ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার by আইজাক আসিমভ, chapter name প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল - ৮. ট্রানটরের পথে

প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল - ৮. ট্রানটরের পথে

সামান্য একটু নড়াচড়া দেখার আশায় ডেভর্স মৃত ভূ-গোলকের প্রতিচ্ছবির উপর ঝুঁকে দাঁড়াল। ডাইরেকশনাল কন্ট্রোলের দৃঢ় সিগন্যালের সাহায্যে সে আশেপাশের স্পেস ধীরে ধীরে, সুশৃঙ্খলভাবে প্রায় চালুনি দিয়ে ছাকার মতো পর্যবেক্ষণ করছে।

কোণায় একটা নিচু কটে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন বার। “ওদের কোনো চিহ্ন নেই?” জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

“এম্পায়ার বয়েজ? না।” অধৈর্য সুরে বলল ডেভর্স। “অনেক আগেই ওদেরকে হারিয়ে ফেলেছি। স্পেস! প্রায় অন্ধের মতো হাইপারস্পেসে জাম্প করেছি, ভাগ্য ভালো যে-কোনো সূর্যের পেটে গিয়ে ল্যান্ড করিনি। দ্রুতগতির যান থাকলেও ওরা আমাদের আর ধরতে পারবে না।”

হেলান দিয়ে বসে একটু ঝাঁকুনি দিয়ে পোশাকের কলার ঢিলা করল সে। “এম্পায়ার বয়েজরা এখানে কিরকম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে আমি জানি না। মনে হয় ফাঁক একটা পাওয়া যাবে।”

“ধরে নিচ্ছি তুমি ফাউণ্ডেশনে পৌঁছার চেষ্টা করছ।”

“আমি এসোসিয়েশন এর সাথে যোগাযোগ করছি-বা বলা উচিত করার চেষ্টা করছি।”

“এসোসিয়েশন? ওরা আবার কারা?”

“এসোসিয়েশন অব ইণ্ডিপেণ্ডেন্ট ট্রেডার্স। কখনো শোনেননি, তাই না? আপনি একা না। আমরা আসলে এখনো নিজেদের সেভাবে প্রচার করিনি।”

খানিক নীরবতা, শুধু রিসিপশন ইণ্ডিকেটর এর মৃদু গুঞ্জন। তারপর বার বললেন, “তুমি রেঞ্জের ভেতরে আছ?”

“জানি না। কোথায় যাচ্ছি সেই সম্বন্ধে কোনো ধারণা নেই। সেজন্যই তো ডাইরেকশনাল কন্ট্রোল ব্যবহার করছি। এভাবে পথ খুঁজে বের করতে এক বছরও লাগতে পারে।”

“তাই?”

বার এর নির্দেশ অনুসরণ করে তাকিয়ে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ইয়ারফোন ঠিক করে নিল ডেভর্স। স্ক্রিনের নির্দিষ্ট বৃত্তের ভেতর জ্বল জ্বল করছে একটা সাদা বিন্দু।

প্রায় আধঘণ্টা ধরে যত্নের সাথে নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালনা করে দুটো বিন্দুকে যুক্ত করার চেষ্টা করল ডেভর্স, মাঝখানের দূরত্ব এত বেশি যে এক বিন্দু থেকে আরেক বিন্দুতে আলো পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র পাঁচ শ বছর।

তারপর নিরাশভাবে হেলান দিয়ে বসল, ইয়ারফোন সরিয়ে ফেলল কান থেকে।

“খেয়ে নেওয়া যাক, ডক। শাওয়ারের ব্যবস্থা খুব একটা ভালো না। চাইলে গোসল করতে পারেন, তবে গরম পানি ব্যবহার করার সময় সাবধান।”

পথ দেখিয়ে দেয়ালের কাছে দাঁড় করানো বিভিন্ন সামগ্রীতে বোঝাই একটা ক্যাবিনেটের সামনে নিয়ে এলো। “আশা করি আপনি নিরামিষভোজী নন?”

“আমি সর্বভোজী।” বললেন বার। “কিন্তু এসোসিয়েশনের ব্যাপারটা কী? তুমি ওদের হারিয়ে ফেলেছ?”

“সেরকমই মনে হচ্ছে। রেঞ্জ অনেক বেশি যদিও সেটা কোনো ব্যাপার না। এগুলো আমি ভেবে রেখেছি।”

সোজা হয়ে টেবিলের উপর দুটো ধাতব কন্টেইনার রাখল সে। “পাঁচ মিনিট সময় দিন, ডক। তারপর এখানে চাপ দিয়ে খুলবেন। এটাই তখন আপনার খাবার প্লেট, এবং চামচের কাজ করবে। ন্যাপকিন দিতে পারছি না। আপনি বোধহয় এসোসিয়েশনের কাছ থেকে কি সংবাদ পেয়েছি সেটা জানতে চান।”

“যদি গোপন কিছু না হয়।” মাথা নাড়ল ডেভর্স। “আপনার কাছে না। রিয়োজ সত্যি কথাই বলেছে।”

“কর প্রদানের প্রস্তাব সম্বন্ধে?”

“হ্যাঁ। ওরা প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। লরিস এর বাইরের সূর্যগুলোর কাছে লড়াই চলছে প্রচণ্ড।”

“লরিস ফাউণ্ডেশন-এর অনেক কাছে?”

“হ্যাঁ। ও, আপনি তো জানেন না। এটা হচ্ছে মূল চার রাজ্যের একটা। আপনি এটাকে অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ব্যুহ্যের অংশ ধরতে পারেন। এটা অবশ্য সবচেয়ে খারাপ খবর না। আগেও ওরা বড় বড় যুদ্ধযানের মোকাবেলা করে টিকে থেকেছে। তার মানে রিয়োজ সব কথা বলেনি। সে আরো যুদ্ধযান পেয়েছে, ব্রুডরিগ কাজ করছে তার পক্ষে, আর আমি সব গোলমাল করে ফেলেছি।”

ফুড কন্টেইনার খোলার সময় তার দৃষ্টি কেমন ফাঁকা মনে হল। ধোঁয়া উঠা স্টু এর সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ল সারা ঘরে। দেরি না করে খাওয়া শুরু করলেন বার।

“যতদূর বুঝতে পারছি,” বার বললেন, “আমাদের কিছু করার নেই; ইম্পেরিয়াল প্রতিরক্ষা ভেদ করে ফাউণ্ডেশনে ফিরতে পারব না; এখানে অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই; সেটাই হবে বিচক্ষণতা। আর রিয়োজ যেহেতু এত ভেতরে ঢুকতে পেরেছে, আমার মনে হয় না বেশি অপেক্ষা করতে হবে।”

হাতের কাঁটাচামচ নামিয়ে রাখল ডেভর্স। “অপেক্ষা, তাই না?” ফোঁস ফোঁস করে বলল সে। “আপনার জন্য ঠিক আছে। আপনার ভো কোনো ঝুঁকি নেই।”

“নেই?” বিষণ্ণ হেসে জিজ্ঞেস করলেন বার।

“না। আপনাকে সত্যি কথা বলি।” ডেভর্সের অসহিষ্ণুতা চাপা থাকলনা। “পুরো ঘটনাটাকে মাইক্রোস্কোপিক স্লাইডে দেখা মজার কিছু ভাবতে ভাবতে আমি ক্লান্ত। ওখানে কোথাও আমার বন্ধুরা আছে, মারা যাচ্ছে, এবং একটা পুরো বিশ্ব, আমার মাতৃভূমি, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আপনি তো বাইরের লোক, বুঝবেন না।”

“চোখের সামনে বন্ধুদের মরতে দেখেছি আমি।” বৃদ্ধের হাত তার কোলের উপর, চোখ বন্ধ। “তুমি বিয়ে করেছ?”

“বণিকেরা কখনো বিয়ে করে না।” বলল ডেভর্স।

“আমার দুটো ছেলে আর একটা ভাতিজা আছে। ওদেরকে সতর্ক করা হলেও কোনো একটা কারণে কিছু করতে পারছে না। আমাদের পালানো মানে ওদের মৃত্যু। আমার মেয়ে এবং দুই নাতনী আশা করি অনেক আগেই নিরাপদে গ্রহ থেকে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু তারপরেও ওদেরকে বাদ দিয়েই আমি অনেক বড় ঝুঁকি নিয়েছি এবং হারিয়েছি তোমার চেয়ে অনেক বেশি।”

রুক্ষ স্বরে ডেভর্স বলল, “আমি জানি। কিন্তু সেটা আপনার ইচ্ছের ব্যাপার। রিয়োজের সাথে হয়তো আপনি খেলা চালিয়ে যেতে পারতেন। আমি তো বলিনি-”

মাথা নাড়লেন বার। “আমার ইচ্ছের ব্যাপার না, ডেভর্স। একটু ভোলা মনে চিন্তা কর; তোমার জন্য আমি নিজের সন্তানের জীবনের ঝুঁকি নিইনি; যতক্ষণ সাহসে কুলিয়েছে আমি রিয়োজের সাথে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু সে সাইকিক প্রোব নিয়ে এসেছে।”

সিউয়েনিয়ান প্যাট্রিশিয়ান চোখ খুললেন, দৃষ্টিতে সীমাহীন যন্ত্রণার ছাপ। “এক বছর আগে রিয়োজ আমার কাছে এসেছিল। জাদুকরদের ঘিরে যে কাল্ট’ গড়ে উঠেছে সেই বিষয়ে জানতে, কিন্তু আসল সত্যটা সে ধরতে পারেনি। এটা শুধুই একটা কাল্ট নয়। আজকে তোমার গ্রহ যে অত্যাচারী পেশিশক্তির কবলে পড়েছে, প্রায় চল্লিশ বছর আগে আমার গ্রহ একই শক্তির কবলে পড়েছিল। পাঁচটা বিদ্রোহ দমন করা হয় শক্ত হাতে। তখনই আমি হ্যারি সেলডনের প্রাচীন রেকর্ডগুলোর ব্যাপারে জানতে পারি-এখন সেই কাল্ট’ অপেক্ষা করছে।

“অপেক্ষা করছিল জাদুকরদের আগমনের জন্য। আমার ছেলে তাদের নেতা। এটাই আমার মাথায় গোপন করা আছে। দেখতে হবে প্রোব দিয়ে যেন সেটা বের করা না যায়। সে কারণেই আমার পরিবার জিম্মি হিসেবে মারা যাবে; নইলে তারা মরবে বিদ্রোহী হিসেবে সেই সাথে অর্ধেক স্যিউয়েনিয়ান। এছাড়া আমার কোনো উপায় নেই! আর আমি বাইরের কেউ না।”

চোখ নামিয়ে নিল ডেভর্স, বার বলে চলেছেন, “ফাউণ্ডেশন-এর বিজয়ের উপর স্যিউয়েনার আশা ভরসা নির্ভর করছে। ফাউণ্ডেশন-এর বিজয়ের জন্য আমার সন্তান প্রাণ দিচ্ছে। হ্যারি সেলডন ফাউণ্ডেশন-এর উদ্ধারের জন্য যেভাবে পথ দেখিয়েছেন, সিউয়েনার জন্য তা করেননি। আর আমার জনগণের জন্য কোনো নিশ্চয়তা নেই, আছে শুধু আশা।”

“কিন্তু আপনি এখনো অপেক্ষা করেই সন্তুষ্ট। এমনকি লরিস এ ইম্পেরিয়াল নেভি পৌঁছে গেলেও।”

“আমি গভীর বিশ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করব,” সাদামাটাভাবে বললেন বার, “ যদি ওরা টার্মিনাস গ্রহে পৌঁছে যায়।”

অসহায় ভঙ্গিতে ভুরু কোঁচকালো বণিক। “জানি না, এভাবে জাদুর মতো কাজ হয় না। সাইকোহিস্টোরি হোক বা আর যাই হোক, প্রতিপক্ষ ভীষণ শক্তিশালী, আর আমরা দুর্বল। এক্ষেত্রে হ্যারি সেলডন কি করতে পারেন?”

“কিছুই করতে হবে না। যা করার আগেই করা হয়েছে। এখন শুধু ঘটনা এগিয়ে চলছে। বুঝতে পারছ না সময়ের চাকা ঘুরে চলেছে আর চারপাশে বিপদের ঘণ্টাধ্বনির অর্থ এই না যে আমাদের নিশ্চয়তা কমে গেছে।”

“হতে পারে। তবে আপনার উচিত ছিল রিয়োজের খুলি চুরমার করে দেওয়া। পুরো আর্মির চেয়ে সে একাই অনেক বেশি ভয়ংকর।”

“খুলি চুরমার করে দেব? যেখানে ব্রুডরিগ তার সেকেণ্ড ইন কমাণ্ড?” বার এর চেহারায় তীব্র ঘৃণা। “পুরো স্যিউয়েনা নির্ভর করছে আমার উপর। ব্রুডরিগ অনেক আগেই নিজেকে প্রমাণ করেছে। একটা গ্রহ ছিল যেখানে পাঁচ বছর আগে প্রতি দশজন পুরুষের মধ্যে একজন মারা যেত-তার কারণ ছিল শুধুমাত্র বকেয়া কর প্রদানে ব্যর্থতা। কর সংগ্রহের দায়িত্বে ছিল ব্রুডরিগ। তার তুলনায় রিয়োজ দুগ্ধ পোষ্য শিশু।”

“কিন্তু ছয় মাস, শক্ত ঘাঁটিতে ছয় মাস কাটল, অথচ আমাদের হাতে কিছুই নেই।” হাতদুটো পরস্পরের সাথে এত জোরে চেপে ধরল ডেভর্স যে আঙুলগুলো মটমট করে উঠল। “কিছুই নেই আমাদের হাতে।”

“দাঁড়াও, মনে পড়েছে-” বার তার পাউচের ভেতর হাত ঢোকালেন। “এটা হয়তো তুমি দেখতে চাইবে।” গোলাকার ধাতব বস্তুটা টেবিলের দিকে ছুঁড়ে দিলেন তিনি।

লুফে নিল ডেভর্স। “কি এটা?”

“ম্যাসেজ ক্যাপসুল। আমি আঘাত করার আগে রিয়োজের কাছে যেটা এসেছিল। এটার কোনো গুরুত্ব আছে?”

“নির্ভর করছে এর ভিতরে কি আছে তার উপর,” বসল ডেভর্স, ধাতব বস্তুটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে।

.

ঠাণ্ডা পানিতে সংক্ষিপ্ত গোসল সেড়ে কৃতজ্ঞচিত্তে এয়ার ড্রায়ারের উষ্ণ প্রবাহের সামনে দাঁড়িয়ে বার দেখলেন ডেভর্স তার ওয়র্কবেঞ্চে কাজে নিমগ্ন।

শরীরে কয়েকটা আরামদায়ক চাপড় মেরে এয়ার ড্রায়ারের মৃদু গুঞ্জনকে ছাপিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “কী করছ?”

চোখ তুলল ডেভর্স। দাড়িতে ঘামের ফোঁটা চিক চিক করছে। “ক্যাপসুলটা খুলছি।”

“রিয়োজের পারসোন্যাল ক্যারেকটারিস্টিকস ছাড়া তুমি এটা খুলতে পারবে?” স্যিউয়েনিয়ানের কন্ঠে বিস্ময়।

“যদি না পারি, তা হলে এসোসিয়েশন থেকে পদত্যাগ করব আর বাকি জীবনে কোনোদিন মহাকাশযান চালাব না। ভেতরের একটা ত্রিমুখী বৈদ্যুতিক বিশ্লেষণ শেষ করেছি, বিশেষ করে ক্যাপসুল খোলার জন্য আমার কাছে যে ছোট যন্ত্র আছে তা এম্পায়ারের কেউ বাপের জন্মেও দেখেনি। আগে আমি চুরি করতাম। আসলে একজন বণিকের জানতে হয় সবকিছু।”

সামনে ঝুঁকে অতি সাবধানে একটা সমতল যন্ত্র ক্যাপসুলের ভেতরে ঢোকালো সে, স্পর্শের সাথে সাথে লাল রঙের অগ্নি স্ফুলিঙ্গ বের হতে লাগল।

“এই ক্যাপসুল খোলার কাজ খুব সহজ। ইম্পেরিয়ালের লোকরা ছোটখাটো জিনিস ভালো তৈরি করতে পারে না। ফাউণ্ডেশন-এর ক্যাপসুল দেখেছেন কখনো? আকারে এটার অর্ধেক, বিদ্যুৎ তরঙ্গ ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না।”

পুরো শরীর একটু শক্ত হয়ে গেল তার, টিউনিকের নিচে কাঁধের পেশি দৃশ্যতই কাঁপতে শুরু করেছে, অতি ক্ষুদ্র প্রোব ক্যাপসুলের ভেতরে ঢুকছে ধীরে ধীরে

ক্যাপসুল খুলে গেল নিঃশব্দে, কিন্তু সশব্দে নিশ্বাস ফেলল ডেভর্স। হাতের গোলাকার বস্তুর ভাঁজ খুলে গেল পাঁচম্যান্ট কাগজের মতো, তাতে জ্বল জ্বল করছে প্রিন্ট করা ম্যাসেজ।

“ব্রুডরিগের কাছ থেকে এসেছে,” বলল সে, তারপর একটু উম্মার সাথে বলল, “ম্যাসেজ এর মাধ্যম স্থায়ী। ফাউণ্ডেশন ক্যাপসুলে এক মিনিটের মধ্যেই ম্যাসেজটা অক্সিডাইজড হয়ে যেত।” কিন্তু ডুসেম বার হাত নেড়ে থামিয়ে দিলেন তাকে। দ্রুত পড়ে ফেললেন ম্যাসেজটা।

হতে : অ্যামেল ব্রুডরিগ, হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির বিশেষ দূত, কাউন্সিলের প্রিভি সেক্রেটারি, এবং পীআর অভ দ্য রিএলম।
প্রতি : বেল রিয়োজ, মিলিটারি গভর্নর, সিউয়েনা, জেনারেল অভ দ্য ইম্পেরিয়াল ফোর্স, এবং পীআর অভ দ্য রিএলম। আমার অভিনন্দন।
প্ল্যানেট # ১১২০ আর প্রতিরোধ করছে না। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আক্রমণের কাজ এগিয়ে চলেছে। শত্রুপক্ষ দৃশ্যতই দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং শিগগিরই অর্জিত হবে চূড়ান্ত লক্ষ্য।

প্রায় মাইক্রোস্কোপিক প্রিন্ট থেকে চোখ তুলে তিক্ত সুরে চেঁচিয়ে উঠলেন বার, “গর্দভ! মাথামোটা ফুলবাবু! এটা একটা ম্যাসেজ?”

“হাহ?” বলল ডেভর্স, কিছুটা হতাশ।

“এখানে কিছুই নেই,” গুঙিয়ে উঠলেন বার। “আমাদের থুতু চাটা আমাত্য এখন জেনারেলের পক্ষে। জেনারেল দূরে থাকায় সেই ফিল্ড কমাণ্ডার এবং জাঁকালো একটা মিলিটারি রিপোর্ট পাঠিয়ে নিজের তুচ্ছ মনোবাসনা পূর্ণ করেছে, যে বিষয়ে সে কিছুই জানে না। এই-এবং-এই গ্রহ আর প্রতিরোধ করছে না। হামলা চলছে।’ ‘শত্রুপক্ষ দুর্বল হয়ে পড়েছে। ব্যাটা ফাঁকা মাথার ময়ূর।”

“দাঁড়ান এক মিনিট–”

“ফেলে দাও এটা।” চরম বিতৃষ্ণা নিয়ে ঘুরলেন বৃদ্ধ। “গ্যালাক্সি জানে আমি এখানে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাবো সেই আশা করিনি। কিন্তু যুদ্ধের সময় একটা সাধারণ রুটিন অর্ডার ও যদি সময়মতো না পৌঁছায় অনেক সমস্যা হয়। সেই কারণেই আসার সময় জিনিসটা তুলে নিয়েছিলাম। কিন্তু এটা! ফেলে আসলেই ভালো হত। যে সময়টা রিয়োজ আমাদের ধ্বংসের পরিকল্পনা করত তার কিছুটা : হলেও নষ্ট হত।”

উঠে দাঁড়ালো ডেভর্স। “থামবেন আপনি। সেলডনের কসম-”

ম্যাসেজটা বৃদ্ধের নাকের সামনে ধরল সে। “আবার পরুন এটা। চুড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন’ বলতে সে কি বুঝিয়েছে?”

“ফাউণ্ডেশন দখল।”

“হ্যাঁ। এবং হয়তো সে বুঝিয়েছে এম্পায়ার দখল। আপনি জানেন সে বিশ্বাস করে এটাই চূড়ান্ত লক্ষ্য।”

“করলেই বা কী?”।

“যদি বিশ্বাস করে!” ডেভর্সের ঠোঁটের একপেশে হাসি দাড়ির আড়ালে হারিয়ে গেল। “বেশ, শুধু দেখে যান আমি কী করি।”

আঙুলের একটা টোকায় মেসেজ শিট পুনরায় ফিরে গেল স্লটে। মৃদু টুং শব্দ করে আবার পরিণত হল পূর্বের মতো মসৃণ নিখুঁত গোলাকার অবয়বে। ভেতরের কোথাও ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতিগুলো নড়াচড়ার ফলে তরল পদার্থ গড়িয়ে পড়ার মতো শব্দ হচ্ছে।

“এখন রিয়োজের পারসোন্যাল ক্যারেকটারিসটিক্স ছাড়া এই ক্যাপসুল খোলার কোনো উপায় নেই, আছে?”

“টু দ্য এম্পায়ার, নেই।” বললেন বার। “তা হলে এটার ভেতরে কী আছে আমাদের অজানা এবং পুরোপুরি অকৃত্রিম।”

“টু দ্য এম্পায়ার, হ্যাঁ।”

“এবং সম্রাট এটা খুলতে পারবেন, তাই না? উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পারসোন্যাল ক্যারেকটারিসটিক্স এর ফাইল সংরক্ষণ করা হয়। ফাউণ্ডেশনে আছে সেরকম।”

“স্বভাবতই ইম্পেরিয়াল রাজধানীতে।” একমত হলেন বার।

“তা হলে যখন আপনি, একজন সিউয়েনিয়ান প্যাট্রিশিয়ান এবং পীআর অব দ্য রিএলম সম্রাট ক্লীয়নকে গিয়ে বলবেন যে তার প্রিয় পোেষা তোতা পাখি এবং সবচেয়ে সম্ভাবনাময় জেনারেল মিলে তাকে গদি থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেছে এবং প্রমাণ হিসেবে এই ক্যাপসুল দেন, তখন তিনি ব্রুডরিগের চূড়ান্ত লক্ষ্য বলতে কি বুঝবেন?”

দুর্বলভাবে বসে পড়লেন বার। “দাঁড়াও, সব কথা বুঝতে পারছি না।” চোয়াল ঘষলেন এক হাতে। “তুমি আসলে সিরিয়াস নও, তাই না?”

“সত্যি।” ডেভর্স উত্তেজিত। “গত দশ জন সম্রাটের নয় জনই তাদের প্রিয় জেনারেলদের হাতে খুন হয়েছেন। আপনি নিজেই বলেছেন এই কথা। বৃদ্ধ সম্রাট আমাদের কথা দ্রুত বিশ্বাস করবেন।”

দুর্বল গলায় ফিসফিস করলেন বার। “এই ব্যাটা সত্যিই সিরিয়াস। গ্যালাক্সির কসম, তুমি দীর্ঘ অবাস্তব গল্প ফেঁদে সেলডন ক্রাইসিস মোকাবেলা করতে পারবে না। ধরে নাও এই ক্যাপসুলটা তোমার হাতে আসেনি; ধরে নাও ব্রুডরিগ চূড়ান্ত’ শব্দটা ব্যবহার করেনি। সেলডন কখনো এমন অস্বাভাবিক ভাগ্যের উপর নির্ভর করতেন না।”

“যদি অস্বাভাবিক ভাগ্যের সহায়তা পাওয়া যায়, তা হলে কোনো আইনেই বলা হয়নি যে সেলডন সেই সুযোগ কাজে লাগাতেন না।”

“অবশ্যই। কিন্তু…কিন্তু থামলেন বার তারপর শান্ত এবং নিয়ন্ত্রিত সুরে বললেন, “ঠিক আছে প্রথম কথা ট্রানটরে পৌঁছবে কীভাবে? স্পেস এ এই গ্রহের অবস্থান তুমি জান না। আমারও কো-অর্ডিনেটসগুলো মনে নেই। এমনকি স্পেস এ নিজের অবস্থানও এই মুহূর্তে তোমার জানা নেই।”

“স্পেস এ আপনি পথ হারাবেন না,” দাঁত বের করে হাসল ডেভর্স। এরই মধ্যে কন্ট্রোলের সামনে পৌঁছে গেছে সে। “এখান থেকে সবচেয়ে কাছের গ্রহে যাব। ব্রুডরিগের দেওয়া ক্রেডিট দিয়ে কিনব সবচেয়ে ভালো বিয়ারিং এবং সবার সেরা নেভিগেশন চার্ট।”

“আর পেটে ব্লাস্টারের গুলি খাবো। সম্ভবত এম্পায়ারের এই অংশের প্রতিটা গ্রহে আমাদের চেহারার বর্ণনা পৌঁছে গেছে।”

“ডক,” ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে বলল ডেভর্স, “গ্রাম্য চাষার মতো কথা বলবেন না। রিয়োজ বলেছিল আমি সহজেই আত্মসমর্পণ করেছি এবং ব্রাদার, ঠাট্টা করেনি। এই মহাকাশযানে যথেষ্ট ফায়ার পাওয়ার এবং শক্তিশালী শিল্ড আছে যা দিয়ে ফ্রন্টিয়ারের ভেতরেই যে-কোনো বিপদের মোকাবেলা করতে পারব। তা ছাড়া আমাদের কাছে পারসোন্যাল শিল্ড আছে। এম্পায়ার এর ছেলেরা খুঁজে পায়নি, তারা একটু খুঁজেই পেয়ে যাবে এমনভাবে রাখাও হয়নি।”

“ঠিক আছে,” বললেন বার। “ঠিক আছে। ধরা যাক ট্র্যানটরে পৌঁছলে তুমি। সম্রাটের সাথে কীভাবে দেখা করবে? তোমার কি ধারণা তিনি সকাল বিকাল অফিস করেন?”

“ধরে নিন সেটা নিয়ে ট্রানটরে পৌঁছেই মাথা ঘামাব।”

অসহায় ভঙ্গিতে কাঁধ নাড়লেন বার। “ঠিক আছে। বহুদিনের সাধ মরার আগে ট্র্যানটরে একবার যাবই। তুমি তোমার পথে চলো।”

হাইপার নিউক্লিয়ার মোটর চালু হল, মিটমিট করতে লাগল আলোগুলো, হাইপারস্পেসে ঢোকার ফলে অভ্যন্তরীণ ঝাঁকুনি অনুভব করল যাত্রীদ্বয়।

*