ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার by আইজাক আসিমভ, chapter name প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল - ৫. যুদ্ধ শুরু

প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল - ৫. যুদ্ধ শুরু

স্যিউয়েনার রেডিয়েটিং পয়েন্ট থেকে এম্পায়ারের বাহিনী সতর্কতার সাথে পেরিফেরীর অজানা অন্ধকারে পৌঁছল। যে সীমাহীন দূরত্ব গ্যালাক্সির এই প্রান্তের নক্ষত্রগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সেই দূরত্ব পেরিয়ে তারা ছুটে চলল ফাউণ্ডেশন প্রভাবিত অঞ্চলের বাইরের সীমানার দিকে।

গত দুই শতাব্দী থেকে বিচ্ছিন্ন বিশ্বগুলো নিজেদের মাটিতে আবার অনুভব করল ইম্পেরিয়াল ওভারলর্ডদের উপস্থিতি। ভয়ানক মারণাস্ত্র দেখে তারা আত্মসমর্পণ করল বিনাশর্তে।

দখল করা প্রতিটি বিশ্বে স্থাপন করা হল গ্যারিসন। সৈনিকদের পরনে ইম্পেরিয়াল ইউনিফর্ম, কাঁধে মহাকাশযান এবং নক্ষত্রচিহ্ন। এগুলো দেখে বৃদ্ধের মনে পড়ল দাদার দাদার আমলের কথা যখন মহাবিশ্বে আসলেই শান্তি ছিল এবং এই একই চিহ্ন শাসন করত সবকিছু।

বিশাল যুদ্ধযানগুলো ফাউণ্ডেশনকে ঘিরে আরো ঘাঁটি তৈরি করার জন্য এগিয়ে চলল। কাজটা যেন কাপড়ের নিখুঁত বুনন। প্রতিটা বিশ্ব বুনটের নির্দিষ্ট স্থানে নিখুঁতভাবে বেঁধে ফেলার পর রিপোর্ট আসতে লাগলো নক্ষত্রের আলো বঞ্চিত এক রুক্ষ পাথুরে গ্রহে, যেখানে বেল রিয়োজ তার হেডকোয়ার্টার তৈরি করেছেন।

স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ডুসেম বারের দিকে ঘুরলেন তিনি, “বেশ, কী মনে হচ্ছে আপনার প্যাট্রিশিয়ান?”

“আমার? তার কি কোনো গুরুত্ব আছে? আমি বেসামরিক লোক।” দেয়াল থেকে বেরিয়ে থাকা এলোমেলো পাথরের আঁকাবাঁকা ছায়াগুলোর দিকে তিনি অস্বস্তি নিয়ে ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন। এই ছোট কামরার ভেতরের কৃত্রিম আলো এবং কৃত্রিম বাতাস নিপ্রাণ গ্রহে জীবনের একমাত্র অস্তিত্ব।

“আমার সাহায্যের বিনিময়ে,” বিরবির করে বললেন তিনি, “আপনি আমাকে স্যিউয়েনায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেবেন?”

“এখন না। এখন না।” জেনারেল প্রাচীন অ্যানাক্রন প্রিফেক্ট এর চমৎকার স্বচ্ছ বৃত্তাকার মানচিত্রের দিকে চেয়ার ঘোরালেন। “এই ঝামেলাটা শেষ হলেই আপনি ফিরে যেতে পারবেন। আমি দেখব যেন পুরোনো এস্টেট আবার ফিরে পান এবং বংশ পরম্পরায় ভোগ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করব।”

“ধন্যবাদ।” বললেন বার, কণ্ঠে তিরস্কার। “তবে আমার মনে হয় না সফল পরিসমাপ্তি হবে।”

কর্কশভাবে হাসলেন রিয়োজ। “আবার সেই আধ্যাত্মিক ভবিষ্যদ্বাণী শুরু করবেন না।” হালকাভাবে তিনি মানচিত্রের অদৃশ্য বৃত্তাকার আউটলাইনের উপর হাত বোলালেন। “রেডিয়ান প্রজেকশনের সাহায্যে মানচিত্রের অর্থ বের করতে পারেন? পারেন? বেশ, নিজেই দেখুন। সোনালি রঙের নক্ষত্রগুলো ইম্পেরিয়াল টেরিটোরি, লালরঙের নক্ষত্রগুলো ফাউণ্ডেশন-এর বশ্যতা স্বীকার করেছে, এবং গোলাপি রঙের নক্ষত্রগুলো সম্ভবত ফাউণ্ডেশন-এর অর্থনৈতিক প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত। এবার লক্ষ করুন-”

একটা গোলাকার নব চাপলেন রিয়োজ, ধীরে ধীরে মানচিত্রের সাদা কিছু অংশ গাঢ় নীল বর্ণ ধারণ করল, অনেকটা লাল আর গোলাপি অংশগুলোকে বৃত্তাকারে ঘিরে ফেলার মতো।

“নীল রঙের নক্ষত্রগুলো আমার সৈনিকেরা দখল করে নিয়েছে,” সন্তুষ্টির সুরে বললেন রিয়োজ, “এবং তারা এখনো এগিয়ে চলেছে। কোথাও কোনো প্রতিরোধ হয়নি। অসভ্যরা একেবারে নিশ্চুপ। বিশেষ করে ফাউণ্ডেশন বাহিনীর কাছ থেকে কোনো বাধা আসেনি। তারা এখনো ঘুমের মধ্যে আছে।”

“আপনি আপনার সেনাবাহিনী বেশ ছড়িয়ে দুর্বল করে ফেলেছেন, তাই না?” জিজ্ঞেস করলেন বার।

“সত্যি কথা বলতে কি, রিয়াজ বললেন, “আপাতদৃষ্টিতে মনে হলেও সেটা কিন্তু হয়নি। আমার সৈনিকরা সংখ্যায় কম কিন্তু তারা বাছাই করা। সৈনিকরা ছড়িয়ে পড়লেও কৌশলগত ফলাফল অনেক বড়। অভিজ্ঞতা না থাকলেও আপনি বুঝতে পারবেন। যেমন আমি যে অবরোধ তৈরি করেছি তার যে-কোনো অংশ থেকে যে-কোনো দিকে যে-কোনো সময় আক্রমণ করতে পারব, কিন্তু ফাউণ্ডেশন কোনোদিক থেকেই আক্রমণ করতে পারবে না। কারণ আমি সেই সুযোগ রাখিনি।

“অবরোধের এধরনের কৌশল আগেও ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষ করে দুই হাজার বছর আগে ষষ্ঠ লরিসের সামরিক অভিযানের সময়, কিন্তু নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হয়নি; কৌশল গোপন রাখা যায়নি প্রতিপক্ষের কাছ থেকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।”

“পুরোপুরি পাঠ্য বইয়ের উদাহরণ?” বললেন বার, কণ্ঠস্বর নিস্তেজ এবং পরিবর্তনশীল।

অধৈর্য হলেন রিয়োজ, “আপনার এখনো ধারণা আমার সৈনিকরা পরাজিত হবে?”

“অবশ্যই।”

“বোঝার চেষ্টা করুন, সামরিক ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা নেই, যেখানে নিচ্ছিদ্রভাবে প্রতিপক্ষকে ঘিরে ফেলার পর আক্রমণকারী পক্ষ পরাজিত হয়েছে। সম্ভব হয়েছে তখনই যখন ঘেরাওয়ের বাইরে থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী নেভি সেই অবরোধকে তছনছ করে দেয়।”

“আপনি যা বলেন।”

“তারপরেও আপনি আপনার বিশ্বাসে অটল থাকবেন?”

“হ্যাঁ।”

“থাকেন, কোনো লাভ হবে না।”

কিছুক্ষণ নীরবতা জমাট বাধতে দিলেন বার, তারপর শান্ত সুরে জিজ্ঞেস করলেন, “সম্রাটের কাছ থেকে কোনো জবাব পেয়েছেন?”

মাথার পিছনের ওয়াল কন্টেইনার থেকে একটা সিগার বের করে ধরালেন রিয়োজ, একগাল বোয়া ছেড়ে বললেন, “রিইনফোর্সমেন্ট চেয়ে পাঠানো অনুরোধের কথা বলছেন তো? এসেছে, কিন্তু শুধু ওইটুকুই। শুধু উত্তর।”

“কোনো যুদ্ধযান আসেনি?”

“একটাও না। আমি অবশ্য আশাও করিনি। সত্যি কথা বলতে কি, প্যাট্রিশিয়ান, আপনার কথায় প্রভাবিত হয়ে ওগুলো চেয়ে পাঠানো আমার উচিত হয়নি। আমাকে লজ্জায় পড়তে হয়েছে।”

“তাই?”

“নিশ্চয়ই। যুদ্ধযান এখন মহার্ঘ বস্তু। গত দুই শতাব্দীর গৃহযুদ্ধে গ্র্যাণ্ড ফ্লিটের প্রায় অর্ধেক ধ্বংস হয়ে গেছে, যেগুলো টিকে আছে সেগুলোর অবস্থাও ভালো না। বর্তমানে যেগুলো তৈরি হয় সেগুলো নিম্নমানের। আমার তো মনে হয় না আজকের গ্যালাক্সিতে এমন একজন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে যে একটা প্রথম শ্রেণীর নিউক্লিয়ার মোটর তৈরি করতে পারবে।”

“আমি জানি,” বললেন বার, দৃষ্টিতে গভীর ছায়া। “আপনি যে জানতেন সেটা অবশ্য জানতামনা। তো সম্রাট আপনাকে অতিরিক্ত যুদ্ধযান পাঠাতে পারছে না। সাইকোহিস্টোরির সাহায্যে এই ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়; সত্যি কথা বলতে কি করা হয়েছে সম্ভবত। বলতে বাধ্য হচ্ছি হ্যারি সেলডনের অদৃশ্যহাত প্রথম রাউন্ডে জিতে গেছে।”

কর্কশ সুরে উত্তর দিলেন রিয়োজ, “ আমার কাছে প্রচুর যুদ্ধযান আছে। আপনার সেলডন কিছুই জিতেনি। পরিস্থিতি খারাপ হলে আরো আনতে পারব। আমি সম্রাটকে এখনো সব কথা জানাইনি।”

“তাই? কোন কথাটা জানাননি?”

“অবশ্যই, আপনার থিওরি।” রিয়োজের চেহারায় কৌতুক। “আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যে, আপনার গল্পগুলো স্বাভাবিকভাবে সত্য হওয়ার সম্ভাবনা কম। যদি পরিস্থিতির অগ্রগতি হয়; যদি ঘটনাপ্রবাহ থেকে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, তখন, শুধুমাত্র তখনই এটাকে জীবন মরণ সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করব।

“তা ছাড়া তথ্য প্রমাণ ব্যতীত আপনার গল্প হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টিকে শুনিয়ে কোনো লাভ হবে না।”

বৃদ্ধ প্যাট্রিশিয়ান হাসলেন। “আপনি বলতে চান যে মহাবিশ্বের শেষ প্রান্তে একদল উন্মত্ত অসভ্য তার সিংহাসন দখল করার পরিকল্পনা করছে এটা তিনি মানবেন না বা বিশ্বাস করবেন না। তা হলে আপনি তার কাছ থেকে কিছুই পাবেন না।”

“হ্যাঁ, তবে একটা বিশেষ নিয়মের সুবিধা পাবো আমি।”

“যেমন?”

“আসলে এটা একটা পুরোনো ঐতিহ্য। প্রতিটা সামরিক অভিযানে সম্রাটের মনোনীত একজন প্রতিনিধি থাকেন। অর্থাৎ সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায়।”

“সত্যি! কেন?”

“প্রতিটা অভিযানে সম্রাটের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার একটা পদ্ধতি। আরেকটা উদ্দেশ্য হল জেনারেলদের বিশ্বস্ততা নিশ্চিত করা। যদিও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে খুব কমই সফল হওয়া যায়।”

“এটা আপনার কাজে অসুবিধা তৈরি করবে, জেনারেল।”

“কোনো সন্দেহ নেই।” চেহারা সামান্য লাল হল রিয়োজের। “তবে রিয়াজের হাতের রিসিভারের আলো জ্বলল, সামান্য একটা ঝাঁকুনি দিয়ে নির্দিষ্ট সুটে ঢুকল সিলিন্ডার আকৃতির কমিউনিকেশন যন্ত্র। রিয়োজ খুললেন সেটা। “চমৎকার!”

প্রশ্নবোধক ভঙ্গিতে ভুরু উঁচু করলেন বার।

“আপনি জানেন,” বললেন রিয়োজ, “বণিকদের একজনকে আমরা ধরেছি। জীবিত, তার মহাকাশযানও আটক করেছি অক্ষত অবস্থায়।”

“শুনেছি।”

“বেশ, তাকে এখানে আনা হয়েছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে হাজির করা হবে আমাদের সামনে। আপনি বসুন, প্যাট্রিশিয়ান। লোকটাকে প্রশ্ন করার সময় আপনাকে আমার দরকার। সেজন্যই আপনাকে আজকে আসতে বলেছি। কোনো কিছু আমার চোখ এড়িয়ে গেলে আপনি সেটা ধরতে পারবেন।”

দরজায় শব্দ হতেই জেনারেল গোড়ালি দিয়ে মেঝেতে শব্দ করলেন, দরজা খুলে গেল। চৌকাঠে যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে সে লম্বা, মুখে দাড়ি। পড়নে প্লাস্টিক চামড়ার তৈরি হুডঅলা জ্যাকেট। তার হাত দুটো মুক্ত। দুইপাশে দাঁড়ানো লোকদুটো যে সশস্ত্র সেটা খেয়াল করলেও মনে হল ওতে তার কিছু আসে যায় না।

স্বাভাবিক পদক্ষেপে ভিতরে ঢুকল সে। হিসাবি দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করল চারপাশ। জেনারেলের দিকে তাকিয়ে প্রথমে হাত নেড়ে তারপর মাথা খানিকটা নিচু করে সম্মান দেখালো।

“তোমার নাম?” চিবিয়ে চিবিয়ে জিজ্ঞেস করলেন জেনারেল।

“লাথান ডেভর্স”। বণিক উত্তর দিল। চওড়া, জমকালো বেল্টে আঙুল আটকে রেখেছে। “আপনিই এখানে বস?”

“ফাউণ্ডেশন-এর একজন বণিক?

“ঠিক। শুনুন, আপনি এখানের বস হলে আপনার ভাড়াটে লোকদের আমার কার্গো থেকে দূরে থাকতে বললে ভালো করবেন।”

মাথা তুললেন জেনারেল। ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে তাকালেন বন্দির দিকে। “প্রশ্নের উত্তর দাও। অন্য কিছু বলবে না।”

“ঠিক আছে। আমার আপত্তি নেই। তবে আপনার ছেলেদের একজন বেজায়গায় হাত দিয়ে নিজের বুকে দুই ফুট গর্ত তৈরি করেছে।”

দায়িত্বরত লেফটেন্যান্ট এর দিকে তাকালেন রিয়োজ।”এই লোক সত্যি কথা বলছে? তোমার রিপোের্ট ছিল, ব্র্যাঙ্ক, যে কেউ নিহত হয়নি।”

“হয়নি, স্যার।” অস্বস্তি এবং আত্মরক্ষার সুরে বলল লেফটেন্যান্ট। “অন্তত সেই সময়ে হয়নি। পরে শিপটা অনুসন্ধানের সময় কিছু সমস্যা হয়, গুজব শুরু হয় যে শিপে মেয়েমানুষ আছে। তা ছাড়া স্যার, অপরিচিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, যেগুলোকে বন্দি তার বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে। নড়াচড়া করার সময় তারই একটা বিস্ফোরিত হয়। যে সৈনিকের হাতে ওটা ছিল, সে মারা যায়।”

আবার বণিকের দিকে ফিরলেন জেনারেল। “তোমার জাহাজে নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোসিভ আছে?”

“গ্যালাক্সি, না। কেন থাকবে? ঐ বোকাটা একটা নিউক্লিয়ার পাঞ্চার হাতে নিয়ে ভুল প্রান্ত নিজের দিকে ফিরিয়ে রেখেছিল। সেটা করা ঠিক না। তার চেয়ে একটা নিউট-গান নিজের মাথার দিকে তাক করে রাখা ভালো। আমি অবশ্য ওকে থামাতে পারতাম। যদি পাঁচজন সৈনিক আমার বুকের উপর বসে না থাকত।”

“তুমি যেতে পারো।” অপেক্ষারত গার্ডকে নির্দেশ দিলেন রিয়োজ। “আটক শিপটা সিল করে দাও, যেন কেউ ঢুকতে না পারে। বস ডেভর্স।”

নির্দেশিত স্থানে বসল ডেভর্স। ইম্পেরিয়াল জেনারেলের কঠিন দৃষ্টি এবং সিউয়েনিয়ান প্যাট্রিশিয়ানের কৌতূহলী দৃষ্টির সামনে বিচলিত হল না মোটেই।

“তুমি বেশ বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, ডেভর্স।” বললেন রিয়াজ।

“ধন্যবাদ। আপনি আমার চেহারা দেখে খুশি হয়েছেন নাকি আপনি কিছু চান। আমি ভালো একজন ব্যবসায়ী।”

“একই কথা। তুমি বাধা দিয়ে আমাদের গোলাবারুদ ধ্বংস করতে পারতে সেই সাথে নিজেকে ইলেকট্রন ধুলায় পরিণত করতে পারতে। সেটা না করে তুমি ভালোমানুষের মতো ধরা দিয়েছ। সেকারণে তোমার ভালো ব্যবহার পাওনা হয়েছে।”

“ভালো ব্যবহারের জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে আছি।”

“চমৎকার। আর আমি সহযোগিতা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছি।” হাসলেন রিয়োজ। পাশে দাঁড়ানো ডুসেম বারকে নিচু স্বরে বললেন, “আশা করি ব্যাকুল’ শব্দের অর্থ আমি যা মনে করছি তাই হবে। আগে কখনো এমন অসভ্য শব্দ শুনেছেন?”

নম্র সুরে বলল ডেভর্স, “কিন্তু আপনি কি সহযোগিতা চান, বস? আর কোথায় দাঁড়িয়ে আছি সেটা আমি এখনো জানি না।” চারদিকে তাকাল সে, “এই জায়গাটা কোথায় আর উদ্দেশ্যটা কী?”

“আহ, ভুলেই গেছি। দুঃখিত।” বেশ উপভোগ করছেন রিয়োজ। “ঐ ভদ্রলোক হলেন ডুসেম বার, প্যাট্রিশিয়ান অব দ্য এম্পায়ার। আমি বেল রিয়োজ, পিয়ার অব দ্য এম্পায়ার, এবং জেনারেল অব দ্য থার্ড ক্লাস ইন দ্য আর্মড ফোর্সেস অব হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টি।”

চোয়াল ঝুলে পড়ল বণিকের। “এম্পায়ার? অর্থাৎ সেই পুরোনো এম্পায়ার যার কথা স্কুলে আমাদের শেখানো হয়েছে। হাহ! হাস্যকর! আমার সবসময় ধারণা ছিল ওটার কোনো অস্তিত্ব নেই।

“চারপাশে তাকাও। দেখো ওটার অস্তিত্ব আছে।” হাসিমুখে বললেন রিয়োজ।

লাথান ডেভর্স তার দাড়ি সিলিংএর দিকে উঁচু করল, তারপর ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “তো খেলাটা কী, বস? নাকি আমি আপনাকে জেনারেল বলব?”

“খেলাটা হচ্ছে যুদ্ধ।”

“এম্পায়ার বনাম ফাউণ্ডেশন, তাই না?”

“ঠিক।”

“কেন?”

“আমার ধারণা, তুমি জানো কেন?”

ধারালো দৃষ্টিতে তাকাল বণিক, মাথা নাড়ল।

আরো কিছুক্ষণ বিবেচনা করার সময় দিলেন রিয়োজ, তারপর নরম সুরে বললেন, “কেন, তুমি জানো সেটা, আমি নিশ্চিত।”

“বেশ গরম”, ফিসফিস করল লাথান ডেভর্স। দাঁড়িয়ে জ্যাকেট খুলল তারপর আবার বসে পা দুটো ছড়িয়ে দিল সামনে।

“বুঝতে পারছি,” আয়েশি ভঙ্গিতে বলল সে, “আপনি মনে করছেন আমি যেকোনো মুহূর্তে সামনে ঝাঁপ দিতে পারি। চাইলে যখন তখন আমি আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি। এই যে বৃদ্ধ ভদ্রলোক চুপচাপ বসে আছেন তিনি আমাকে থামাতে পারবেন না।”

“কিন্তু তুমি তা করবে না,” আত্মবিশ্বাসী সুরে বললেন রিয়োজ।

“না, করব না,” আন্তরিকভাবে একমত হল ডেভর্স। “প্রথম কথা আপনাকে খুন করলেই যুদ্ধ থামবে না। যেখান থেকে এসেছেন সেখানে আরো অনেক জেনারেল আছে।”

“নিখুঁত হিসাব।”

“তা ছাড়া আপনাকে খুন করার দুই সেকেণ্ডের ভেতর আমি ধরা পড়ব। তারপর আমাকেও হত্যা করা হবে। দ্রুত বা ধীরে ধীরে যেভাবেই হোক, হত্যা করা হবেই। কিন্তু আমি এই বয়সে মরতে চাই না।”

“আগেই বলেছি তোমার বিচার বুদ্ধি বেশ ভালো।”

“কিন্তু একটা বিষয় আমি অবশ্যই জানতে চাই, বস। আপনি বলেছেন এম্পায়ার কেন ফাউণ্ডেশন-এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে সেটা আমি জানি। আমি

জানিনা; আর অনুমান করতে আমার ভালো লাগেনা।”

“হ্যাঁ। হ্যারি সেলডনের নাম শুনেছো কখনো?”

“না। বললাম তো অনুমান করতে আমার ভালো লাগেনা।”

রিয়োজ আড়চোখে তাকালেন ডুসেম বার-এর দিকে। বার শুধু একটু হাসলেন, কিছু বললেন না।

দন্ত বিকশিত হাসি দিয়ে রিয়োজ বললেন, “আমার সাথে খেলার চেষ্টা করো না, ডেভর্স। তোমাদের ফাউণ্ডেশনে একটা প্রথা, একটা উপকথা বা একটা ইতিহাস-যাই হোক আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই- প্রচলিত আছে যে তোমরা সেকেণ্ড এম্পায়ার গড়ে তুলবে। হ্যারি সেলডনের অর্থহীন বক্তব্য এবং এম্পায়ার এর বিরুদ্ধে তোমাদের পরিকল্পনার ব্যাপারে আমি ভালোভাবেই জানি।”

“তাই?” চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল ডেভর্স। “আপনাকে এগুলো কে বলল?”

“সেটা জানার কোনো প্রয়োজন আছে?” ভয়ংকর হিমশীতল গলায় বললেন রিয়োজ। “তুমি কোনো প্রশ্ন করবে না। সেলডনের উপকথা সম্বন্ধে তুমি যা জানো আমি সেটা জানতে চাই।”

“কিন্তু এটা যদি উপকথাই হয়–”

“ডোন্ট প্লে উইথ ওয়ার্ডস, ডেভর্স।”

“আমি তা করছি না। বরং সরাসরি বলছি। আমি যা জানি আপনি তার সবই জানেন। এগুলো সবই বাজে গল্প। প্রতিটা গ্রহেই এর ডালপালা ছড়িয়ে আছে; তাদেরকে আপনি এর থেকে দূরে সরিয়ে আনতে পারবেন না। হ্যাঁ, আমি এই গল্পগুলো শুনেছি; সেলডন, সেকেণ্ড এম্পায়ার আরো অনেক কিছু। মায়েরা বাচ্চাদের এই গল্প বলে ঘুম পাড়ায়। তরুণ তরুণীরা পকেট প্রজেক্টরে সেলডন থ্রিলার নিয়ে অবসর সময় কাটায়। কিন্তু আমাদের মতো প্রাপ্তবয়স্করা এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।”

জেনারেলের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। “আসলেই কি তাই? তোমাদের টার্মিনাসে আমি গেছি। ফাউণ্ডেশনে ঘুরে বেড়িয়েছি। তোমাদের চোখে, মুখে, আচরণে প্রকৃত সত্যের প্রকাশ দেখেছি।”

“আর আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন? আমাকে, যে কিনা গত দশবছরে একনাগারে দুমাসও টার্মিনাসে থাকেনি। যদি এই উপকথাগুলোই আপনার লক্ষ্য হয়, তবে আপনি আপনার যুদ্ধ চালিয়ে যান।”

এই প্রথম মৃদু স্বরে কথা বললেন বার, “ফাউণ্ডেশন-এর বিজয়ের ব্যাপারে তুমি তা হলে বেশ আত্মবিশ্বাসী?”

তার দিকে ঘুরল বণিক। চেহারা খানিকটা লাল হয়ে গেছে, ফলে কপালের একপাশে একটা পুরোনো ক্ষতচিহ্ন দেখা গেল। “হুমম, দ্য সাইল্যান্ট পার্টনার। আমি যা বলেছি সেখান থেকে এই তথ্যটা কিভাবে বের করলেন?”

খুব হালকাভাবে বার এর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লেন রিয়োজ, এবং স্যিউয়েনিয়ান নিচু স্বরে বলতে লাগলেন, “কারণ যদি তুমি ভাবতে যে ফাউণ্ডেশন এই যুদ্ধে পরাজিত হবে এবং পরাধীনতার তিক্ত স্বাদ ভোগ করবে সেটা তোমার চেহারায় পরিষ্কার হয়ে উঠত, আমি জানি, আমার গ্রহ একসময় এই কষ্ট লোগ করেছে, এখনো করছে।”

দাড়িতে হাত বোলালো লাথান ডেভর্স, পালাক্রমে প্রতিপক্ষ দুজনের দিকে তাকাচ্ছে, সামান্য একটু হাসল। “ও কি সবসময় এভাবেই কথা বলে, বস? শুনুন, একটু গুরুত্ব দিয়ে বলল, “কিসের পরাজয়? আমি অনেক যুদ্ধ দেখেছি, অনেক পরাজয় দেখেছি। বিজয়ী পক্ষ দায়িত্ব নিলে কী হবে? কে মাথা ঘামায়? আমি? আমার মতো লোক?” উপহাসের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল সে।

“শুনুন,” ডেভর্স জোর দিয়ে এবং আন্তরিক ভঙ্গিতে কথা বলে চলেছে, “সাধারণত পাঁচ-ছয়জন চর্বিওয়ালা তোক একটা গ্রহ চালায়। মাথা ব্যথা ওদেরই হবে, আমি আমার মনের শান্তি নষ্ট করতে চাইনা। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে দেখুন । তাদের কিছু মারা যাবে, বাকিদের কয়েকদিন অতিরিক্ত করের বোঝা বহন করতে হবে। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে আপনা আপনিই। পরিস্থিতি একই রকম হবে, শুধু পুরোনোদের বদলে দায়িত্ব নেবে নতুন পাঁচ-ছয়জন।”

রাগে ডুসেম বারের নাকের পাটা ফুলে উঠল, কেঁপে উঠল ডান হাতের বয়স্ক মাংসপেশি, কিন্তু তিনি কিছুই বললেন না।

ডেভর্স তাকিয়ে ছিল সেদিকে, তার চোখ এড়ায়নি কিছুই। সে বলল, “দেখুন বাণিজ্যের জন্য আমি সারাটা জীবন মহাকাশে কাটিয়েছি। পেটমোটা পরিচালকগুলো ওখানে বসে বসে আমার প্রতি মিনিটের আয়ের উপর ভাগ বসাচ্ছে।” বুড়ো আঙুল দিয়ে সে পিছন দিকে দেখাল। “আমার মতো আরো অনেকেই আছে। ধরা যাক আপনি ফাউণ্ডেশন চালানোর দায়িত্ব পেলেন। আমাদের প্রয়োজন হবে আপনার। পরিচালকদের চেয়ে বেশিই প্রয়োজন হবে-কারণ এই অঞ্চল আপনারা ভালোভাবে চেনেন না, আর আমরাই আপনাদের এনে দিতে পারব নগদ নারায়ণ। এম্পায়ারের সাথে আমরা আরো ভালো চুক্তি করতে পারব। আমি একজন খাঁটি বণিক; লাভের পাল্লা যেদিকে ভারি আমি সেদিকেই থাকব।”

নীরবতা ঝুলে থাকল একমিনিট। তারপর একটা সিলিন্ডার গড়িয়ে স্লটে ঢুকল। হাতে নিয়ে মেসেজ পড়লেন জেনারেল।

“প্রতিটা যুদ্ধযান পৌঁছে গেছে নির্দিষ্ট স্থানে। নির্দেশের অপেক্ষায় আছে।”

হাত বাড়িয়ে টুপি তুলে নিলেন তিনি। কাঁধের উপর সেটা বাঁধতে বাঁধতে বার এর কানে ফিস ফিস করে বললেন, “এই লোকের দায়িত্ব আপনার হাতে দিয়ে গেলাম। আমি ফলাফল চাই। মনে রাখবেন এটা যুদ্ধ এবং কোনো রকম ব্যর্থতা ক্ষমা করা হবে না।” দুজনকে স্যালিউট করে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকল লাথান ডেভর্স। “বেশ, একটা কিছু ওকে জায়গামতো আঘাত করেছে। কী ঘটছে?”

“যুদ্ধ, অবশ্যই,” গম্ভীর গলায় বললেন বার। “ফাউণ্ডেশন তাদের প্রথম শক্তি পরীক্ষায় নামতে যাচ্ছে। তুমি চলো আমার সাথে।”

কামরার ভেতরে সশস্ত্র সৈনিক। তাদের আচরণ শ্রদ্ধাপূর্ণ হলেও চেহারা কঠোর। বৃদ্ধ স্যিউয়েনিয়ান প্যাট্রিআর্ককে অনুসরণ করে বেড়িয়ে এল ডেভর্স।

নতুন যে কামরায় ঢুকল সেটা আরো ছোট এবং খালি। শুধু দুটো বিছানা, একটা ভিজি স্ক্রিন আর গোসল করার স্যানিটারি সুবিধা। সৈনিকরা মার্চ করে বেরিয়ে গেল, দরজা বন্ধ হয়ে গেল দড়াম করে।”

“হুমম?” চারপাশে তাকিয়ে অবজ্ঞার সাথে বলল ডেভর্স। “মনে হচ্ছে স্থায়ী।”

“ঠিক তাই।” সংক্ষিপ্ত জবাব দিলেন বার, তারপর পিছন ফিরলেন।

বিরক্ত সুরে ডেভর্স বলল, “আপনার খেলাটা কী, ডক?”

“আমার কোনো খেলা নেই। তোমার দায়িত্ব এখন আমার ব্যাস, আর কিছু না।”

বণিক উঠে দাঁড়িয়ে অনড় প্যাট্রিশিয়ানের দিকে এগিয়ে গেল, “হ্যাঁ? কিন্তু সৈনিকদের অস্ত্রগুলো আমার দিকে যেভাবে তাক করা ছিল, আপনার দিকেও সেভাবে তাক করা ছিল। আসলে আপনারা যুদ্ধ শান্তি এগুলো নিয়ে আমি যা বলেছি তা শুনে মর্মাহত হয়েছেন।

জবাবের প্রত্যাশায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল সে, “ঠিক আছে, আমি একটা প্রশ্ন করছি। আপনার দেশেও একবার আগ্রাসন চালানো হয়েছিল। কারা করেছিল? আউটার নেবুলা থেকে আগত কমেট পিত্তপিল?”

মাথা তুললেন বার। “এম্পায়ার।”

“তাই? আপনি এখানে কী করছেন তা হলে?”

বার কিছু বললেন না।

ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল বণিক। ডান হাত থেকে একটা ব্রেসলেট খুলে বাড়িয়ে ধরল। “এটা দেখে আপনার কি মনে হয়?” ঠিক একই রকম আরেকটা তার বা হাতেও আছে।

গহনাটা হাতে নিলেন বার। বণিকের নির্দেশ শুনে ধীরে ধীরে হাতে জড়ালেন। দ্রুত একটা অদ্ভুত শিহরন খেলে গেল তার কব্জিতে।

ডেভর্সের সুর পাল্টে গেল তৎক্ষণাৎ।”ঠিক আছে, ড, চালু হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলবেন। কামড়ায় আড়িপাতার ব্যবস্থা থাকলে ওরা কিছুই শুনতে পারবে না। ওটা একটা ফিল্ড ডিজটার; জেনুইন ম্যালো ডিজাইন। এখান থেকে শুরু করে আউটার রিম পর্যন্ত যে-কোনো গ্রহে পঁচিশ ক্রেডিটে বিক্রি হয়। আপনাকে বিনা পয়সায় দিলাম। কথা বলার সময় ঠোঁট নাড়বেন না, স্বাভাবিক থাকবেন। কৌশলটা রপ্ত করতে হবে আপনাকে।”

হঠাৎ ক্লান্ত বোধ করলেন ডুসেম বার। বণিকের দৃষ্টি কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সংকুচিত হয়ে পড়লেন তিনি। “কী চাও তুমি?” শব্দগুলো যেন তার অনড় ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বিরতিহীন ভাবে বেরোল।

“বললামই তো। আমরা যাকে দেশপ্রেমিক বলি, আপনাকে ঠিক তাই মনে হয়। এম্পায়ার আপনার গ্রহে অত্যাচার চালায়, অথচ আপনি এম্পায়ারের সাদা চুল জেনারেলের সাথে খেলছেন। ঠিক বুঝতে পারলাম না।”

“আমার অংশ আমি শেষ করেছি,” বার বললেন। “একজন অত্যাচারী ইম্পেরিয়াল ভাইসরয়ের মৃত্যুর কারণ আমি।”

“তাই? সাম্প্রতিক সময়ে?”

“চল্লিশ বছর আগে।”

“চল্লিশ–বছর–আগে!” যেন বণিকের কাছে প্রতিটা শব্দের আলাদা অর্থ আছে। “মনে রাখার জন্য অনেক দীর্ঘ সময়। জেনারেলের ইউনিফর্ম পড়া ওই বেয়ারা তরুণ জানে এটা?”

মাথা নাড়লেন বার।

ডেভর্সের চোখে গভীর চিন্তার ছাপ। “আপনি চান এম্পায়ার জিতে যাক?”

প্রচণ্ড রাগে বিস্ফোরিত হলেন বৃদ্ধ স্যিউয়েনিয়ান প্যাট্রিশিয়ান।”এম্পায়ার এবং তার সবকিছু মহাজাগতিক আবর্জনায় ডুবে মরুক। প্রত্যেক সিউয়েনিয়ানের দৈনন্দিন প্রার্থনা এটা। এক সময় আমার ভাই ছিল, বোন ছিল, বাবা ছিল। কিন্তু এখন আমার ছেলেমেয়ে আছে, নাতি-নাতনী আছে। জেনারেল জানে কোথায় তাদের খুঁজতে হবে।”

অপেক্ষা করছে ডেভর্স।

নিচু সুরে বলে চললেন বার, “কিন্তু সেটা আমাকে থামাতে পারবে না, ঝুঁকি নেব। ওরা জানে কীভাবে মরতে হয়।”

বণিক নরম সুরে বলল, “আপনি একজন ভাইসরয়কে হত্যা করেছিলেন, হাহ? কিছু কিছু ব্যাপার আমার মনে পড়ছে। আমাদের একজন মেয়র ছিল, নাম হোবার ম্যালো। তিনি স্যিউয়েনায় গিয়েছিলেন। ওটাই আপনার গ্রহ তাই না? ওখানে বার নামে একজন লোকের সাথে দেখা করেন তিনি।”

কঠিন সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন ডুসেম বার। “তুমি এব্যাপারে কী জানো?”

“ফাউণ্ডেশন-এর প্রতিটা বণিক যা জানে আমিও ঠিক তাই জানি। আপনি একটা বুড়ো শেয়াল। আপনি এম্পায়ারকে ঘৃণা করেন আর তারাও যে আপনার দিকে অস্ত্র ধরে রাখবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আবার আমি আপনার যোগসাজশে কিছু করার চেষ্টা করলে, জেনারেল খুশি হবে না। কোনো সম্ভাবনা নেই, ডক্।

“কিন্তু আমি আপনাকে প্রমাণ করার সুযোগ দিতে চাই যে আপনি ওনাম বারের সন্তান-তার ষষ্ঠ পুত্র এবং সবচেয়ে তরুণ যে গণহত্যার হাত থেকে বেঁচে যায়।”

দেয়ালের তাক থেকে ধাতব বাক্সটা নামানোর সময় ডুসেম বারের হাত কাঁপতে লাগল। ধাতব বস্তুটা বণিকের হাতে দেয়ার সময় শব্দ হল রিনঝিন।

“এটা দেখো।” বললেন তিনি।

ডেভর্স তাকিয়ে আছে। ঠিক মাঝখানের সামান্য স্ফীত অংশটুকু চোখের কাছে নিয়ে দেখল সে।, “ম্যালোর মনোগ্রাম, নয়তো আমি একটা স্পেস-স্ট্রাক রকি।

এবং ডিজাইনটা পঞ্চাশ বছরের পুরোনো।”

চোখ তুলে হাসল সে।

“হাত মেলান, ডক্। একটা মানুষের সমান নিউক্লিয়ার শিল্ড- এই প্রমাণই আমার দরকার ছিল।” বিশাল থাবা বাড়িয়ে দিল সে।