অমাবস্যার রাত Omaboswar Raat by হেমেন্দ্রকুমার রায় Hemendra Kumar Roy, chapter name এগারো - এই কি ভুলু-ডাকাত?

এগারো - এই কি ভুলু-ডাকাত?

চন্দ্ৰবাবু যাচ্ছেন মোহনলালকে গ্রেপ্তার করতে! কেন?

থানার ভিতরে গিয়ে এখন ভিজে কাপড়-চোপড়গুলো ছেড়ে কুমারের কিঞ্চিৎ বিশ্রাম নেওয়া উচিত। কিন্তু চন্দ্রবাবুর কথা শুনে কুমার বিশ্রামের কথা একেবারে ভুলে গেল; তাড়াতাড়ি চন্দ্ৰবাবুর পিছনে ছুটে গিয়ে কুমার জিজ্ঞাসা করলে, মোহনলালবাবু কি করেছেন? আপনি তাকে গ্রেপ্তার করবেন কেন?

চন্দ্ৰবাবু বললেন, তুমি তো জানো কুমার, মোহনলালের ওপরে গোড়া থেকেই আমার সন্দেহ আছে। কে সে, কোথাকার লোক, এত বেড়াবার জায়গা থাকতে মানসপুরেই বা তার বেড়াতে আসবার শখ হল কেন, এ-সব কিছুই আন্দাজ করবার উপায় নেই। তার সবই যেন রহস্যময়। আমার গুপ্তচর দেখেছে, সে প্রায়ই নিশুতি রাতে বাসা থেকে বেরিয়ে জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে কোথায় অদৃশ্য হয়ে যায়। ভেবে দেখ, মানসপুরে সন্ধে হলে যখন সবাই দরজায় খিল এঁটে ভয়ে কাঁপতে থাকে, মোহনলাল তখন সুন্দরবনের ঝোপে ঝোপে ঘুরে বেড়ায়! তাই তো পটলবাবু সন্দেহ করেন যে, মোহনলাল হচ্ছে ভুলু-ডাকাতদেরই দলের লোক।”

কুমার বললে, কিন্তু এ-সব তো খালি সন্দেহের কথা! মোহনলালবাবুকে গ্রেপ্তার করতে পারেন, এমন কোনো প্রমাণ তো আপনি পান নি!

--এতদিন তা পাই নি বলেই গ্রেপ্তার করিনি, তবে, মোহনলাল যে সাংঘাতিক লোক এবারে সে-প্রমাণ আমি পেয়েছি।

--প্ৰমাণ? কি প্রমাণ ?

চন্দ্রবাবু বললেন, আমার গুপ্তচর এসে কিছুদিন আগে খবর দিয়ে গিয়েছিল যে, মোহনলালকে সে একটা রিভলভার সাফ করতে দেখেছে। জানো তো, রিভলভার ব্যবহার করলে লাইসেন্স নিতে হয়? আমি কলকাতায় তার করে জেনেছি যে, মোহনলালের নামে কোনো রিভলভারের লাইসেন্স নেই। এ একটা কত-বড়ো অপরাধ, তা কি বুঝতে পারছি কুমার? লাইসেন্স নেই, মোহনলাল তবু রিভলভার ব্যবহার করছে! বিপ্লববাদী কি ডাকাত ছাড়া এমন কাজ আর কেউ করে না। আপাতত এই অপরাধেই আমি মোহনলালকে গ্রেপ্তার করতে যাচ্ছি।

কুমার অবাক হয়ে ভাবতে লাগল, তবে কি মোহনলাল সত্যি সত্যিই দোষী? সেকি ডাকাত? মানুষ খুন করাই কি তার ব্যবসা? কিন্তু তা হলে অমাবস্যার রাতের রহস্য আবিষ্কার করবার জন্যে তার এত বেশি আগ্রহ কেন? আর মোহনলাল যদি ডাকাতদেরই কেউ হয়, তবে পটলবাবুর ভাঙা বাড়ির ভিতরে গিয়ে ডাকাতদের দেখে ভয়ে পালিয়ে এল কেন? এ-সব কি ছলনা? তার চোখে ধুলো দেবার চেষ্টা?

এমনি সব কথা ভাবতে ভাবতে চন্দ্ৰবাবু ও পাহারাওয়ালাদের সঙ্গে সঙ্গে কুমার এগিয়ে চলল এবং ক্রমে অশ্বখ-বট ও তাল-নারিকেলের ছায়া-খেলানো আঁকাবাঁকা মেটে পথ দিয়ে কুমার মোহনলালের বাসার সুমুখে গিয়ে পড়ল।

খানিকটা খোলা জমি। মাঝখানে একখানা ছোটো তেতলা বাড়ি। ডান পাশে মস্ত একটা বাঁশঝাড় অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে এবং বাম পাশ দিয়ে বর্ষায়, কাজলা নদীর ঘোলা জল নাচতে নাচতে ছুটে যাচ্ছে।

চন্দ্রবাবু ও কুমার বাড়ির সদর দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। চন্দ্রবাবু দুজন পাহারাওয়ালাকে ডেকে বললেন, বাড়ির পেছনে একটা খিড়কির দরজা আছে। তোমরা সেই দরজায় গিয়ে পাহারা দাও।

পাহারাওয়ালারা তাঁর হুকুম তামিল করতে ছুটল। চন্দ্রবাবু দরজার কড়া নাড়তে লাগলেন কিন্তু কোনোই সাড়া পাওয়া গেল না।

চন্দ্ৰবাবু কড়া নাড়তে নাড়তে এবারে চিৎকার শুরু করলেন, ‘মোহনলালবাবু, ও মোহনলালবাবু!’ সাড়াশব্দ কিছুই নেই। আরো কিছুক্ষণ কড়া নেড়ে ও চিৎকার করে চন্দ্ৰবাবু শেষটা খাপ্পা হয়ে বললেন, ‘মোহনলালবাবু এ ভালো হচ্ছে না। কিন্তু! এইবারে আমরা দরজাটা ভেঙে ফেলব!’

এতক্ষণে দরজাটা খুলে গেল। মস্ত-বড়ো একমুখ পাকা দাড়িগোঁফ নিয়ে একটা খোট্টাচাকর দরজার উপরে এসে দাঁড়াল। ভাঙা ভাঙা বাংলায় জিজ্ঞাসা করলে, কাকে খোঁজা হচ্ছে ?

চন্দ্ৰবাবু বললেন, ‘মোহনলালবাবু কোথায়?

সে জানালে, বাবু তেতলার ছাদের উপর আছেন।

তাকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে চারজন পাহারাওয়ালার সঙ্গে চন্দ্ৰবাবু বেগে বাড়ির ভিতর গিয়ে ঢুকলেন, কুমারও পিছনে পিছনে গেল।

সামনেই সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে সকলে দ্রুতপদে একেবারে তেতলার ছাদে গিয়ে উঠল। তেতলার ছাদের উপরে একটা চিলে ছাদ। মোহনলাল পরম নিশ্চিন্ত মুখে সেই ছাদের ধারে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।

চন্দ্ৰবাবু বললেন, চেঁচিয়ে চেচিয়ে আমার গলা ভেঙে গেল, তবু মশাইয়ের সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না কেন?

মোহনলাল গভীরভাবে শান্ত স্বরে বললে, আমি যে গান গাইছিলুম! গান গাইতে গাইতে সাড়া দেব কেমন করে?

চন্দ্ৰবাবু চটে-মটে বললেন, আবার ঠাট্টা হচ্ছে? এখন লক্ষ্মীছেলের মতো সুড়সুড়িকরে ওখান থেকে নেমে এস দেখি, তারপর দেখা যাবে, তুমি কেমন গান গাইতে পার।

মোহনলাল একগাল হেসে বললে, আমাকে এত আদর করে নিচে নামতে বলছেন কেন চন্দ্ৰবাবু?

চন্দ্ৰবাবু বললেন, তোমাকে দিল্লীর লাড়ু খাওয়াব কি না, তাই এত সাধাসাধি করছি।

মোহনলাল খুব ফুর্তির সঙ্গে দুইহাতে তুড়ি দিয়ে ঘন ঘন মাথা নাড়তে নাড়তে গান ধরে দিলে--

 

লাড্ডু যদি এনে থাকে, গিয়ে দাদা দিল্পী

ঢেকেঢুকে রেখো, যেন খায় নাকো বিল্লী!

কিবা তার তুল্য ?

শুনে মন ভুললো!

খেলে যেন বোলো নাকো-কেন সব গিললি?’

 

চন্দ্রবাবু রেগে টং হয়ে বললেন, আবার আমার সঙ্গে মস্করা ? দাঁড়াও, দেখাচ্ছি তোমায় মজাটা!”

মোহনলাল তেমনি হাসিমুখে বললে, মজা দেখবেন? দেখান না চন্দ্ৰবাবু! আমি মজা দেখতে ভারি ভালোবাসি।

—হাঁ, দু-হাতে যখন লোহারবালা পরবে, মজাটা তখন ভালো করেই টের পাবে বাছাধন!

বিস্মিত স্বরে মোহনলাল বললে, লোহার রালা ? সে কি দাদা? আপনাদের দেশে সোনার বালা কেউ পরে না ?

চন্দ্ৰবাবু হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলেন, ফের ঠাট্টা ? তবে রে পাজি! তবে রে ডাকু! চৌকিদার। যাও, চিলের ছাদে উঠে ও-বদমাইসটাকে কান ধরে টেনে নামিয়ে নিয়ে এস তো।

পাহারাওয়ালারা অগ্রসর হল, কিন্তু মোহনলাল একটুও দমল না! হো হো করে হেসে উঠে ডানহাতখানা হঠাৎ মাথার উপর তুলে সে বললে, আমার ডানহাতে কি রয়েছে, সেটা দেখতে পাচ্ছেন তো?

মোহনলালের ডানহাতে কালো রঙের গোলাকার কি-একটা জিনিস রয়েছে বটে। চন্দ্ৰবাবু সন্দেহপূর্ণ স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ওটা ?

বোমা।

পাহারাওয়ালারা তাড়াতাড়ি পিছিয়ে এল! মোহনলাল বললে, আমার দিকে কেউ আর এক পা এগিয়ে এলেই আমি এই বোমা ছুঁড়ব-সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত বাড়িখানা উড়ে যাবে!

চন্দ্ৰবাবু শুকনো গলায় বললেন, কিন্তু তা হলে তুমিও বাঁচবে না!

--না, আমিও বাঁচব না, আপনারাও বাঁচবেন না!

চন্দ্রবাবু খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলেন। তারপর বললেন, মোহনলাল, আমাকে ভয় দেখিয়ে তুমি পালাতে পারবে না। কর্তব্যের জন্যে যদি আমাকে মরতে হয়, তা হলে আমি মরতেও রাজি আছি।

আচম্বিতে ভীষণ চীৎকার করে মোহনলাল বললে, তবে মর! -বলেই হাতের সেই বোমাটা সে সজোরে চন্দ্ৰবাবুর দিকে নিক্ষেপ করলে!

পর-মুহুর্তে কুমারের মনে হল চোখের সামনে সারা পৃথিবীর আলো দপ করে নিবে গেল এবং ভয়ঙ্কর একটা শব্দের সঙ্গে রাশীকৃত ভাঙা ইট-কাঠি ধুলো-বালি ও রাবিশের ফোয়ারার মধ্যে তার দেহটা হাড়গোড় ভাঙা দ-এর মতো আকাশের দিকে ঠিকরে উঠে গেল!

—এবং তার পরে বিস্ময় আর আতঙ্কের প্রথম ধাক্কাটা সামলে দেখলে,—না, তারা আকাশে উড়ে যায়নি, পৃথিবীতেই বিরাজ করছে এবং চোখের সমুখেই ছাদের উপরে একটা কালো রবারের বল লাফিয়ে খেলা করছে! দু-হাতে মুখ চেপে চন্দ্ৰবাবু ছাদের উপরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছেন এবং চারজন পাহারাওয়ালা চার দিকে চিৎপাত বা উপুড় হয়ে পড়ে গড়াগড়ি দিচ্ছে!

বার বার বিপদে পড়ে কুমারের আত্মসংবরণ করবার ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছিল, তাই সকলের আগে সেইই বুঝতে পারলে যে মোহনলাল যেটা ছুঁড়েছিল, সেটা বোমা-টোমা কিছুই নয়, একটা তুচ্ছ রবারের বল মাত্র।

সকৌতুকে হেসে উঠে কুমার বললে, চন্দ্ৰবাবু, ও চন্দ্রবাবু! চোখ খুলে দেখুন, আমরা কেউ এখনো সশরীরে স্বর্গে যাই নাই।

যেন দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে উঠে একটা নিশ্বাস ফেলে চন্দ্ৰবাবু বললেন, অ্যাঁ? আমরা বেঁচে আছি? আমরা মারি নি? বল কি হে! বোমোটা তা হলে ফাটে নি? দুৰ্গা, দুৰ্গা-মস্ত একটা ফাড়া কেটে গেল!

কুমার বললে, না বোমা ফাটেনি—ঐ যে, আপনার পায়ের তলাতেই বোমাটা পড়ে রয়েছে।

ঠিক স্প্রিংওয়ালা পুতুলের মতো মস্ত একটা লাফ মেরে দাঁড়িয়ে উঠে। চন্দ্ৰবাবু বললেন, বিলকি হে? চৌকিদার! এই চৌকিদার! বোমাটা শিগগির এখান থেকে সরিয়ে ফ্যাল-শিগগির! নইলে এখনো হয়তো। ওটা ফাটতে পারে!

কুমার বললে, ঠাণ্ডা হোন, চন্দ্ৰবাবু ঠাণ্ডা হোন। বোমা ছোঁড়ে নি-ওটা রবারের বল ছাড়া আর কিছুই নয়!

চন্দ্ৰবাবু অনেকক্ষণ নিম্পলক চোখে বলটার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ গর্জন করে বললেন, কী! আবার আমার সঙ্গে ঠাট্টা? তবে রে রাস্কেল’-বলে চিলে ছাদের দিকে কটমট করে তাকিয়েই তার মুখ যেন সাদা হয়ে গেল! বিদ্যুতের মতো চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে তিনি আবার বললেন, মোহনলাল? মোহনলাল কোথায় গেল?

কুমার সচমকে চিলে ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখলে, সত্যিই তো, সেখান থেকে মোহনলালের মূর্তি যেন ভোজবাজির মতো অদৃশ্য হয়েছে।

চন্দ্ৰবাবু উৎকণ্ঠার সঙ্গে বললেন, কোথায় গেল মোহনলাল? কোন দিক দিয়ে সে পালাল?

কুমার বললে, এখান থেকে পালাবার কোনো পথই নেই।

—তবে কি সে মরিয়া হয়ে চারতলার ছাদ থেকেই নিচে লাফ মারলে ? -বলেই চন্দ্ৰবাবু ছুটে ছাদের ধারে গিয়ে নিম্ন দিকে দৃষ্টিপাত করলেন, কিন্তু সেখানেও মোহনলালের চিহ্নমাত্র নেই।

কপালে করাঘাত করে চন্দ্ৰবাবু বললেন, “অ্যাঁ! একটা বাজে আর বিশ্ৰী ঠাট্টা করে লোকটা কি-না। আমাদের সকলের চোখে ধুলো দিয়ে পালাল? উঃ! কী ভয়ানক লোক রে বাবা! এর পরেও আমার চাকরি আর কি-করে বজায় থাকে বল!

কিন্তু কুমার এত সহজে বোঝা মানবার ছেলে নয়। সে কিছু না বলে বরাবর নেমে এক-তলায় গেল। তার পর বাড়ির বাইরে ঠিক চিলে ছাদের নিচে গিয়ে দাঁড়াল সেখানে যা দেখলে তা হচ্ছে এই ঠিক চিলে ছাদের নিচেই, মাটির উপরে প্রায় দু-গাড়ি বালি স্তুপাকার হয়ে আছে। এবং সেই বালি স্তুপের মধ্যে একটা বড়ো গর্ত—অনেক উঁচু থেকে যেন একটা ভারী জিনিস সেখানে এসে পড়েছে! মোহনলাল তা হলে ছাদের উপর থেকে এই নরম বালির গাদায় লাফিয়ে পড়ে। অনায়াসেই চম্পট দিয়েছে?

কুমার তখনই চন্দ্রবাবুকে ডেকে এনে ব্যাপারটা দেখালে। দেখে-শুনে চন্দ্রবাবু তো একেবারেই অবাক! খানিক পরে দুই চোখ ছানাবড়ার মতো বড়ো করে তিনি বলে উঠলেন, “সাবাস বুদ্ধি!

মোহনলাল যে দেখছি পালাবার পথ আগে থাকতেই ঠিক করে, রেখেছিল! কুমার, আমি হলপ করে বলতে পারি, এই মোহনলাল বড়ো সহজ লোক নয়, সে এখানে বেড়াতেও আসে নি— এ ভুলু-ডাকাতের চরও নয়-এ হচ্ছে নিজেই ভুলু-ডাকাত!

থানায় ফিরে আবার নতুন এক বিস্ময়! কুমার নিজের ঘরে ঢুকেই দেখলে, মেঝের উপর একখানা খাম পড়ে আছে—যেন জানলা গলিয়ে কেউ সেখানা ঘরের ভিতরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে!

চিঠিখানা এইঃ

‘কুমারবাবু, আসছে অমাবস্যার রাতে আপনি পটলবাবুর ভাঙা বাড়ির শুড়িপথের কাছাকাছি ঝোপঝাপে কোথাও লুকিয়ে থাকবেন। সঙ্গে বন্দুক, রিভলভার আর টর্চ-লাইট নিয়ে যেতে ভুলবেন না।

আসছে। অমাবস্যার রাতেই রহস্যের কিনারা হয়ে যাবে!’

ইতি—বন্ধু

 

পুনঃ--এই চিঠির কথা ঘূণাক্ষরেও চন্দ্ৰবাবুর কাছে প্রকাশ করবেন না।

কুমার চিঠি পড়ে নিজের মনেই বললে, কে এই চিঠি লিখেছে? বন্ধু? এখানে কে আমার বন্ধু? মোহনলাল ? সে তো পলাতক ! তবে কি বনের ভেতরে গর্তের ভিতর থেকে আমাকে যে উদ্ধার করেছিল, এ কি সেই ব্যক্তি? কে সে?

কুমারের ভাবনায় বাধা পড়ল। আচম্বিতে ঝড়ের মতো চন্দ্ৰবাবু ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলেন-তারও হাতে একখানা চিঠি!

চন্দ্ৰবাবু বললেন, দেখ কুমার, এ আবার কি ব্যাপার! আমার শোবার ঘরের ভেতরে বাইরে থেকে এই চিঠিখানা কে ছুঁড়ে-ফেলে দিয়েছে।

চিঠিখানা নিয়ে কুমার বুঝলে, একই লোক তাকে আর চন্দ্রবাবুকে চিঠি লিখেছে। এ পত্ৰখানায় লেখা ছিল— চন্দ্ৰবাবু, আসছে। অমাবস্যার রাতে পটলবাবুর ভাঙা বাড়ির পিছনে কাজলা নদীর জল যেখানে সুড়ঙ্গ-খালের মধ্যে গিয়ে ঢুকেছে, ঠিক সেইখানেই অনেক লোকজন আর অস্ত্ৰ নিয়ে লুকিয়ে থাকবেন।

সেই রাত্রেই আপনি ভুলু-ডাকাতের দলকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।” ইতি-বন্ধু।