প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল - ৬. দ্য ফেভারিট
ক্ষুদ্র মহাকাশযান দুটো গভীর শূন্য থেকে আবির্ভূত হয়ে অকস্মাৎ রণতরীবহরের মাঝ দিয়ে ছুটে চলল তীব্র গতিতে। এনার্জির সামান্য সূরণ ছাড়াই সেগুলো একে বেঁকে ছুটে চলল যুদ্ধযান বেস্টিত অঞ্চলের মাঝ দিয়ে তারপর বিস্ফোরিত হল, আর ইম্পেরিয়াল ওয়াগনগুলো সেদিকে ঘুরল ভারবাহী পশুর মতো। ছোট যানগুলো যেখানে এটমিক ডিজইন্টিগ্রেশনে পরিণত হয়েছে সেখানে ক্ষণিকের জন্য দেখা গেলো নিঃশব্দ আলোর ঝলক, তারপর সব আগের মতো।
বিরাটাকৃতির যুদ্ধযানগুলো অনুসন্ধান করল কিছুক্ষণ, তারপর ফিরে গেল তাদের মূল কাজে এবং গ্রহের পর গ্রহ ঘিরে সুবিশাল অবরোধের জাল তৈরির কাজ এগিয়ে চলল সুচারুরূপে।
ব্রুডরিগের পরনে রাজকীয় ইউনিফর্ম; নিখুঁত সেলাই এবং নিখুঁতভাবে পরিধান করা। সাময়িক ইম্পেরিয়াল হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয়েছে যেখানে সেই ওয়ানডা গ্রহের বাগানে অলস পায়ে হাঁটছে সে; চেহারায় গাম্ভীর্য।
বেল রিয়োজ হাটছেন পাশাপাশি। তার ফিল্ড ইউনিফর্ম এর কলার এর কাছে বোতাম খোলা, ধূসর কালো রংটা যেন শোকবার্তা বহন করছে।
সুগন্ধি উদ্ভিদের পাতায় ছাওয়া একটা কালো মসৃণ বেঞ্চ দেখালেন রিয়োজ। “ওটা দেখেছেন, স্যার? ইম্পেরিয়াম-এর একটা প্রাচীন নিদর্শন। সুসজ্জিত বেঞ্চ, প্রেমিক প্রেমিকার জন্য তৈরি করা হত, টেকসই, মজবুত, এখনো ব্যবহারযোগ্য, অথচ রাজপ্রাসাদ, কারখানাগুলো কত আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে।”
তিনি বসলেন কিন্তু দ্বিতীয় ক্লীয়ন এর প্রিভি সেক্রেটারি দাঁড়িয়ে থাকল কাঠের পুতুলের মতো। হাতের লাঠি দিয়ে কিছু পাতা সরাল সে।
পায়ের উপর পা তুলে বসলেন রিয়োজ। সিগারেট বের করে নিজে একটা নিলেন অতিথিকে একটা দিলেন। “একমাত্র হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির কাছ থেকেই এরকম বিচক্ষণতা আশা করা যায় যে তিনি আপনার মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে পাঠিয়েছেন। এর থেকেই প্রমাণ হয় যে আমি ছোট একটা সামরিক অভিযান শুরু করে আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমস্যা তৈরি করিনি। নিশ্চিন্ত বোধ করছি।
“সম্রাট সবকিছুর উপর সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন, যান্ত্রিক সুরে বলল ব্রুডরিগ। “এই অভিযানকে আমরা খাটো করে দেখিনি; তারপরেও মনে হয় যেন বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই শত্রুদের ছোট ছোট যুদ্ধযানগুলো তেমন কোনো বাধা দিতে পারবে না যা ঠেকানোর জন্য একটা জটিল অবরোধ তৈরি করতে হবে।”
রাগ হল রিয়োজের, কিন্তু নিজেকে সামলালেন তিনি, “আমার সৈনিকদের জীবনের উপর ঝুঁকি নিতে পারি না যারা সংখ্যায় কম বা দ্রুত আক্রমণ করে কোনো যুদ্ধযান খোয়ানোর ঝুঁকি নিতে পারি না, কারণ তার বদলে নতুন যুদ্ধযান আমি পাবনা। এই অবরোধ আসল আক্রমণের সময় আমার অর্ধেক কাজ কমিয়ে দেবে। সামরিক গুরুত্ব আমি গতকালকেই ব্যাখ্যা করে বলেছি।”
“বেশ, বেশ, আমি সামরিক লোক নই। সে ক্ষেত্রে আপনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে আপাতদৃষ্টিতে যা মনে হচ্ছে সঠিক, বাস্তবক্ষেত্রেও সেটা ভুল নয়। অথচ আপনার সতর্কতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দ্বিতীয়বার যোগাযোগের সময় আপনি রি ইনফোর্সমেন্ট চেয়েছেন। চেয়েছেন দুর্বল, অনগ্রসর শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, যাদের ব্যাপারে সেই সময়ে আপনি বিন্দুবিসর্গও জানতেন না। এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ফোর্স চাওয়া অদক্ষতা বা আরো খারাপ কিছুর আভাস দেয়, কর্মজীবনের পূর্ববর্তী ঘটনা থেকে কি আপনি আপনার ধৃষ্টতা এবং অতি কল্পনার প্রমাণ পাননি?”
“ধন্যবাদ,” ঠাণ্ডা সুরে বললেন জেনারেল। কিন্তু আমি আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ধৃষ্টতা এবং ‘অন্ধত্ব দুটোর মাঝে অনেক পার্থক্য। নিশ্চিত হয়ে জুয়া খেলা যাবে তখনই যখন শত্রুপক্ষের সম্বন্ধে আপনার স্পষ্ট ধারণা থাকবে, অন্তত ঝুঁকির পরিমাণ হিসাব করে নিতে পারবেন; কিন্তু সম্পূর্ণ অচেনা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাওয়াটাই ধৃষ্টতা। আপনি বরং প্রশ্ন করতে পারেন একটা লোক সারাদিনের ঝুট ঝামেলা নিরাপদে শেষ করে কেন রাতে ঘুমাতে যায়?”
হাত নেড়ে কথাগুলো উড়িয়ে দিল ব্রুডরিগ। “নাটকীয়, কিন্তু সন্তোষজনক নয়। আপনি নিজে এই অনগ্রসর প্রদেশগুলোয় আছেন অনেকদিন। তা ছাড়া শত্রুদের একজনকে আপনি বন্দি করেছেন, একজন বণিক। কাজেই অজানা কিছু তো থাকার কথা নয়।”
“না? বিনীতভাবে বলছি, একটু বোঝার চেষ্টা করুন। যে গ্রহ দুই শতাব্দী বিচ্ছিন্নভাবে অগ্রসর হয়েছে, মাত্র একমাস পর্যবেক্ষণ করে সেখানে আক্রমণ করা ঠিক বুদ্ধিমানের কাজ না। আমি সাবইথারিক ট্রাইমেনশনাল থ্রিলারের সুদর্শন, সুঠামদেহী নায়ক নই। একজন বন্দি এবং এমন একটা গ্রহের বাসিন্দা যে গ্রহের সাথে শত্রু পক্ষের কোনো প্রত্যক্ষ্য যোগাযোগ পাওয়া যায়নি, তারা দুজনে শত্রুপক্ষের ভেতরের সব গোপন খবর আমাকে দিতে পারবে না।”
“আপনি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন?”
“অবশ্যই।”
“তো?”
“খুব বেশি লাভ হয়নি। ওর মহাকাশযান অনেক ছোট, গোণার মধ্যেই পড়ে না, যে সব জিনিস বিক্রি করে সেগুলোকে খেলনা বলাই ভালো। কয়েকটা জিনিস আমি সম্রাটের কাছে পাঠাবো বলে আলাদা করে রেখেছি। সমস্যা হচ্ছে মহাকাশযান নিয়ে। ওটা কীভাবে চলে আমি বুঝতে পারছি না, আমি তো আর টেক-ম্যান নই।”
“কিন্তু আপনার কাছে সে ধরনের লোক আছে,” স্মরণ করিয়ে দিল ব্রুডরিগ।
“আমিও সে বিষয়ে সচেতন,” কিছুটা তিক্ত স্বরে জবাব দিলেন জেনারেল। “কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বোকাগুলোর অনেক সময় লাগবে। ওই মহাকাশযানের অদ্ভুত নিউক্লিয়ার ফিল্ড সার্কিট বুঝতে পারে এমন বিশেষজ্ঞের খোঁজে সংবাদ পাঠিয়েছি। কোনো উত্তর পাইনি।”
“এ ধরনের লোক সহজে হাতছাড়া করা যায় না, জেনারেল। আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন এই বিশাল প্রদেশে নিশ্চয়ই এমন একজনকে পাওয়া যাবে যে নিউক্লিয়িক বুঝে।”
“সেরকম লোক থাকলে তো কবেই তাকে দিয়ে আমার দুটো ছোট ফ্লিটের মোটর ঠিক করিয়ে নিতে পারতাম। দুটো যুদ্ধযান পর্যাপ্ত পাওয়ার সাপ্লাইয়ের অভাবে বড় কোনো লড়াইয়ে অংশ নিতে পারবে না। আমার ফোর্সের এক পঞ্চমাংশ ফ্রন্ট লাইনের পিছনে থেকে অতি সাধারণ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।”
অস্থিরভাবে হাত নাড়ল সেক্রেটারি। “সমস্যাটা শুধু আপনার একার না, জেনারেল। সম্রাট নিজেও একই সমস্যায় ভুগছেন।”
জেনারেল হাতের দোমড়ানো না ধরানো সিগারেটটা ফেলে দিয়ে নতুন আরেকটা বের করে ধরালেন। একজন প্রথম শ্রেণীর টেক মেন না থাকাটা এই মুহূর্তে কোননা সমস্যা না। শুধু যদি আমার সাইকিক পোবটা ঠিক থাকত তা হলে বন্দির কাছ থেকে আরো অনেক কথা বের করে আনা যেত।”
সেক্রেটারির একটা ভুরু উঁচু হল, “আপনার কাছে পোব আছে?”
“পুরোনো একটা। একেবারে জরাজীর্ণ, ঠিক প্রয়োজনের সময়ই কাজ করে না। বন্দি যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন এটা ব্যবহার করে কোনো লাভ হয়নি। আমার নিজের একজন সৈনিকের উপর প্রয়োগ করে ভালো ফলাফল পেয়েছি। কিন্তু টেক-ম্যানরা কেউই বলতে পারছেনা এটা বন্দির উপর কাজ করছে না কেন। ডুসেম বার কোনো মেকানিক না, একজন তাত্ত্বিক, তার মতে যেহেতু বন্দি একটা ভিন্ন পরিবেশ এবং নিউরাল স্টিমুলির ভেতর বেড়ে উঠেছে, তাই প্রোব কাজ করছে না। তবে ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে ভেবেই তাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি।”
লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়াল ফ্রডরিগ। “আমি দেখব রাজধানীতে কোনো বিশেষজ্ঞ পাওয়া যায় কিনা। অন্য লোকটা, স্যিউয়েনিয়ানের কথা কিছু বলুন। অনেক শক্রকে আপনি নিজের কাছে থাকতে দিচ্ছেন।”
“শত্রুপক্ষকে সে চেনে। তাকেও ভবিষ্যতের জন্য হাতের কাছে রেখেছি।”
“কিন্তু সে সিউয়েনিয়ান এবং ভয়ংকর এক বিদ্রোহীর সন্তান।” ‘সে বৃদ্ধ এবং ক্ষমতাহীন। এ ছাড়া তার পরিবারকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে।”
“আচ্ছা। তথাপি এই বণিকের সাথে আমার নিজের কথা বলা উচিত।”
“অবশ্যই।”
“একা,” ঠাণ্ডা সুরে বলল সেক্রেটারি।
“অবশ্যই,” নরম সুরে বললেন জেনারেল। “সম্রাটের অনুগত হিসেবে তার ব্যক্তিগত প্রতিনিধিকে আমি আমার ঊর্ধ্বতন হিসেবে বিবেচনা করি। যাই হোক,বন্দিকে যেহেতু পার্মানেন্ট বেস এ রাখা হয়েছে সেহেতু একটা ইন্টারেস্টিং মুহূর্তে ফ্রন্ট এড়িয়া ত্যাগ করতে হবে আপনাকে।”
“তাই? ইন্টারেস্টিং কেন?”
“ইন্টারেস্টিং কারণ অবরোধ তৈরির কাজ শেষ হবে আজকে। ইন্টারেস্টিং কারণ ঠিক এক সপ্তাহের ভেতর টুয়েন্টিথ ফ্লিট অব দ্য বর্ডার শত্রুপক্ষের কেন্দ্রস্থলের দিকে অগ্রসর হবে।” মুচকি হেসে চলে গেলেন রিয়োজ।
হালকা অপমানিত বোধ করল ব্রুডরিগ।
*