ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার by আইজাক আসিমভ, chapter name প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল - ৯. ট্রানটরের বুকে

প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল - ৯. ট্রানটরের বুকে

গ্যালাক্সির এই অংশের নক্ষত্রের সংখ্যা কিছুটা কম। অল্প যে কয়েকটা আছে। সেগুলোকে মনে হয় অরক্ষিত ফসলের ক্ষেতে গজিয়ে উঠা আগাছার মতো। যদিও প্রথমবারের মতো লাথান ডেভর্স তাদের যাত্রাপথ নিখুঁতভাবে হিসেব করতে পারছে। তার মতে সামনের এক লাইটইয়ার দূরত্ব দ্রুত পেরিয়ে যাওয়া দরকার। চতুর্দিকের আকাশে একটা উজ্জ্বল আভা, কর্কশ, মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। যেন বিপজ্জনক রেডিয়েশন সমুদ্রে ভাসছে এমন একটা অনুভূতি।

দশ হাজার নক্ষত্রের এক ঝাকের ঠিক মাঝখানে-যে নক্ষত্রের আলো ঘিরে থাকা ক্ষীণ অন্ধকারকে ভেঙে টুকরো করেছে শতভাগে-রয়েছে সুবিশাল ইম্পেরিয়াল প্ল্যানেট, ট্র্যানটর।

এটা শুধু একটা গ্রহই নয়; এটা হচ্ছে বিশ মিলিয়ন স্টেলার সিস্টেম নিয়ে গড়ে উঠা এক বিশাল সাম্রাজ্যের প্রাণ। এর শুধু একটাই কাজ, প্রশাসন; একটাই লক্ষ্য, সরকার; একটাই উৎপাদিত পণ্য, আইন।

পুরো গ্রহটাকেই প্রকৃত অবস্থা থেকে রূপান্তরিত করা হয়েছে। মানুষ, পোয্য প্রাণী এবং কিছু অণুজীব ছাড়া সারফেসে আর কোনো জীবন্ত বস্তু নেই। ইম্পেরিয়াল প্যালেসের কয়েকশ বর্গকিলোমিটার এলাকা বাদে পুরো গ্রহের আর কোথাও একটা ঘাস পর্যন্ত নেই। নেই পানির কোনো উন্মুক্ত উৎস। শুধু কয়েকটা ভূগর্ভস্থ জলাধার যেখান থেকে পুরো গ্রহে পানি সরবরাহ করা হয়।

চকচকে অবিনশ্বর ধাতু দিয়ে পুরো ট্রানটর আচ্ছাদিত। এটাই আবার বিশাল বিশাল ধাতব কাঠামো যা পুরো গ্রহে গোলকধাঁধা তৈরি করেছে তার ভিত্তি। পায়ে চলা পথ দিয়ে কাঠামোগুলো পরস্পরের সাথে যুক্ত। রয়েছে জালের মতো ছড়ানো হাজার হাজার করিডোের; বদ্ধ অফিসকক্ষ; কয়েক বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত বিক্রয়কেন্দ্র যেগুলো প্রতিরাতে প্রাণের স্পর্শে সজীব হয়ে উঠে।

পায়ে হেঁটে কেউ ট্র্যানটরের একটা শহর দেখেই শেষ করতে পারবে না, পুরো গ্রহতো অসম্ভব ব্যাপার।

সমগ্র এম্পায়ারের যে ওয়ার ফ্লিট ছিল তার চেয়েও অধিকসংখ্যক মহাকাশযানের বহর ট্রানটরের চল্লিশ বিলিয়ন মানুষের খাবার পৌঁছে দিত প্রতিদিন বিনিময়ে যারা সর্বকালের সবচেয়ে জটিল সরকার ব্যবস্থার সূক্ষ্ম প্রশাসনিক জাল নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া আর কিছুই করত না।

বিশটা কৃষিভিত্তিক বিশ্ব ছিল তার খাদ্য ভাণ্ডার। পুরো মহাবিশ্ব ছিল তার দাস

চারপাশে কঠিন ধাতব অনুভূতি নিয়ে, ট্রেড শিপ ধীরে ধীরে অবতরণ করল একটা বিশাল র‍্যাম্পে, সেখান থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া হল বিশাল হ্যাঁঙ্গারে। এরই মধ্যে এই গ্রহের জটিল পেপার-ওয়ার্কের ঠেলায় বিরক্ত হয়ে পড়েছে ডেভর্স।

প্রথমে তাদের থামানো হয় স্পেস এ। সেখানে শত শত প্রশ্ন পাল্টা প্রশ্নের ঠেলায় দম বেরিয়ে যাবার উপক্রম।মুখোমুখি হতে হয় সাইকিক প্রোবের অতি সাধারণ পরীক্ষার। ক্যারেকটারিস্টিক্স এনালাইসিস করা হয় যাত্রীদুজনের, মহাকাশযানের ছবি তোলা হয়। যথা নিয়মে ট্যাক্স প্রদানের পর আইডেন্টিটি কার্ড এবং ভিসার প্রশ্ন উঠে।

ডুসেম বার একজন স্যিউয়েনিয়ান এবং সম্রাটের একজন প্যাট্রিশিয়ান, কিন্তু লাথান ডেভর্স অপরিচিত লোক এবং তার কাছে কোনো পরিচয়পত্র নেই। কর্তব্যরত অফিসার আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করলেও পরিষ্কার বলে দিল যে ডেভর্স গ্রহে ঢুকতে পারবে না। সত্যি কথা বলতে কি তদন্তের জন্য আটকে রাখা হবে।

ভোঝবাজির মতো লর্ড ব্রুডরিগের দেওয়া নতুন একশ ক্রেডিট পকেট থেকে বের করে আনল ডেভর্স। হাত বদল হল দ্রুত। সাথে সাথে পাল্টে গেল অফিসারের আচরণ। নতুন আরেকটা ফরম বের করে সে নিজের হাতেই দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে পূরণ করে ফেলল।

বণিক এবং প্যাট্রিশিয়ান প্রবেশ করল ট্র্যানটরে।

হ্যাঙ্গারে আবার মহাকাশযানের ছবি তুলে তার সাথে যুক্ত করে রাখা হল যাত্রী দুজনের নাম পরিচয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি আদায় করে একটা রিসিপ্ট কপি ধরিয়ে দেওয়া হল তাদের হাতে।

এবং তারপর ডেভর্স নিজেকে আবিষ্কার করল একটা বিশাল টেরেসে, মাথার উপর থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে সূর্যের উজ্জ্বল সাদাটে আলো, নিচে মহিলারা গল্প করছে, ছুটোছুটি করছে শিশুরা, পুরুষরা অলসভাবে পানীয়ের গ্লাস হাতে নিয়ে বিরাট আকারের টেলিভাইজরে এম্পায়ারের খবর দেখছে।

নির্দিষ্ট পরিমাণ ইরিডিয়াম কয়েন জমা দিয়ে বার একটা শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র বেছে নিলেন। ট্র্যানটর ইম্পেরিয়াল নিউজ। সম্রাটের আনুষ্ঠানিক মুখপাত্র বলা হয় এটাকে। নিউজ রুমের পেছন থেকে অতিরিক্ত কপি ছাপানোর মৃদু শব্দ ভেসে আসছে। ইম্পেরিয়াল নিউজ অফিস এখান থেকে করিডোরের হিসেবে দশ হাজার মাইল এবং আকাশযানের হিসেবে ছয় হাজার মাইল দূরে-ঠিক এই মুহূর্তে গ্রহের বিভিন্ন প্রান্তে দশ মিলিয়ন নিউজরুমে একই কপির দশমিলিয়ন সেট ছাপা হচ্ছে।

খবরের শিরোনামগুলোর উপর চোখ বুলিয়ে হালকা গলায় জিজ্ঞেস করলেন বার,”আমরা প্রথমে কী করব?”

একটা ঝাঁকুনি দিয়ে নিজের হতাশা দূর করার চেষ্টা করল ডেভর্স। নিজের জগৎ ছেড়ে সে অন্য এক জগতে এসে পড়েছে, এমন এক বিশ্ব যার জটিলতা, অধিবাসী এবং ভাষার কিছুই সে বুঝছে না। চারপাশের চর্চকে ধাতব টাওয়ার এবং দৃষ্টিসীমা ছাড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা সীমাহীন প্রাচুর্য দমিয়ে দিয়েছে তাকে। ওয়ার্ল্ড মেট্রোপলিস এর প্রাচুর্যময় জীবন দেখে নিজেকে মনে হচ্ছে কেমন নিঃসঙ্গ আর তুচ্ছ।

“সেটা ঠিক করার ভার আপনার উপর ছেড়ে দিলাম, ডক।” বলল সে।

বার পুরোপুরি শান্ত, কণ্ঠস্বর নিচু। “তোমাকে বলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু নিজের চোখে না দেখলে তোমার বিশ্বাস হত না। তুমি জানো দৈনিক কতজন লোক

ম্রাটকে দেখার জন্য ভিড় জমায়? প্রায় এক মিলিয়ন। তিনি কতজনকে দেখা দেন? প্রায় দশ। আমাদেরকে সিভিল সার্ভিসের মাধ্যমে যেতে হবে, ফলে কাজটা আরো কঠিন। অভিজাতদের সাথে পাল্লা দিয়ে পারব না।”

“আমাদের কাছে প্রায় এক লাখ ক্রেডিট আছে।”

“মাত্র একজন পিআর অব দ্য রিএলম এর পেছনেই সেটা ব্যয় হয়ে যাবে। আর সম্রাটের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করতে আরো তিন বা চার লাখের প্রয়োজন হবে। হয়তো পঞ্চাশ জন চিফ কমিশনার এবং সিনিয়র সুপারভাইজরকে সন্তুষ্ট করতে হবে, তবে তাদেরকে মাত্র এক শ ক্রেডিট করে দিলেই হবে। কথা বলব আমি। প্রথম কারণ তোমার কথা ওরা বুঝবে না, দ্বিতীয় কারণ ইম্পেরিয়াল ব্যক্তিদের ঘুষ কীভাবে দিতে হয় তুমি জান না। বিশ্বাস করো এটা একটা আর্ট। আহ পেয়েছি!”

ইম্পেরিয়াল নিউজের তৃতীয় পাতায় যা খুঁজছিলেন সেটা পাওয়া গেল। পত্রিকাটা বাড়িয়ে ধরলেন ডেভর্সের দিকে।

ধীরে ধীরে পড়ল ডেভর্স। বাক্যগুলো অদ্ভুত হলেও বুঝতে অসুবিধা হল না। রাগের সাথে পত্রিকাটা ভাজ করল সে, করতলের পেছন দিক দিয়ে পত্রিকায় একটা বাড়ি দিয়ে বলল, “এই কথা বিশ্বাস করা যায়?”

“কিছুটা”, শান্ত গলায় জবাব দিলেন বার। “ফাউণ্ডেশন ফ্লিট পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এটা বিশ্বাস করা অসম্ভব। যদিও এই কথাটা তারা হয়তো বহুবার প্রকাশ করেছে। সম্ভবত তারা যুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধক্ষেত্রের বহুদূরে বসে ক্যাপিটাল ওয়ার্ল্ডে যেভাবে যুদ্ধের সংবাদ দেওয়া হয় সেই কৌশল অবলম্বন করছে। রিয়োজ আরেকটা যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন, অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। এখানে বলা হয়েছে তিনি লরিস দখল করেছেন। এটাই কি কিংডম অব লরিস এর ক্যাপিটাল প্ল্যানেট?”

“হ্যাঁ,” গোমড়ামুখে বলল ডেভর্স, “আর কিংডম অব লরিস এত বড় নাম বলার দরকার নেই। ফাউণ্ডেশন থেকে এটার দূরত্ব বিশ পারসেক এর ও কম, ডক, আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে।”

শ্রাগ করলেন বার, “ট্রানটরে কোনোকিছুই দ্রুত করা যায় না। সেই চেষ্টা করলে নিজেকে তুমি এটমিক ব্লাস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবে।”

“কতদিন লাগবে?”

“ভাগ্য ভালো হলে, একমাস। এক মাস এবং আমাদের এক লাখ ক্রেডিটস-সেটাতেও কুলোবে কিনা জানি না। এবং আমি ধরে নিচ্ছি যে এই মুহূর্তে

সম্রাট গ্রীষ্মকালীন অবকাশ গ্রহে বেড়াতে যাবার কথা ভাবছেন না। সেই সময় তিনি কোনো আবেদনকারীর সাথেই দেখা করেন না।”

“কিন্তু ফাউণ্ডেশন-”

“নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। এসো, ডিনারের সময় হয়েছে। আমি ক্ষুধার্ত। এবং তারপরে পুরো সন্ধ্যাটাই আমাদের সামনে পড়ে আছে। ইচ্ছে মতো কাটানো যাবে। ট্রানটর বা এরকম কোনো গ্রহ জীবনে আর কখনো দেখার সুযোগ হবে না।”

.

আউটার প্রভিন্স বিষয়ক দফতরের হোম কমিশনার অসহায় ভঙ্গিতে বেটে ও মোটা হাতগুলো দুপাশে ছড়িয়ে দিলেন, তারপর ক্ষীণদৃষ্টি সম্পন্ন লোকের মতো তাকালেন পিটপিট করে। কিন্তু, ভদ্রমহোদয়গণ, সম্রাট অসুস্থ। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়ে কোনো লাভ হবে না। হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টি গত সপ্তায় কারো সাথে দেখা করেননি।”

“তিনি আমাদের সাথে দেখা করবেন।” আত্মবিশ্বাসের সাথে বললেন বার। “আপনি শুধু প্রিভি সেক্রেটারির দপ্তরের কারো সাথে আমাদের যোগাযোগ করিয়ে দিন।”

“অসম্ভব,” জোর গলায় বললেন কমিশনার। “আমার চাকরি চলে যাবে। কী কাজে এসেছেন সেটা আরো বিস্তারিত বলতে হবে। আপনাদের আমি সাহায্য করতে চাই। কিন্তু আমাকে এমন একটা স্পষ্ট কারণ দেখাতে হবে যেন আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বোঝাতে পারি।’

“আপনাকে যদি বলাই যায় তা হলে সেটা হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির সাথে দেখা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ হয় কীভাবে? আমাদের কাজটা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। আমি আপনাকে একটা সুযোগ নিয়ে দেখতে অনুরোধ করছি। আমাদের কাজ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। যদি হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির কাছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয় তা হলে আজকে আমাদের সাহায্য করার পুরস্কার আপনি পাবেন।”

“হ্যাঁ, কিন্তু কথা শেষ না করে শুধু শ্রাগ করলেন কমিশনার।

“ঝুঁকি আছে,” স্বীকার করলেন বার। স্বাভাবিক ভাবেই, ঝুঁকি নিলে তার ক্ষতিপূরণ পাওয়া উচিত। আপনি দয়া করে আমাদের সমস্যা বলার সুযোগ দিয়েছেন সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু আপনি যদি আমাদের আরেকটু সুযোগ দিতেন-”

ভুরু কুঁচকালো ডেভর্স। এই একই কথা একটু অদলবদল করে গত এক মাসে সে অনেকবারই শুনেছে। সবসময়ই আলোচনা শেষ হতে চঞ্চকে ক্রেডিট বিলের হাতবদলের মাধ্যমে। আগের ঘটনাগুলোতে বিলগুলো দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যেত গ্রহীতার পকেটে। কিন্তু এবারের ঘটনা ভিন্ন। বিলগুলো পড়ে আছে সামনের টেবিলে, উন্মুক্ত। ধীরে ধীরে সেগুলো গুনলেন কমিশনার, উল্টেপাল্টে দেখলেন ভালোভাবে।

তার কণ্ঠস্বরে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য লক্ষ্য করা গেল। “বেক বাই প্রিভি সেক্রেটারি, হ্যাঁহ্? গুড মানি!”

“আসল কথায় আসা যাক-” তাগাদা দিলেন বার।

“না, দাঁড়ান,” কমিশনার বাধা দিলেন, “ধীরে ধীরে। আমি আসলেই জানতে চাই আপনারা কেন এসেছেন। এই অর্থগুলো একেবারে নতুন, এবং আপনাদের কাছে নিশ্চয়ই অনেক আছে। এখন মনে পড়েছে আমার আগে আপনারা আরো কয়েকজন অফিসারের সাথে দেখা করেছেন। এবার ঝেড়ে কাশুন তো।

“আপনি আলোচনা কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছেন, বুঝতে পারছি না।” বললেন বার।

“কেন? শুনুন, এর থেকে প্রমাণ হয় যে আপনারা অবৈধভাবে এই গ্রহে এসেছেন, যেহেতু আপনার বোবা সঙ্গীর এন্ট্রি কার্ড এবং আইডিন্টিফিকেশন যথেষ্ট নয়। তিনি সম্রাটের গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন।”

“আমি অস্বীকার করছি।”

“কোনো লাভ হবে না,” কমিশনার হঠাৎ রুক্ষ স্বরে বললেন। “যে অফিসার এক শ ক্রেডিটের বিনিময়ে আপনাদের কার্ড সই করেছে, সব স্বীকার করেছে সে-অবশ্যই চাপের মুখে । আমরা অনেক কিছুই জানি।”

“আপনি যদি বোঝাতে চান যে, ঝুঁকির তুলনায় আমরা যা দিচ্ছি সেটা যথেষ্ট নয়-”

হাসলেন কমিশনার, “ঠিক উল্টোটা, যথেষ্ট হয়েও অনেক বেশি। “বিলগুলো তিনি সরিয়ে রাখলেন একপাশে। “যা বলছিলাম, সম্রাট নিজেই আপনাদের ব্যাপারে আগ্রহী। কিছুদিন আগে আপনারা জেনারেল রিয়োজের অতিথি ছিলেন, এটা কি মিথ্যে? তার বাহিনীর কাছ থেকে পালিয়ে এসেছেন, এটা কি মিথ্যে? লর্ড ব্রুডরিগের দেওয়া বেশ ভালো পরিমাণ সম্পত্তি আছে আপনাদের কাছে, এটা কি মিথ্যে? সংক্ষেপে আপনারা একজোড়া স্পাই এবং গুপ্তঘাতক এখানে এসেছেন-বেশ, কে আপনাদের ভাড়া করেছে সেটা বললেই ভালো করবেন।”

“একজন সামান্য কমিশনার-এর,” রাগের সাথে বললেন বার, “আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার অধিকার আছে আমি সেটা অস্বীকার করছি। আমরা যাচ্ছি।”

“আপনারা যেতে পারবেন না,” উঠে দাঁড়ালেন কমিশনার, এখন আর তাকে ক্ষীণদৃষ্টির মনে হচ্ছে না। “এখন কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে না। পরবর্তীতে কঠিন সময়ের জন্য তুলে রাখুন সেগুলো। আর আমি কমিশনার নই। ইম্পেরিয়াল পুলিশের একজন লেফটেন্যান্ট। আপনাদের গ্রেপ্তার করা হল।”

মুখের হাসির সাথে লেফটেন্যান্ট এর হাতে এখন শোভা পাচ্ছে চৰ্চকে ব্লাস্টার। “আপনাদের চেয়েও নামি দামি লোকদের এখন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা একটা ভীমরুলের চাক পরিষ্কার করছি।”

আস্তে আস্তে নিজের অস্ত্রের দিকে হাত বাড়ালো ডেভর্স। মুখের হাসি আরো চওড়া হল লেফটেন্যান্ট-এর। কন্টাক্ট এ চাপ দিল, নিখুঁতভাবে তীব্র রশ্মি আঘাত করল ডেভর্স এর বুকের ঠিক মাঝখানে-তার পার্সোন্যাল শিল্ডে বাধা পেয়ে আলোর শত টুকরা হয়ে ছিটকে পড়ল চারদিকে।

এবার ফায়ার করল ডেভর্স, লেফটেন্যান্ট এর মাথা ছিটকে পড়ল মাটিতে, মুখের হাসি এখনও মলিন হয়নি, দেয়ালে তৈরি হওয়া নতুন ফুটো দিয়ে আলো এসে পড়ায় মনে হচ্ছে যেন দাতালো কোনো জন্তু।

পিছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল তারা।

“জাহাজে পৌঁছতে হবে দ্রুত,” হিসহিস করে বলল ডেভর্স। ভাগ্যকে অভিশাপ দিল। “আরেকটা পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। কসম খেয়ে বলতে পারি স্পেস ফিয়েও আমাদের বিপক্ষে কাজ করছে।”

খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসার পর তারা বুঝতে পারল বিরাট টেলিভাইজরের সামনে ভিড় বাড়ছে ক্রমশ। দাঁড়ানোর সময় নেই; টুকরো কিছু কথা কানে ভেসে এলেও মনযোগ দিল না। কিন্তু হ্যাঁঙ্গারের প্রশস্ত দরজার দিকে দৌড়ানোর সময় বার ইম্পেরিয়াল নিউজের একটা কপি ছিনিয়ে নিলেন। হ্যাঁঙ্গারের একটা শূন্য জায়গায় তাদের মহাকাশযান দাঁড়িয়ে আছে।

“ওদের কাছ থেকে পালাতে পারবে?” জিজ্ঞেস করলেন বার।

ট্রাফিক পুলিশের দশটা শিপ ভীষণ জোরে পালাতে থাকা শিপ-এর পিছু নিল, যে শিপ আইনসঙ্গত রেডিও-বিমড পথ ছেড়ে হঠাৎ এত দ্রুত ছুটল যে দ্রুতগতির পূর্বের সমস্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল। আরো পিছনে সিক্রেট পুলিশের হালকা পাতলা শিপগুলো নির্দিষ্ট বর্ণনার একটা শিপ এবং দুজন খুনীকে ধরার জন্য ছুটোছুটি শুরু করেছে।

“ওয়াচ মি,” বলল ডেভর্স, এবং ট্র্যানটরের সারফেস থেকে মাত্র দুই হাজার মাইল উপরে উঠেই শিফট করল হাইপারস্পেসে। গ্রহের এত কাছে শিফট করার কারণে প্রায় অচেতন হয়ে পড়লেন বার, আর ব্যাখ্যার অতীত একধরনের আতঙ্ক ঘিরে ধরল ডেভর্সকে, কিন্তু এক আলোক বর্ষ দূরে তাদের সামনে মহাকাশ একেবারে পরিস্কার।

নিজের মহাকাশযান নিয়ে সীমাহীন গর্ব প্রকাশ পেল ডেভর্সের কথায়। কোনো ইম্পেরিয়াল শিপ আমাকে ধরতে পারবে না।”

তারপর তিক্ত সুরে বলল, “কিন্তু পালিয়ে যাব কোথায়, ওদের সাথে আমরা পারব না। কি করার আছে?”

বার দুর্বলভাবে নিজের কটে নড়েচড়ে বসলেন, হাইপারশিফটের প্রভাব এখনো দূর হয়নি। শরীরের প্রতিটি মাংসপেশি শক্ত হয়ে আছে। “কাউকে কিছু করতে হবে না। সব শেষ হয়ে গেছে। দেখ!” বললেন তিনি।

ইম্পেরিয়াল নিউজের কপিটা এগিয়ে দিলেন, প্রথম পাতার হেডলাইনটাই বণিকের বিষম খাওয়ার জন্য যথেষ্ট।

“দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি এবং গ্রেপ্তার-রিয়োজ এবং ব্রুডরিগ,” বিড় বিড় করে পড়ল সে। শূন্য দৃষ্টিতে তাকাল বার এর দিকে, “কেন?”

“এখানে বিস্তারিত লেখা নেই। কিন্তু তাতে কি? ফাউণ্ডেশন-এর সাথে যুদ্ধ শেষ হয়েছে। এই মুহূর্তে বিদ্রোহ চলছে সিউয়েনায়। তুমি নিজেই পড়,” তার কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। কোনো একটা প্রদেশে নেমে বিস্তারিত জেনে নেব। এখন ঘুমাব আমি।”

ঠিক কথামতো কাজ করলেন তিনি।

ঘাসফড়িঙের মতো একটা চক্কর দিয়ে ট্রেড শিপ ফিরে চলল ফাউণ্ডেশন-এর দিকে।

*