণায়।

ইবার একবার ভাবলেন গার্ডদের ডাকবেন অথবা ডেস্কের বিল্ট ইন ব্লাস্টার ব্যবহার করবেন। কিন্তু এবলিং মিস-এর মুখ এমনভাবে তার দিকে নেমে এসেছে যে তিনি সংকুচিত হয়ে গেলেন।

“ড. মিস,” এখনো তিনি দুর্বলভাবে মানসম্মান বজায় রাখার চেষ্টা করছেন, “তুমি অবশ্যই-”।

“চোপ,” কড়া ধমক লাগাল মিস, “মন দিয়ে শোন। যদি এগুলো,” ধাতু দিয়ে বাঁধানো মোটা ভলিউমের উপর ঘুসি মারল সে, “আমার পাঠানো গাদা গাদা রিপোর্ট ছুঁড়ে ফেলে দাও। আমি যে রিপোের্ট পাঠাই সেটা বিশ জন অফিসার চোখ বুলিয়ে তারপর তোমাকে দেয়, তখন আবার কমবেশি বিশ জন অফিসার তোমার সুবিধার জন্য সারসংক্ষেপ তৈরি করে দেয়। ভালো ব্যবস্থা, যদি তোমার গোপন করার কিছু না থাকে। কিন্তু আমি যা বলব সেটা কনফিডেনশিয়াল। এত বেশি কনফিডেনশিয়াল যে, যে ছেলেগুলো আমার জন্য কাজ করেছে তারাও জানে না। যদিও পুরো কাজটা ওরাই করেছে, কিন্তু প্রত্যেকে আলাদা আলাদা অংশ-আমি সেগুলো জোড়া দিয়েছি। টাইম ভল্ট কী তুমি জানো?”

মাথা নাড়লেন ইণ্ডবার। মিস সেদিকে লক্ষ করল না। পরিস্থিতি সে উপভোগ করছে, “ঠিক আছে, বলছি আমি, কারণ এই (ছাপার অযোগ্য) পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি অনেক দিন থেকে। আমি বুঝতে পারছি তুমি কী ভাবছ, ব্যাটা ভণ্ড। ছোট্ট একটা নবের কাছে হাত রেখেছ, সেটা চাপলেই পাঁচ শ বা ছয় শ সশস্ত্র লোক চলে আসবে আমাকে মেরে ফেলার জন্য, কিন্তু ভয় পাচ্ছ আমি কি জানি-তুমি ভয় পাচ্ছ সেলডন ক্রাইসিসকে। তা ছাড়া যদি তুমি ডেস্কের কোনো কিছু স্পর্শ করো, তা হলে কেউ আসার আগেই তোমার ওই (ছাপার অযোগ্য) মাথাটা আছাড় দিয়ে গুঁড়ো করে ফেলব।”

“এটা বিশ্বাসঘাতকতা,” হড়বড় করে বলল ইবার।

“অবশ্যই,” আত্মপ্রসাদের সুরে বলল মিস, “ততা কী করবে? টাইম ভল্টের ব্যাপারে জ্ঞান দিচ্ছি শোন। আমাদের সাহায্য করার জন্য হ্যারি সেলডন শুরু থেকেই এখানে টাইম ভল্ট বসান। প্রতিটা ক্রাইসিসে বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং সাহায্য করার জন্য হ্যারি সেলডন নিজের প্রতিচ্ছবি তৈরি করে রাখেন। চারটা ক্রাইসিস-এবং চারবার তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। প্রথমবার তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন প্রথম ক্রাইসিসের শীর্ষ অবস্থায়। দ্বিতীয়বার তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন দ্বিতীয় ক্রাইসিসের সফল পরিসমাপ্তির পর। দুবারই তার কথা শোনার জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তৃতীয় আর চতুর্থ ক্রাইসিসের সময়, তার কথা আর কেউ মনে রাখেনি-বোধহয় মনে রাখার প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে-তোমার কাছে যে রিপোর্ট আছে তাতে এই কথাগুলো নেই-দেখা যায় তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন, এবং নির্দিষ্ট সময়ে। মাথায় ঢুকেছে?”

অবশ্য জবাবের প্রতীক্ষা করল না। শেষ পর্যন্ত মুখ থেকে ছিন্ন ভিন্ন সিগার ফেলে দিয়ে নতুন আরেকটা ধরাল। ধোয়া ছাড়ল ভুর ভুর করে।

“অফিসিয়ালি, আমি সায়েন্স অফ সাইকোহিস্টোরি পূনর্গঠনের চেষ্টা করছি। একজন মানুষের কাজ না এটা, এবং এক শতাব্দীতেও শেষ হবে না। তবে সাধারণ উপাদানগুলোর ব্যাপারে আমি কিছুটা অগ্রসর হতে পেরেছি এবং সেটাকে টাইম ভন্টে অনধিকার প্রবেশের কৈফিয়ত হিসেবে ব্যবহার করেছি। আমি মোটামুটি নিশ্চিতভাবে হ্যারি সেলডনের পরবর্তী আবির্ভাবের নিখুঁত দিন তারিখ বের করতে পেরেছি। অন্য কথায়, সেলডন ক্রাইসিস ঠিক কোনদিন চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছাবে আমি তোমাকে বলতে পারব।”

“কতদূরে আছে?” উদ্বিগ্ন সুরে জিজ্ঞেস করলেন ইণ্ডবার।

আর মিস হাসিমুখে বোমা ফাটালো, “চার মাস। চারটা (ছাপার অযোগ্য) মাস, তার থেকে দুইদিন বাদ।”

“চার মাস, কর্কশ স্বরে বললেন ইণ্ডবার। “অসম্ভব।”

“কেন, অসম্ভব কেন?”

“চার মাস? তার অর্থ তুমি বুঝতে পারছ। একটা ক্রাইসিস চার মাসের মাথায় চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছবে, অর্থাৎ কয়েক বছর থেকেই সেটা তৈরি হচ্ছিল।”

“হবে নাই বা কেন? প্রকৃতির এমন কোনো নিয়ম আছে যে শুধু দিনের আলোতে বেড়ে উঠতে হবে?”

“কিন্তু আমাদের মাথার উপর আসন্ন কোনো বিপদ ঝুলে নেই।” উদ্বেগে ইণ্ডবার তার হাত মোচড় দিয়ে প্রায় ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করছে। হঠাৎ গলার মাংসপেশি ফুলিয়ে চিৎকার করে উঠল, “ডেস্কের উপর থেকে সর তো, একটু গোছই। নইলে চিন্তা করব কীভাবে?

চমকে উঠল মিস, তারপর ভারী শরীর নিয়ে সরে গেল আরও কোণার দিকে।

ডেস্কের প্রতিটা জিনিস আবার যথাযথভাবে গুছিয়ে রাখলেন ইণ্ডবার। কথা বলছেন দ্রুত, “এভাবে এখানে আসার কোনো অধিকার তোমার নেই। যদি তোমার থিওরি বলা শেষ হয়–”

“এটা কোনো থিওরি না।”

“আমি বলছি এটা একটা থিওরি। পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণসহ যথাযথ নিয়মে উপস্থাপন করলে সেটা ব্যুরো অফ হিস্টোরিক্যাল সায়েন্স এর কাছে যাবে। সেখানেই এর উপযুক্ত ব্যবস্থা হবে। আমার কাছে একটা সারসংক্ষেপ আসার পর আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারব। খামোখাই আমাকে বিরক্ত করলে। আহ্, এই যে পাওয়া গেছে।”

একটা রুপালি রঙের স্বচ্ছ কাগজ তুলে তিনি পাশের সাইকোলজিস্ট এর দিকে নাড়লেন।

“আমাদের বৈদেশিক নীতির অগ্রগতি সম্বন্ধে আমি একটা সামারি তৈরি করেছি-খুব একটা ভালো হয়নি। শোন-মোরেস এর সাথে আমাদের একটা বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে, লিনেইজ এর সাথে একই বিষয়ে আলোচনা চলছে, কোনো উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য বণ্ড এ একদল প্রতিনিধি পাঠিয়েছি, কালগান থেকে কিছু অভিযোগ পেয়েছি এবং কথা দিয়েছি ব্যাপারটা আমরা দেখব, অ্যাসপেরেটার বাণিজ্য নীতির ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছি এবং তারা কথা দিয়েছে। বিষয়টা বিবেচনা করে দেখবে-ইত্যাদি, ইত্যাদি। মেয়রের দৃষ্টি কোড করা লিস্টের নিচের দিকে নামল, তারপর তিনি কাগজটা সঠিক ফোল্ডারের সঠিক পিজিয়ন হোলে সঠিকভাবে রাখলেন।

“আমি তোমাকে বলেছি, মিস, নিয়মের বাইরে কিছুই হচ্ছে না। সবকিছুই চলছে সুষ্ঠু এবং নিখুঁতভাবে

বিশাল কামরার শেষ প্রান্তের দরজা খুলে গেল, আর অনেকটা বাস্তব জীবনের ছোঁয়া বর্জিত নাটকে যেমন দৈব ঘটনা ঘটতে দেখা যায় সেরকমভাবেই আড়ম্বরহীন কেউ একজন প্রবেশ করল ভেতরে।

ইণ্ডবার অর্ধেক উঠে দাঁড়িয়েছেন। যখন একসাথে অনেকগুলো অযাচিত ঘটনা ঘটে তখন যে-রকম একটা বোধ তৈরি হয় সেরকমই একটা অবাস্তব অনিশ্চয়তা বোধ তার ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে। মিস এর অযাচিত অনুপ্রবেশ এবং বুনো তর্জনগর্জনের পর ঠিক একই রকম বিভ্রান্তি তৈরি করে তার সেক্রেটারি ভিতরে প্রবেশ করল, যে অন্তত নিয়মগুলো জানে।

হাঁটু গেড়ে বসল সেক্রেটারি।

“কী ব্যাপার!” ধারালো গলায় জিজ্ঞেস করলেন ইণ্ডবার।

মেঝের দিকে তাকিয়ে সেক্রেটারি বলল, “এক্সিলেন্স, ক্যাপ্টেন হ্যান প্রিচার কালগান থেকে ফেরার পর গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি আপনার পূর্ববর্তী আদেশ এক্স-২০-৫১৩ অমান্য করে সেখানে গিয়েছিলেন। তার সাথে যারা ছিল তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। পরিপূর্ণ রিপোর্ট আপনার কাছে পাঠানো হবে।”

ভেতরের অস্থিরতা দূর করে ইণ্ডবার বললেন “রিপোর্ট পাঠানো হবে তো।”

“এক্সিলেন্স, ক্যাপ্টেন হ্যান প্রিচার অস্পষ্টভাবে কালগানের নতুন ওয়ারলর্ডের ভয়ংকর পরিকল্পনা সম্বন্ধে কিছু তথ্য দিয়েছেন। আপনার নির্দেশ এক্স-২০-৬৫১ অনুযায়ী তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো শুনানির সুযোগ দেওয়া হয়নি, তবে তার মন্তব্যগুলোর সম্পূর্ণ রিপোর্ট তৈরি হয়েছে।”

চিৎকার করে উঠলেন ইণ্ডবার, “সম্পূর্ণ রিপোর্ট তৈরি হয়েছে তো!”

“এক্সিলেন্স, পনের মিনিট আগে সিলিনিয়ান ফ্রন্টিয়ার থেকে রিপোর্ট এসেছে। সেখানে কিছু কালগানিয়ান মহাকাশযানকে অবৈধভাবে ফাউণ্ডেশন টেরিটোরিতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। মহাকাশযানগুলো সশস্ত্র। ছোটখাটো লড়াই হয়েছে।”

সেক্রেটারি দ্বিগুণ ঝুঁকে প্রায় মাটির সাথে মিশে গেল। ইণ্ডবার দাঁড়িয়ে রইলেন, একটা ঝাঁকুনি দিয়ে সোজা হল মিস, সেক্রেটারির কাছে এগিয়ে গিয়ে দুপায়ে দাঁড় করালো তাকে।

“শোন, তুমি গিয়ে বরং ক্যাপ্টেন প্রিচারকে মুক্ত করে এখানে পাঠিয়ে দাও। যাও, বেরোও।”

চলে গেল সেক্রেটারি, মিস ঘুরল মেয়রের দিকে। “তোমার এখন কাজ শুরু করা উচিত না, ইণ্ডবার? চার মাস, তুমি জানো”

ইণ্ডবার দাঁড়িয়েই থাকলেন, নিপ্রাণ দৃষ্টি। শুধুমাত্র একটা আঙুল জীবিত মনে। হচ্ছে- ডেস্কের মসৃণ তলে যা ক্রমাগত দাগ কেটে চলেছে।