নববর্ষের অঙ্গীকার
নিগ্রো তরুণীর ঠোঁটের মতো টসটসে রাত।
তথাপি জ্যোৎস্নার অকৃপণ দানের
আধো আলো আধো আঁধারী সমগ্র ধরণী।
নববর্ষের সমগ্র বাংলা জুড়ে নানান আয়োজন।
পান্তাভাত আর রুপালি ইলিশের
সুসজ্জিত বাহার,
মৌ মৌ গন্ধের মুখরিত।
খেয়ে-দেয়ে হৃদয় মন জুড়াবে।
সুসজ্জিত হবে রমনা বটমূল,
জঙ্গিদের পুতে রাখার বোমা বিস্ফোরণ হবে না,
বাউল ও মুক্ত চিন্তাবিদের হাত-পা-দেহ গুড়িয়ে যাবে না,
নিরীহ সাধারণ মানুষের অকাল মৃত্যু হবে না,
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গনের
ঝাঁকড়া চুলের নগর বাউল আর গ্রামীণ বাউলরা সমাবেত হবে।
গ্রামীণ বাউলদের এক তারা সুর
আর নগর বাউলদের ব্যান্ড সংগীতে প্রকম্পিত হবে সমগ্র দেশ জুড়ে।
হাই ভলিউমে বেজে উঠবে,
“লেগেছে বাঙালি ঘরে ঘরে
এ কি মাতন দোলা……..।”
কক্সবাজার রাখাইনদের জলকেলি উৎসবে তরুণ-তরুণীদের উল্লাসিত কণ্ঠে মুখরিত হবে,
”সাংগ্রেন হ্রি ইরে ইরে,মা মা সে হ্লারে-হ্লারে..।
(অনুবাদঃ নববর্ষের জল হিম শীতল শীতল,জলকেলি মণ্ডপের তরুণী সুন্দর - সুন্দর….)।
রাঙামাটির চাকমা তরুণ-তরুণীরা আবেগি সুরে মুখরিত হবে,“বিঝু তুই এ্চ্ছ্যচ, আরো নোএ্অ রঙে রাঙিনে….।”
(অনুবাদঃনববর্ষ তুমি এসেছো,নবতর রঙে রাঙিয়ে…)।
বান্দরবানে মারমা তরুণ-তরুণী দলে দলে গাইবে,
“সাংগ্রেন মা,ঞিং ঞিং-ঞা ঞা,হ্রি কেজে কে পা মে..।”
(অনুবাদঃ নববর্ষের মিলেমিশে খেলি,জলকেলি…)।
কিন্তু আমার মন আনন্দে জেগে ওঠে না।
ঐ বাদ্যযন্ত্রে ঘুমও আসেনা।
আঁখি যুগলে ভেসে উঠে, অন্নহীন, বস্ত্রহীন মানুষের ছেড়া কাপড়ে নিদারুন কষ্টের বাহার।
আমি এখনো শুনি ধর্ষিতা তনুদের আহাজারি,
আদিবাসি ফুলকুমারীদের গোঙানি।
এখনো কর্ণফুলি চাকমাদের ঘর আগুনে পোড়ে,
খোলা আকাশে নিচে একাকার;
তাই বালিশ চেপে নিভৃতে ঝরে পড়ে অশ্রুবারি।
এখনো আমি দেখি-
কেউ ভাঙ্গে মন্দির
কেউ ভাঙ্গে মসজিদ,
কেউ কোপ মারে হুমায়ুন আজাদকে
অন্য কেউ জাফর ইকবালকে।
এ নববর্ষ থেকে সকল
ভাঙ্গাভাঙ্গি, কোপাকোপির অবসান হোক।
আগুনে পোড়া থেকে মুক্তি পাক।
এ হোক মোদের অঙ্গীকার।
বাঙালীর সংস্কৃতির সাথে
মিলেমিশে আছে যুগ যুগ ধরে
আদিবাসী চাকমাদের বিঝু,
রাখাইন, মার্মাদের সাংগ্রেন,
ত্রিপুরাদের বৈসু।
বাংলা নববর্ষের আদিবাসিরাও
নানান রঙে, নানান ঢঙে,
ঐতিহ্যের বৈচিত্র্যে পোষাকে সুসজ্জিত।
কোমলমতি শিশুরা এপাড়া-ওপাড়া
পাঁচন তরকারি ও নানান পিঠা খাওয়ার ধুম,
এ যেন প্রাণে প্রাণে মাতনদোলা, মাতোয়ারা-
আজকের নববর্ষ।
আজ সুসজ্জিত নব দিগন্ত।
গগণে নব সূর্য উড্ডীয়মান।
নব রঙে রাঙিয়েছে সমগ্র ধরণী।
নানান ফুলে সৌরভে সুরভিত ও উচ্ছ্বাসিত
বাংলার মানুষের মনে - প্রাণে।
সংস্কৃতি সংমিশ্রণে মিলনমেলা
যেন লাল-সবুজ- হলুদের সমাহারে
একটি নতুন আকাশ, নতুন প্রভাত।
স্বপ্ন দেখি, আশা বাঁধি, বিদায়ী বর্ষের
দুঃখ কষ্ট ভুলে যাও,
ধুয়ে মুছে দাও সকল গ্লানি।
নববর্ষের সংস্পর্শে নবরুপে, নব আঙ্গিকে,
জেগে উঠুক প্রাণের প্রতি প্রাণের মায়া মমতা,
বিশ্বাসী রঙে রঙিন করো সকল প্রাণ।
সকল বর্ণবাদ,সম্প্রদায়িকবাদ,মৌলবাদ,
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নিপাত যাক;
মানবতা মুক্তি পাক।
এ হোক নববর্ষের অঙ্গীকার।