ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার by আইজাক আসিমভ, chapter name প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল - ৭. ঘুষ

প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল - ৭. ঘুষ

সার্জেন্ট মোরি লিউক একজন আদর্শ সৈনিক। সে এসেছে বিশাল কৃষিপ্রধান গ্রহ প্লেইডাস থেকে, যেখানে একমাত্র সামরিক জীবনই কেবল পারে মাটির সাথে বন্ধন ছিন্ন করতে। সেও তার ব্যতিক্রম নয়। দ্বিধাহীন চিত্তে বিপদের মুখোমুখি হতে পারে। নির্দেশ পালন করে বিনা প্রশ্নে, অধীনস্থদের খাঁটিয়ে মারে নির্দয়ের মতো, আর নিজের জেনারেলকে মনে করে সাক্ষাৎ ঈশ্বর।

তার পরেও সে বেশ হাসিখুশি মানুষ। দায়িত্ব পালনের সময় নির্দ্বিধায় মানুষ খুন করলেও তার ভেতর কোনো রকম হিংসা বিদ্বেষ কাজ করেনা।

সেই সার্জেন্ট লিউক যে ভেতরে ঢোকার আগে দরজায় শব্দ করবে সেটাই স্বাভাবিক, যদিও কোনো রকম সাড়াশব্দ না করেই সে ঢুকতে পারে।

ভিতরের দুজন খাওয়া থেকে মুখ তুলে তাকাল। একজন উঠে গিয়ে পকেট ট্রান্সমিটারের আওয়াজ বন্ধ করে দিল।

“আরো বই”? জিজ্ঞেস করল লাথান ডেভর্স।

এক হাতে পেঁচানো সিলিন্ডার আকৃতির ফিল্ম বাড়িয়ে ধরে আরেক হাতে ঘাড় চুলকালো সার্জেন্ট। “এটা ইঞ্জিনিয়ার অরির, তাকে আবার ফিরিয়ে দিতে হবে। এটা সে তার বাচ্চাদের কাছে পাঠাতে চায়, বুঝতে পারছেন, ঐ যে আপনারা যাকে বলেন স্যুভেনির; বুঝতে পারছেন।”

সিলিণ্ডারটা হাতে নিয়ে কৌতূহলের সাথে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখলেন ডুসেম বার। “এটা তিনি কোথায় পেয়েছেন? তার কাছে তো ট্রান্সমিটার নেই, আছে?”

জোরে জোরে মাথা নাড়ল সার্জেন্ট। বিছানার পায়ের কাছে রাখা ভাঙাচোড়া যন্ত্রটা দেখিয়ে বলল, “এখানে ওই একটাই আছে। অরি এই বইটা এনেছে আমরা যে বর্বর গ্রহগুলো দখল করেছি তার একটা থেকে। গ্রহের অধিবাসীরা বইটা রেখেছিল একটা বড় ভবনের ভেতর। তাদের কাছ থেকে এটা কেড়ে নেয়ার সময় কয়েকজনকে খুন করতে হয়।”

প্রশংসার দৃষ্টিতে জিনিসটা কিছুক্ষণ নিরূপণ করল সে। “চমৎকার স্যুভেনির বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য।”

তারপর কিছুটা কৌতুকের সুরে বলল, “ভালো কথা, একটা খবর শোনা যাচ্ছে। জেনারেল আবার কাজটা করেছেন।” বলেই গম্ভীরভাবে মাথা নাড়ল সে।

“তাই?” বলল ডেভর্স। “কী করেছেন তিনি?”

“অবরোধের কাজ শেষ করেছেন।” হালকা গর্বের সাথে বলল সার্জেন্ট। “তিনি আশ্চর্য দক্ষ লোক, তাই না? আমাদের একজন তো বলেছে যে কাজটা তিনি এমনভাবে করেছেন যেন অনবদ্য সঙ্গীত রচনা করেছেন।”

“আসল লড়াই শুরু হতে যাচ্ছে?” হালকা চালে জিজ্ঞেস করলেন বার।

“আশা করি,” সার্জেন্টের উল্লসিত জবাব। “আমাকে নিজের জাহাজে ফিরতে হবে। এখানে বসে থেকে আমি ক্লান্ত।”

“আমিও।” হঠাৎ রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলল ডেভর্স।

চোখে সন্দেহ নিয়ে তার দিকে তাকাল সার্জেন্ট। “এবার যেতে হবে। যে কোনো মুহূর্তে রাউণ্ডে আসবে ক্যাপ্টেন। আমি যে এসেছি সেটা তাকে জানাতে চাই না।”

দরজার কাছে আবার একটু থামল। “ভালো কথা, স্যার,” মুখে লাজুক ভাব নিয়ে বলল সে, “আমার স্ত্রীর কাছ থেকে খবর পেয়েছি। আপনি যে ছোট ফ্রিজিয়ার পাঠিয়েছেন খুব চমৎকার কাজ করছে সেটা। কোনো ঝামেলা হচ্ছে না। এখন সে পুরো একমাসের সাপ্লাই মজুদ করে রাখতে পারছে।”

“ঠিক আছে, ওটা কোনো ব্যাপার না।” গাল ভরা হাসি নিয়ে বেরিয়ে গেল সার্জেন্ট।

চেয়ার ছেড়ে উঠলেন ডুসেম বার। “বেশ, ফ্রিজিয়ারের বদলে ভালোই প্রতিদান দিয়েছে। নতুন বইটা একটু দেখা যাক। ওহহো, নাম পড়া যাচ্ছে না।”

প্রায় একগজের মতো ফিল্ম বের করে আলোর সামনে মেলে ধরলেন তিনি। “ডেভর্স, এটা হল ‘দ্য গার্ডেন অব সুম্মা’।”

“তাই?” নিরুৎসুক গলায় জবাব দিল বণিক। খাবারের উচ্ছিষ্ট সরিয়ে রাখল একপাশে। “বসুন বার। প্রাচীন সাহিত্য শুনে কোনো লাভ হবে না। সার্জেন্ট কি বলেছে আপনি শুনেছেন?”

“হ্যাঁ, শুনেছি। কী হয়েছে তাতে?”

“যে-কোনো মুহূর্তে আক্রমণ শুরু হবে। আর আমরা এখানে বসে আছি!”

“তো, তুমি কোথায় বসতে চাও?”

“আমি কি বলতে চাই আপনি সেটা ভালোভাবেই জানেন। এখানে অপেক্ষা করার কোনো মানে নেই।”

“নেই?” বার সাবধানে ট্রান্সমিটার থেকে পুরোনো ফিল্ম বের করে নতুন ফিল্ম ভরছেন। “এক মাসে ফাউণ্ডেশন ইতিহাসের অনেক কিছুই জেনেছি। তাতে আমার মনে হয়েছে অতীতে ক্রাইসিসের সময় তোমাদের নেতারা বসে বসে অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করত না।”

“আহ্, বার, ঘটনা কোন দিকে মোড় নেবে সেটা তারা জানতেন।”

“আসলেই? আমার তো মনে হয় সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা এই কথা বলতেন। জানতেন হয়তো। আবার না জানলেও যে পরিস্থিতি অন্যরকম হত তার কোনো প্রমাণ নেই। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক শক্তি কখনো একজন মানুষের উপর নির্ভর করে না।”

নাক দিয়ে বিশ্রী শব্দ করল ডেভর্স।”পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো সেটাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। আপনি আসলে ঘটনার লেজ থেকে মাথার দিকে আসার চেষ্টা করছেন। ধরুন লোকটাকে আমি ব্লাস্টার দিয়ে মেরে ফেললাম।”

“কাকে? রিয়োজকে?”

“হ্যাঁ।”

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন বার। দৃষ্টি হারিয়ে গেছে অতীতে, স্মৃতি রোমন্থন করছেন। “গুপ্ত হত্যা করে সমস্যার সমাধান হবে না, ডেভর্স। আমি একবার চেষ্টা করেছিলাম, বাধ্য হয়ে। তখন বিশ বছর বয়সের তরুণ-কোনো লাভ হয়নি। সিউয়েনার দৃশ্যপট থেকে একটা খলনায়ককে সরাতে পেরেছিলাম শুধু, কিন্তু ইম্পেরিয়াল শাসনের জোয়াল সরাতে পারিনি। খলনায়ককে বাদ দিয়ে ইম্পেরিয়াল শাসনের জোয়াল নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে।”

“কিন্তু রিয়োজকে শুধু খলনায়কের পর্যায়ে ফেললে চলবে না। তার সাথে বিশাল একটা আর্মি আছে। তাকে ছাড়া আর্মি কিছুই করতে পারবে না। সৈনিকেরা শিশুর মতো তার উপর ভরসা করে। সার্জেন্ট যতবারই তার নাম বলেছে ততবারই মুখ দিয়ে লালা বের করে ফেলেছে।”

“তারপরেও। আমি আরো আছে, আছে আরো অনেক লিডার। তোমাকে অনেক গভীরে ঢুকতে হবে। যেমন ব্রুডরিগ-ম্রাট অন্য যে কারো চেয়ে তার কথার গুরুত্ব দেন সবচেয়ে বেশি। রিয়োজ যেখানে দশটা যুদ্ধযান নিয়ে এসেছে, সেখানে সে একশটা যুদ্ধযান নিয়ে আসতে পারবে।”

“তাই? লোকটার কথা কিছু বলুন শুনি।” বণিকের হতাশ দৃষ্টি এখন কৌতূহলে চিচি করছে।

“ব্রুডরিগ একটা নিচু জাতের হারামজাদা। তোষামুদি করে সম্রাটের সন্তুষ্টি অর্জন করেছে। দরবারের কেউই তাকে পছন্দ করে না, নগণ্য কীটের মতো ঘৃণা করে; কারণ তার জন্মের ঠিক নেই। সে হল ম্রাটের সকল কাজের পরামর্শদাতা এবং সম্রাটের সকল ঘৃণ্য কাজগুলো সেই করে দেয়। তাকে ডিঙিয়ে কেউ সম্রাটের সুনজরে পড়তে পারে না।”

“ওয়াও!” চিন্তিতভাবে ডেভর্স তার আচড়ানো দাড়ি টানতে লাগল। “আর রিয়োজের উপর নজর রাখার জন্য সম্রাট তাকে এখানে পাঠিয়েছেন। আপনি জানেন, আমার একটা পরিকল্পনা আছে?”

“এখন জানলাম।”

“ধরা যাক ব্রুডরিগ এই তরুণ জেনারেলকে অপছন্দ করা শুরু করল।”

“অপছন্দ করবেই। ব্রুডরিগ কাউকে পছন্দ করে এরকম কখনো শোনা যায়নি।”

“ধরুণ পরিস্থিতি আরো খারাপ হলো, সেটা সম্রাটের কানে যাবে। তখন মহাসংকটে পড়বে রিয়োজ।”

“স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি সেটা কিভাবে সম্ভব করবে?”

“জানি না। ঘুষ দিয়ে দেখা যায়।”

প্যাট্রিশিয়ান মধুর ভঙ্গিতে হাসলেন।”দেওয়া যায়, তবে সার্জেন্টকে যেরকম ঘুষ দিয়েছ সেরকম হলে চলবে না। আবার তার দাবি পূরণ করতে পারলেও কোনো লাভ হবে না। সত্যি কথা বলতে কি ব্রুডরিগের ভেতর সামান্যতম সততাও নেই। ঘুষ নিয়েও কাজ করবে না। অন্য কিছু ভাবতে হবে।”

এক হাঁটুর উপর অন্য পা তুলে জোরে জোরে গোড়ালি নাচাতে লাগল ডেভর্স। “এটা একটা ধারণা, যদিও-”

ব্রেক কষতে বাধ্য হল সে, কারণ দরজার সংকেত বাতি জ্বলছে। আগের সেই সার্জেন্টকে আবার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। অতিরিক্ত উত্তেজনায় লাল হয়ে আছে চেহারা।

“স্যার,” একটু দ্বিধাগ্রস্তভাবে শুরু করল সে, “ফ্রীজার-এর জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, কিন্তু আমি কৃষকের সন্তান, আপনারা গ্রেট লর্ডস।”

তার প্লেইডাস বাচনভঙ্গি বোঝা যাচ্ছে না কিছুই; আর উত্তেজনার কারণে এতদিনের সযত্নে গড়ে তোলা সৈনিক সুলভ আচরণ সড়ে গিয়ে বেরিয়ে পড়ল গ্রাম্য আচরণ।

“কী ব্যাপার, সার্জেন্ট?” আশ্বস্ত করার সুরে বার বললেন।

“লর্ড ব্রুডরিগ দেখতে আসছেন আপনাদের। আগামী কাল! আমি জেনেছি, কারণ ক্যাপ্টেন নির্দেশ দিয়েছেন আমি যেন সৈনিকদের পোশাকের দিকে লক্ষ্য রাখি, তাকে…তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। আমার মনে হয়েছে আপনাদের সতর্ক করে দেওয়া উচিত।”

“ধন্যবাদ, সার্জেন্ট।” বললেন বার, “আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু তার কোনো প্রয়োজন ছিলনা–”

কিন্তু সার্জেন্টের চেহারায় স্পষ্ট আতঙ্কের ছাপ। ফিসফিস করে বলল, “তার সম্বন্ধে সবাই যে গল্পগুলো বলে সেটা আপনারা জানেন না। নিজেকে সে স্পেস ফিয়েণ্ডের* (*ফিয়েণ্ড-শয়তান) কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। আরো অনেক ভয়ংকর গল্প শোনা যায়। লোকে বলে তার সাথে সবসময় ব্লাস্ট গান সহ দেহরক্ষী থাকে। বিনোদনের প্রয়োজন হলেই সামনে যাকে পায় তাকে খুন করার নির্দেশ দেয়-মানুষের মৃত্যু দেখে সে আনন্দ পায়। এমনকি সম্রাটও নাকি তাকে ভয় পান। তার কারণেই সম্রাট কর বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছেন।

“আর জেনারেলকে সে অপছন্দ করে, খুন করতে চায়। কারণ আমাদের জেনারেল তারচেয়ে অনেক বেশি জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমান। তিনি অবশ্য জানেন ফ্রডরিগ একটা বদমাশ।”

চোখ পিটপিট করল সার্জেন্ট; বেশি কথা বলে এখন লজ্জা পাচ্ছে। জোরে জোরে মাথা নেড়ে পিছিয়ে গেল দরজার দিকে। “আমার কথা শুনে কিছু মনে করবেন না। সতর্ক থাকবেন।”

বেরিয়ে গেল সে।

ডেভর্সের দৃষ্টি কঠিন। “আমাদের পছন্দ মতো ঘটনা ঘটছে, তাই না, ডক?”

“নির্ভর করছে,” শুকনো গলায় বললেন বার, ব্রুডরিগের উপর, তাই না?”

কিন্তু ডেভর্স কিছুই শুনছে না, চিন্তা করছে, গম্ভীরভাবে।

.

টেডিং শিপের অপ্রশস্ত লিভিং কোয়ার্টারে ঢুকে প্রথমে চারপাশে ভালো করে দেখল লর্ড ব্রুডরিগ। সশস্ত্র রক্ষীরা দ্রুত তাকে অনুসরণ করল অস্ত্র হাতে, আচরণেই বোঝা যায় এরা কঠিন পাত্র।

প্রিভি সেক্রেটারিকে দেখে মনে হল না ভয়ংকর। স্পেস ফিয়েও তাকে কিনে নিলেও তার কোনো লক্ষণ নেই। বরং ব্রুডরিগকে দেখে মনে হয় প্রাণবন্ত কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসেছে সামরিক ঘাটি পরিদর্শনে।

নিভাঁজ, পরিপাটি, জাকজমকপূর্ণ পোশাকের কারণে তাকে মনে হয় বেশ লম্বা, যেন অনেক উপর থেকে ঠাণ্ডা নিরাবেগ চোখে বণিকের লম্বা নাকের দিকে তাকিয়ে আছে। আইভরি স্টিকের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানোর সময় কব্জিতে বাধা মণিমুক্তা খচিত অলংকার ঝকমক করে উঠল।

“না,” সামান্য ইশারা করে বলল সে। “ওখানেই থাকো। খেলনাগুলোর কথা ভুলে যাও; আমার কোনো আগ্রহ নেই।”

একটা চেয়ার টেনে নিল সে। লাঠির আগায় জড়ানো কাপড়ের টুকরা দিয়ে যত্নের সাথে ধুলা সাফ করে বসল। বাকি চেয়ারটার দিকে তাকাল ডেভর্স, কিন্তু ব্রুডরিগ অলস কন্ঠে বলল, “পীয়ার অব দ্য রিএম-এর সামনে তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।”

হাসল সে।

শ্রাগ করল ডেভর্স। “আমার স্টকের প্রতি আগ্রহ না থাকলে আমি এখানে কেন?”

শ্বাপদের মতো অপেক্ষা করছে প্রিভি সেক্রেটারি। ডেভর্স আস্তে করে যোগ করল, “স্যার।”

“প্রাইভেসির জন্য, সেক্রেটারি বলল। “তোমার কি মনে হয় তুচ্ছ মনিহারী সামগ্রী দেখার জন্য আমি দুই শ পারসেক পাড়ি দিয়ে এসেছি। আমি তোমাকে দেখতে এসেছি।” কারুকার্যময় বাক্স থেকে গোলাপি রঙের একটা ট্যাবলেট বের করে যত্নের সাথে দুই দাঁতের ফাঁকে রাখল সে, তারপর মজা করে চুষতে লাগল।

“যেমন,” পুনরায় শুরু করল ব্রুডরিগ, “কে তুমি? তুমি কি আসলেই ওই বর্বর গ্রহের অধিবাসী যে গ্রহের কারণে সামরিক উত্তেজনা শুরু হয়েছে?”

গম্ভীরভাবে মাথা নাড়ল ডেভর্স।

“এবং তুমি এই ঝামেলা যাকে সে বলছে যুদ্ধ, এটা শুরু হওয়ার পরই তার হাতে ধরা পড়েছ। আমি তোমার তরুণ জেনারেলের কথা বলছি।”

আবারও মাথা নাড়ল ডেভর্স।

“তাই! বেশ, বুঝতে পারছি কথা বলতে তোমার অসুবিধা হবে। তোমার জন্য সহজ করে দিচ্ছি। মনে হচ্ছে আমাদের জেনারেল প্রচুর শক্তি ব্যয় করে এখানে একটা অর্থহীন যুদ্ধ করছেন-শেষ প্রান্তের এমন একটা ক্ষুদ্র গ্রহের বিরুদ্ধে যে গ্রহের জন্য কোনো বিবেচক ব্যক্তি বন্দুকের একটা ব্লাস্টও খরচ করবে না। অথচ জেনারেল অবিবেচক নন। সত্যি কথা বলতে কি তিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান। আমার কথা বুঝতে পারছ?”।

“পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি, একথা বলা যাবে না, স্যার।”

মনযোগ দিয়ে হাতের নখ পর্যবেক্ষণ করছে সেক্রেটারি। বলল, “আরো শোন। জেনারেল সামান্য যশ বা গৌরবের লোভে নিজের সৈনিক বা যুদ্ধযানগুলোকে বিপদে ফেলবেনা। আমি জানি সে সবসময় ইম্পেরিয়াল যশ এবং গৌরবের কথা চিন্তা করে আবার হিরোয়িক এজের নরদেবতাদের অসহ্য মেকী আচরণের কথাও সে ভুলে যায়নি। এখানে যশ বা গৌরবের চেয়ে বড় কিছু আছে-আর তোমার সাথে সে অস্বাভাবিক রকম ভালো ব্যবহার করছে। তুমি যদি আমার বন্দি হতে আর জেনারেলকে যেরকম অপ্রয়োজনীয় কথা বলেছ আমার কাছে সেরকম বললে আমি তোমার পেট চিরে নাড়িভুড়ি বের করে আবার সেগুলো তোমার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মারতাম।”

কাঠের পুতুলের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল ডেভর্স। আড়চোখে পালাক্রমে তাকাল সেক্রেটারির রক্ষী দুজনের দিকে। দুজনেই খুন করার প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে।

সেক্রেটারির মুখে কৌতুকের হাসি। “তুমি আসলেই একটা বদমাইশ। জেনারেলের কথা অনুযায়ী সাইকিক পোবও তোমার উপর কাজ করেনি। এটা অবশ্য জেনারেলের একটা ভুল, কারণ আমার মনে হয়েছে আমাদের তরুণ বিচক্ষণ সমরনায়ক মিথ্যে কথা বলছেন।

“মাই অনেস্ট ট্রেডসম্যান, সেক্রেটারি বলে চলেছে, “আমার নিজস্ব সাইকিক প্রোব আছে যা শুধু বিশেষ করে তোমার উপরই প্রয়োগ করা যাবে। এটা দেখো-”

বুড়ো আঙুল এবং মধ্যমা দিয়ে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে সে গোলাপি হলুদ রঙের যে আয়তকার বস্তুগুলো ধরে রেখেছে সেগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে যে কেউই চিনতে পারবে। ডেভর্সও পারল।

“মনে হচ্ছে নগদ অর্থ।” বলল সে।

“নগদ অর্থ এবং এম্পায়ারের সবচেয়ে সেরা। কারণ এই অর্থ আমার এস্টেটের সমর্থনপুষ্ট, যা সম্রাটের নিজের এস্টেট থেকেও বড়। একলাখ ক্রেডিট। পুরোটাই এখানে। দু আঙুলের মাঝে! তোমার!”

“কিসের জন্য, স্যার? আমি একজন বণিক, অবশ্য বণিকরা দুই পথেই পা বাড়ায়।”

“কিসের জন্য? সত্যি কথা বলার জন্য। জেনারেল কিসের পিছনে ছুটছেন? তিনি কেন এই যুদ্ধ শুরু করেছেন?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলল লাথান ডেভর্স। দাড়ি আচড়াতে লাগল চিন্তিত ভঙ্গিতে।

“কিসের পিছনে ছুটছেন তিনি?” সেক্রেটারি ক্রেডিটগুলো গুনছে আর তার হাতের উপর ডেভর্সের চোখ আঠার মতো সেটে আছে। এক কথায়, এম্পায়ার।”

“হুমম্। খুবই সাধারণ। তাই হয় সবসময়। কোন পথে তিনি গ্যালাক্সির সীমান্ত থেকে এম্পায়ারের শীর্ষে পৌঁছবেন?”

“ফাউণ্ডেশন-এর,” তিক্ত স্বরে বলল ডেভর্স, “কিছু গোপন ব্যাপার আছে। তাদের কাছে কিছু বই আছে, পুরোনো-এতই পুরোনো যে বইয়ের ভাষা শুধু উচচপদস্থ কয়েকজন জানে। কিন্তু এই বিষয়গুলো ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে আচ্ছাদিত, কেউ ব্যবহার করে না। আমি চেষ্টা করেছিলাম, পরিণতি আজকের এই অবস্থা। ওখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যুদণ্ড।”

“আচ্ছা, আর গোপন বিষয়গুলো। এক লাখ ক্রেডিটের জন্য তোমাকে সব খুলে বলতে হবে।”

“ট্রান্সমিউটেশন অভ এলিম্যান্টস, সংক্ষেপে জবাব দিল ডেভর্স।

সেক্রেটারির চোখ ছোট হয়ে গেল, “আমি জানতাম নিউক্লিয়িকস এর নিয়ম অনুযায়ী ট্রান্সমিউটেশন অসম্ভব।”

“অসম্ভব, যদি নিউক্লিয়ার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রাচীন মানুষরা বোধহয় ছিল আমাদের থেকেও বুদ্ধিমান। তারা নিউক্লি থেকেও বড় এবং মৌলিক কোনো শক্তির উৎস আবিষ্কার করেছিল। যদি ফাউণ্ডেশন আমার পরামর্শমতো সেই উৎসগুলো ব্যবহার—”

ডেভর্স বুঝতে পারল তার পেটের ভেতর কেমন মোচড় দিচ্ছে। ভয়ংকর একটা জুয়া খেলা শুরু করেছে সে।

“বলে যাও।” আদেশ দিল সেক্রেটারি। কোনো সন্দেহ নেই জেনারেল এগুলো জানে। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সে কী করবে?”

দৃঢ়কণ্ঠে বলতে লাগল ডেভর্স, “ট্রান্সমিউটেশন দিয়ে সে পুরো এম্পায়ারের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ধাতব খনিজ মজুত করে রাখার আর কোনো মূল্য থাকবে না কারণ রিয়োজ অ্যালুমিনিয়ামকে টাংস্টেন এবং লোহাকে ইরিডিয়ামে রূপান্তরিত করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর দুষ্প্রাপ্যতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা শিল্পগুলো নিঃশেষ হয়ে যাবে পুরোপুরি। এখানেই নতুন পাওয়া শক্তি ব্যবহারের প্রশ্ন আসছে, রিয়োজ ধর্মের কথা চিন্তা না করেই ব্যবহার করবে।

“রিয়োজকে থামানোর কোনো উপায় নেই। ফাউণ্ডেশনকে সে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। এবং আগামী দুই বছরের ভেতর সে হবে ম্রাট।”

“তাই,” হাসল ফ্রডরিগ। “লোহা থেকে ইরিডিয়াম, তাই না? শোন তোমাকে একটা গোপন খবর দেই। তুমি কি জানো জেনারেলের সাথে যোগাযোগ করেছে ফাউণ্ডেশন।”

শরীর শক্ত হয়ে গেল ডেভর্সের।

“তুমি অবাক হয়েছ। স্বাভাবিক। সন্ধি করার জন্য ওরা তাকে প্রতি বছর এক শ টন ইরিডিয়াম দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এক শ টন লোহা থেকে রূপান্তরিত ইরিডিয়াম, নিজেদের ঘাড় বাঁচানোর জন্য ধর্মীয় নীতি ভঙ্গ করেছে। চমৎকার প্রস্তাব, কিন্তু আমাদের দুর্নীতিবাজ জেনারেল যে সেটা মানবে না তা খুবই স্বাভাবিক-কারণ সে তো একসাথে ইরিডিয়াম এবং এম্পায়ার দুটোই দখল করতে পারছে। নাও, এই অর্থ তুমি উপার্জন করেছ।

ক্রেডিট বিলগুলো সে ছুঁড়ে দিল আর চমৎকারভাবে লুফে নিল ডেভর্স।

দরজার কাছে গিয়ে থামল লর্ড ব্রুডরিগ। “একটা কথা, আমার এই লোক দুটো কথা বলতে পারে না, কানে শোনে না, বুদ্ধি নেই, শিক্ষা নেই, এমনকি সাইকিক প্রোবেও সাড়া দেয় না। কিন্তু যে-কোনো রকম মৃত্যু দণ্ড কার্যকর করতে এরা বেশ আগ্রহী। তোমাকে আমি এক লাখ ক্রেডিটে কিনেছি। ভালো ব্যবসায়ী হিসেবে থাকবে। যদি আমাদের আলোচনা রিয়োজের কাছে বল তোমার শাস্তি হবে, এবং সেটা হবে আমার পদ্ধতিতে।”

এতক্ষণে ভালোমানুষের মুখোশ খসে পড়ল ব্রুডরিগের চেহারা থেকে, মুখে ফুটে উঠল নির্দয় নিষ্ঠুরতা। এক মুহূর্তের জন্য ডেভর্সের মনে হল যে সেক্রেটারির দৃষ্টি দিয়ে স্পেস ফিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

নিঃশব্দে ফ্রডরিগের কসাইদের অনুসরণ করে সে ফিরে এল নিজের কোয়ার্টারে। ডুসেম বারের প্রশ্নের জবাবে সে তৃপ্তি সহকারে জবাব দিল, “না, অদ্ভুত ব্যাপারটা এখানেই। সেই আমাকে ঘুষ দিয়েছে।”

দুমাসের কঠিন লড়াই বেল রিয়োজের চেহারায় স্পষ্ট ছাপ ফেলেছে। গম্ভীর এবং অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে সে।

অধৈর্য সুরে ভক্ত সার্জেন্ট লিউককে বলল, “বাইরে অপেক্ষা করো, সৈনিক। আমার কথা শেষ হলে এই দুজনকে তাদের কোয়ার্টারে নিয়ে যাবে। তার আগে আমি না ডাকা পর্যন্ত কেউ যেন ভিতরে না ঢুকে, কেউ না। বুঝতে পেরেছ।”

স্যালিউট করে বেরিয়ে গেল সার্জেন্ট। রিয়োজ বিরক্তিতে গজ গজ করতে করতে ডেস্কের এলোমেলো কাগজগুলো গুছিয়ে রাখল উপরের ড্রয়ারে, তারপর বন্ধ করল খটাশ করে।

“বসুন,” অপেক্ষারত দুজনকে বলল। “আমার হাতে বেশি সময় নেই। আসলে এখানে আসাই উচিত হয়নি। কিন্তু আপনাদের দুজনের সাথে দেখা করাটা জরুরি।”

ডুসেম বারের দিকে ঘুরলেন তিনি। বার আনমনে ট্রাইমেনশনাল কিউবে অঙ্কিত হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির বলিরেখাপূর্ণ কঠোর মুখচ্ছবির উপর আঙুল বোলাচ্ছিলেন।

“প্রথম কথা, প্যাট্রিশিয়ান,” জেনারেল বললেন, “আপনার সেলডন হেরে যাচ্ছে। লড়াই ভালোই করেছে, কারণ ফাউণ্ডেশন-এর লোকগুলো মৌমাছির মতো উড়ে বেড়িয়েছে আর যুদ্ধ করেছে পাগলের মতো। প্রতিটা গ্রহ প্রবল বাধা দিয়েছে, তারপর এমনভাবে বিদ্রোহ শুরু করেছে যে দখলে রাখাই ছিল মুশকিল। সেগুলো সব সামাল দেওয়া গেছে।”

“কিন্তু এখনো তিনি পুরোপুরি হারেননি।” নরম সুরে বললেন বার।

“ফাউণ্ডেশন নিজে সবচেয়ে কম বাধা দিয়েছে। সেলডনকে যেন চূড়ান্ত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে না হয় সেজন্য অনেক রকম প্রস্তাব দিয়েছে আমাকে।”

“সেরকমই গুজব শোনা যাচ্ছে।”

“আহ্, গুজব চলে এসেছে আমার আগেই। সবচেয়ে নতুনটা শুনেছেন?”

“নতুন গুজবটা কী?”

“লর্ড ব্রুডরিগ, সম্রাটের প্রিয়পাত্র নিজে আমাকে অনুরোধ করেছেন আমার সেকেণ্ড-ইন-কমান্ড হওয়ার জন্য।”

এই প্রথম কথা বলল ডেভর্স, “নিজে অনুরোধ করেছেন, বস? কীভাবে সম্ভব? নাকি আপনি লোকটাকে পছন্দ করতে শুরু করেছেন।”

“না,” শান্ত সুরে বললেন জেনারেল। “তবে সে আমার গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করে দিয়েছে।”

“যেমন?”

“সম্রাটের কাছে রিইনফোর্সম্যান্টের আবেদন করেছে।”

ডেভর্সের উদ্ধত হাসি আরো চওড়া হল। “সে তা হলে সম্রাটের সাথে যোগাযোগ করেছে। আর আপনি, বস, রিইনফোর্সম্যান্টের জন্য অপেক্ষা করছেন, এসে পড়বে যে-কোনোদিন। ঠিক?”

“ভুল! এরই মধ্যে এসে পড়েছে। পাঁচটা শক্তিশালী যুদ্ধযান। সেই সাথে সম্রাটের ব্যক্তিগত অভিনন্দন বার্তা। আরো যুদ্ধযান আসার পথে। কী ব্যাপার, বণিক?” উপহাসের সুরে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

“কিছু না!” ডেভর্স যেন হঠাৎ বরফের মতো জমাট বেধে গেছে।

রিয়োজ ডেস্কের পেছন থেকে উঠে এসে বণিকের সামনে দাঁড়ালেন, হাত ব্লাস্ট গানের বাটের উপর।

“আমি জিজ্ঞেস করেছি, কী হয়েছে, বণিক? সংবাদটা তোমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। হঠাৎ করে নিশ্চয়ই ফাউণ্ডেশন-এর পক্ষে চলে যাওনি?”

“না।”

“হ্যাঁ-তোমার আচরণ কেমন অস্বাভাবিক।”

“তাই নাকি, বস?” কঠিনভাবে হাসল ডেভর্স, হাত মুঠো পাকালো। “ওদেরকে আমার সামনে এনে দাঁড় করান, শুইয়ে দেব সবগুলোকে।”

“সন্দেহ তো এখানেই। তুমি খুব সহজে ধরা পড়েছ। প্রথম হামলার পরেই আত্মসমর্পণ করেছ বিনা প্রশ্নে। নিজের গ্রহকে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া। ইন্টারেস্টিং, তাই না?”

“আমি বিজয়ী পক্ষে থাকতে চাই, বস। আপনিই তো বলেছেন আমি বিচক্ষণ মানুষ।”

“মানলাম!” কঠিন গলায় বললেন রিয়োজ। “আজ পর্যন্ত কোনো বণিক ধরা পড়েনি, তাদের কাছে দ্রুতগতির কোনো মহাকাশযান নেই। কোনো ট্রেডিং শিপই আমাদের লাইট ক্রুজারের হামলা ঠেকাতে পারবে না। অথচ প্রয়োজনে বণিকরা জীবন দিতে প্রস্তুত। দখলকৃত গ্রহগুলোতে গেরিলা যুদ্ধে এবং আমাদের অধীনস্থ স্পেসে এয়ার রেইডে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে বণিকদের।

“তা হলে কি তুমি একাই বিচক্ষণ মানুষ? তুমি যুদ্ধ করোনি, পালিয়েও যাওনি, বরং নিজের দেশের সাথে বেঈমানী করেছ। তুমি অন্যরকম, বিষ্ময়কর-সত্যিকথা বলতে কি সন্দেহজনক।”

নরম সুরে বলল ডেভর্স, “আপনার কথার অর্থ আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই। আমি এখানে আছি ছয়মাস এবং এই ছয়মাস ভালো ছেলে হয়ে থেকেছি।”

“এবং আমি তার প্রতিদানও দিয়েছি। তোমার মহাকাশযানের কোনো ক্ষতি হয়নি। তোমার সাথে ভালো আচরণ করেছি। কিন্তু তুমি সব কথা জানাওনি। যেমন তোমার যন্ত্রপাতিগুলোর ব্যাপারে সব জানালে অনেক উপকার হতো। যে এটমিক প্রিন্সিপল অনুযায়ী সেগুলো তৈরি সেই একই প্রিন্সিপল ফাউণ্ডেশন-এর জঘন্য কয়েকটা অস্ত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। ঠিক?”

“আমি একজন বণিক, টেকনিশিয়ান নই। জিনিসগুলো শুধু বিক্রি করি; ওগুলো তৈরি করিনা।”

“শিগগিরই জানা যাবে। সেকারণেই এসেছি। একটা পারসোনাল ফোর্স শিল্ডের জন্য তোমার মহাকাশযান অনুসন্ধান করা হবে। তোমাকে কখনো পরতে দেখা যায়নি, অথচ ফাউণ্ডেশন-এর সব সৈনিকই সেটা পরে। তুমি যে আমাকে সব কথা বলনি এটা তার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। ঠিক?”

কোনো উত্তর নেই। রিয়াজ বলে চলেছেন, “আরো প্রমাণ বের করা যাবে। সাইকিক প্রোব সাথে এনেছি। আগে ব্যর্থ হলেও গত কয়েকদিনে শত্রুদের কাছ থেকে শিখেছি অনেক কিছু।

বলার ভঙ্গি নরম হলেও কণ্ঠস্বরে যে শীতল হুমকি রয়েছে সেটা না বোঝার কোনো কারণ নেই, আর ডেভর্স ঠিক শিরদাঁড়ার মাঝখানে অস্ত্রের শক্ত খোঁচা অনুভব করল-জেনারেলের অস্ত্র, হোলস্টার থেকে কখন বের করেছে সে টের পায়নি।

শান্ত সুরে বললেন জেনারেল, “কোমরের বেল্ট আর যে যে ধাতব গহনা পরেছ। সব খুলে ফেল। ধীরে ধীরে! ঠিক আছে, আমি নিচ্ছি।”

ডেস্কের রিসিভারের আলো জ্বলে উঠল, একটা ম্যাসেজ ক্যাপসুল সুট থেকে গড়িয়ে এসে পড়ল যেখানে বার ট্রাইমেনশনাল ইম্পেরিয়াল মূর্তি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তার কাছাকাছি।

ডেস্কের পিছনে গেলেন রিয়োজ, হাতে অস্ত্র প্রস্তুত। বারকে বললেন, “আপনিও প্যাট্রিশিয়ান। আপনি অনেক সাহায্য করেছেন, আমার কোনো বিদ্বেষ নেই। তারপরেও সাইকিক প্রোবের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আপনার পরিবারের ভাগ্য নির্ধারণ করব আমি।”

এবং ম্যাসেজ ক্যাপসুল নেওয়ার জন্য রিয়োজ নিচু হতেই বার ক্রিস্টালের তৈরি ক্লীয়নের ভারি মূর্তিটা ঠাণ্ডা মাথায় নিখুঁতভাবে নামিয়ে আনলেন জেনারেলের মাথায়।

এত দ্রুত ঘটল ব্যাপারটা যে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল ডেভর্সের। যেন হঠাৎ করেই বৃদ্ধের ভেতরে একটা পিশাচ জেগে উঠেছে।

“বেরোও!” হিস হিস করে বললেন বার। “জলদি!” রিয়োজের ব্লাস্টার মাটি থেকে তুলে নিজের পোশাকের ভেতর লুকিয়ে ফেললেন তিনি।

কামড়া থেকে ওরা বেরোতেই সার্জেন্ট লিউক ঘুরে দরজার সামান্য ফাঁক দিয়ে ভেতরে দেখার চেষ্টা করল।

“পথ দেখাও, সার্জেন্ট!” সহজ গলায় বললেন বার। ডেভর্স পিছনের দরজা বন্ধ করে দিল।

সার্জেন্ট লিউক নিঃশব্দে কোয়ার্টারের পথ দেখাল, দরজার সামনে একটু থামলেও পিঠে ব্লাস্ট-গানের মাজলের খোঁচা খেয়ে সামনে বাড়তে বাধ্য হল সে। একটা কণ্ঠ তার কানে কঠিন সুরে বলল, “ট্রেড শিপের দিকে।”

এয়ারলক খোলার জন্য সামনে বাড়ল ডেভর্স, বার বললেন, “ওখানেই দাঁড়াও লিউক। তুমি ভালো মানুষ। আমরা তোমাকে মারতে চাই না।”

কিন্তু বন্দুকের মনোগ্রাম চিনতে পারল সার্জেন্ট। আতঙ্কিত স্বরে কেঁদে উঠল, “আপনারা জেনারেলকে মেরে ফেলেছেন।”

তারপর একটা তীব্র বন্য হুংকার ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল সে। ফায়ার করলেন বার। পোড়া একদলা মাংসপিণ্ড হয়ে লুটিয়ে পড়ল সার্জেন্ট।

সিগন্যাল লাইটগুলো পাগলের মতো লাফালাফি শুরু করার আগেই এবং উপরে সূক্ষ্ম জালের মতো বিছানো বিশাল আতশ কাঁচের মতো গ্যালাক্সিতে আরো অনেক কালো কালো আকৃতি উঠার আগেই মৃত গ্রহ ছেড়ে উপরে উঠল ট্রেড শিপ।

হাসিমুখে বলল ডেভর্স, “শক্ত হয়ে বসুন, বার। দেখি ওরা আমার সাথে দৌড়ে পারে কিনা।”

ওরা যে পারবে না ভালোভাবেই জানে সে।

খোলা স্পেসে বেরিয়ে আসার পর ডেভর্সের কণ্ঠ শুনে মনে হল যেন তার মন হারিয়ে গেছে অনেক দূরে। “বেশ ভালোভাবেই টোপ গিলেছে ডরিগ।”

শিগগিরই তারা পৌঁছে গেল গ্যালাক্সির নক্ষত্রবহুল অংশে।

*