দিল্লী চলো Delhi Chalo by নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু Netaji Subhas Chandra Bose, chapter name বিশ্ব-পরিস্থিতি

বিশ্ব-পরিস্থিতি

আমি যে চোখে বর্ত্তমান সাধারণ পরিস্থিতি দেখছি তারই সম্বন্ধে কয়েকটি মন্তব্য করব। সর্ব্বপ্রথম আমি বলতে চাই, আমি পরিপূর্ণ আশাবাদিতা নিয়ে সাধারণ পরিস্থিতি দেখে থাকি এবং আমার এ আশাবাদিতার কারণও প্রকাশ করে বলতে পারি। প্রথম কারণ, পূর্ণ একবৎসর ধরে কাজ করে আমরা নিজের চোখেই নিজেদের কৃতিত্ব দেখতে পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আমরা আরও কত কি করতে পারি সে সম্বন্ধে এই অভিজ্ঞতা আমাদের যথেষ্ট ধারণা দিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, পূর্ব্ব-এশিয়ার ভারতীয়রা সম্পূর্ণতঃই আমাদের সঙ্গে আছেন এবং “সামগ্রিক সমর প্রস্তুতির” কার্য্যতালিকা বাস্তবে পরিণত করতে তাঁরা আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা করবেন।

 সেই সঙ্গে আর একটি ঘটনা আছে। আমরা সব চেয়ে কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি—আমরা ভারত-সীমান্ত পার হয়ে গেছি এবং বিভিন্ন রণাঙ্গনে বিপক্ষদলকে পরাজিত করতে পেরেছি। এমন এক সময় ছিল যখন লোকে সন্দেহ করত—ভারতীয় জাতীয় বাহিনী প্রকৃতই প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারবে কিনা এবং যদিই বা প্রত্যক্ষ সংগ্রামে প্রবৃত্ত হয় তবে বিপক্ষদলকে পরাজিত করতে পারবে কিনা। আমরা সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি; অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে আমরা বিপুল আত্মবিশ্বাস লাভ করেছি।

 ভারতের মাটিতে লড়াই শুরু হবার পর থেকে এ যুদ্ধ আমাদের যুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। “যুদ্ধ আমাদেরই”—এই অনুভূতি শুধু যে প্রত্যক্ষ সংগ্রামরত সৈন্যদের মনে নূতন প্রেরণার সঞ্চার করেছে তা নয়—যারা রণাঙ্গণের পিছনে আছে তাদের মনেও নব বীর্য্য দান করেছে। সমালোচকরা হয়ত বলতে পারেন, বিগত কয়েক সপ্তাহে আমাদের অগ্রগতি এমন কিছু দর্শনীয় হয় নি;—কিন্তু এতে আমরা বিচলিত নই। গত আগষ্টে আমি প্রথম বলি, শীঘ্রই আমরা ভারতের দিকে অভিযান আরম্ভ করতে পারব। তার পর থেকে আমি পূর্ব্ব-এশিয়ার ভারতীয়দের বিশেষ করে আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্যদের পুনঃ পুনঃ বলে আসছি, ভারত সীমান্ত অতিক্রম করার পরই আমাদের সব চেয়ে কঠিন যুদ্ধ করতে হবে। ভয়ঙ্কর যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতির পর, এবং প্রত্যাসন্ন দীর্ঘ ও কঠিন সংগ্রামের সম্পর্কে আমার দেশবাসী ও সৈন্যদের বার বার সাবধান করে দেবার পর, বিপক্ষদের প্রবল প্রতিরোধ উপলব্ধি করে বিস্মিত হব কেন? বিপক্ষদল যা করছে, তা আমাদের প্রত্যাশানুযায়ীই হয়েছে। এখন যা ঘটছে আমরা তারই অপেক্ষা করেছিলাম। অতএব ভারতমুখী অভিযান আরম্ভ করার সময়ে আমাদের যে আশাবাদিতা ছিল, এখনও তা ঠিক পূর্ব্বের মতই সজীব ও প্রোজ্জ্বল আছে।

 আমাদের সৈন্যরা অনেক অসুবিধা ও কষ্টের সম্মুখীন হয়েছে কিন্তু সে সম্বন্ধে তাদের কাছ থেকে কোন অভিযোগ আমি পাইনি। সৈন্যরা এ পর্য্যন্ত একটি মাত্র অভিযোগ করেছে—সে অভিযোগ এসেছে যখন তাদের সম্মুখ রণাঙ্গণে পাঠাতে বিলম্ব হয়েছে। একটি উদাহরণ দিচ্ছি। সম্প্রতি আমি একটি হাসপাতাল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেইখানে আহত, ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য রোগগ্রস্ত সৈন্যরা আছে। সেরে ওঠা মাত্র তাদের রণাঙ্গণে ফিরে পাঠানোর জন্য তারা আমার কাছে অত্যন্ত ব্যাকুলতা প্রকাশ করল। এরাই সম্মুখ রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছে, সেখানকার অবস্থা আগাগোড়া জানে তবু তারা খুব হাসি খুসী এবং পুরোপুরি আশাবাদী। কোনরূপ অত্যুক্তি না করে আমি বলতে পারি পূর্ব্ব-এশিয়ার সকল ভারতীয়ের মনই এইরূপ অফুরন্ত আশাবাদিতায় ভরা। বিপক্ষ দলের এই দৃঢ় প্রতিরোধ যে আমাদের টলাতে পারে নি— তার আরও একটা কারণ আছে। তারা যদি মণিপুর, পূর্ব্ববঙ্গ এবং আসাম হারায়, তবে ব্রহ্মপুত্র নদে পৌছানোর পূর্ব্ব পর্য্যন্ত তাদের পক্ষে আর বাধা দান সম্ভব হবে না। নদের অপর পারে গিয়ে তবেই তারা বাধা দান করতে পারবে। কাজেই, সামরিক গুরুত্ব বিবেচনা করেই তারা কথিত অঞ্চলে সর্ব্ব শক্তিবিনিয়োগ করবে। এই জন্যেই তাদের পক্ষে যতটা সম্ভব দৃঢ় প্রতিরোধ দেওয়া খুবই স্বাভাবিক।

 সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমাদের বলিষ্ঠ আশাবাদিতা তিনটি কারণের ফল; প্রথমতঃ গত এক বছরে আমরা অসামান্য ফললাভ করেছি; দ্বিতীয়ত, আমরা ভারত-সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় মাটির উপর বিপক্ষসেনাদের পরাজিত করতে পেরেছি, এবং তৃতীয়তঃ, বর্ত্তমান রণাঙ্গণের বিরাট সামরিক গুরুত্ব আমরা উপলব্ধি করেছি। এর ফলে আমরা অনুভব করছি, এ অঞ্চল অধিকার করার জন্য আমাদের সুকঠিন সংগ্রাম করতে হবে।

 বিশ্বপরিস্থিতি এবং ভারতের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পর্য্যবেক্ষণ করলে তবে এই আশাবাদী মনোভাব আরও দৃঢ়তর হয়ে ওঠে। বিশ্বপরিস্থিতি বিচার করলে দেখা যাবে, বিপক্ষীয়েরা পৃথিবীর বিভিন্ন রণাঙ্গণে পূর্ণরূপে কর্ম্মব্যস্ত। ইউরোপে দ্বিতীয় রণাঙ্গণের আরম্ভও পরোক্ষভাবে আমাদের সহায়ক—কেননা তার অর্থ, দীর্ঘ কালের জন্যে ইঙ্গ-মার্কিণ সমর শক্তি ইউরোপে সম্পূর্ণ কর্ম্মব্যস্ত থাকবে।

 আমরা ভারতীয়রা বিশ্বপরিস্থিতি বিচার করে দেখলে বুঝতে পারব, স্বাধীনতার লক্ষ্যে পৌঁছানোর পক্ষে এর চেয়ে অধিকতর অনুকূল ঘটনাসমাবেশ আর হতে পারে না—এখানে-ওখানে কোন রণাঙ্গণে অক্ষশক্তির বিপদ দেখা দিলেও, তাতে আমাদের কিছু এসে যায় না। আমাদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই যে, বিপক্ষীয়েরা সকল রণাঙ্গণে পূর্ণব্যস্ত এবং তার ফলে আমরা ভারতীয় জনসাধারণ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছি। মাঝে মাঝে আমাকে এমন সব প্রশ্ন করা হয়, যে আমি হাসি রোধ করতে পারিনে। যেমন ধরুন, সেদিন আমায় প্রশ্ন করা হয়েছিল, রোম অধিকৃত হওয়ায় আমার মনে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আমি বলেছিলাম, ভারতের যুদ্ধের উপর এর কিছু মাত্র প্রভাব নেই। বিপক্ষীয়েরা এমন গভীরভাবে ব্যস্ত যে, স্বাভাবিক অবস্থায় ভারতে যে সব সাহায্য প্রেরণ করা হত সে সব সাহায্য সে ইউরোপের বিভিন্ন রণাঙ্গণে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। কাজেই অক্ষশক্তিরা কোন কোন রণাঙ্গণে পরাজয় স্বীকার করলেও, অদের দিক থেকে অন্ততঃ তাতে বিশ্বপরিস্থিতির অদল বদল হয় না। সেদিন আমায় জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল—শত্রুরা শেরবুর্গ দখল করায় আমার মনে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আমি ঐ একই উত্তর দিয়েছিলাম। আমাদের কাছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এই যে, ভারতে আমাদের বিরুদ্ধে যে সব ইঙ্গ-মার্কিণ সৈন্য নিয়োজিত হত, তারা এখন ইউরোপে যুদ্ধ করছে, এবং তারা ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে। আমি জার্ম্মাণশক্তি বেশ ভাল ভাবে জানি এবং আমার পূর্ণ বিশ্বাস, ইঙ্গ-মার্কিণরা ইউরোপ থেকে বিতাড়িত হবে। ব্যর্থ ইউরোপীয় অভিযানে ইঙ্গ-মার্কিণদের ভয়ঙ্কর ক্ষতি সহ্য করতে হবে।

 আমাদের আশাবাদিতার বৃদ্ধির পক্ষে আর একটি কারণও আছে—সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ অবস্থা। এ পর্য্যন্ত কংগ্রেস ও বৃটিশ গবর্নমেটের মধ্যে কোন আপোষ রফা হয় নি। কিছুকাল পূর্ব্বে সহসা মহাত্মা গান্ধীকে যখন মুক্তি দেওয়া হয়, তখন অনেকে জল্পনা করছিল— একি নিছক গান্ধীজির ভগ্নস্বাস্থ্যের দরুণ, না এ মুক্তি আপোষের ভূমিকা বিশেষ। এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, অসুস্থতার জন্যই মহাত্মা গান্ধীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে—এর পিছনে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। যতদিন পর্য্যন্ত মহাত্মা গান্ধী এবং বৃটিশ গবর্নমেন্টের মধ্যে আপোষ না হচ্ছে ততদিন আমাদের উদ্বিগ্ন হবার কারণ নেই। আর ওদিকে যাই হোক, যুদ্ধ আমাদের করতেই হবে এবং মহাত্মা গান্ধী যদি আপোষ করেনও, তবু আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব। এবিষয়ে সন্দেহ নেই, কংগ্রেসের সঙ্গে বৃটিশ গবর্ণমেন্টের আপোষরফা না হলে আমাদের এদিককার প্রচেষ্টা কিছু কম হলেও চলবে, এবং আমাদের কাজ হয়ে উঠবে অনেক পরিমাণে সহজ। এপর্য্যন্ত আপোষের কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এবং আমাদের পক্ষে সব চেয়ে উৎসাহজনক ব্যাপার এই, এপর্য্যন্ত মহাত্মা গান্ধী যেসব বিবৃতি দিয়েছেন, তার মূল বক্তব্য একই। তিনি বলেছেন, প্রায় দুই বৎসর পূর্ব্বে “ভারত ছাড়ো” প্রস্তাবের উদ্যোক্তা হিসাবে তিনি যে মনোভাব অবলম্বন করেছিলেন, সে মনোভাব পরিবর্ত্তনের কোন কারণ তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। অতএব এ অবস্থায় কংগ্রেস এবং বৃটিশ গবর্নমেন্টের মধ্যে আপোযের কোন সম্ভাবনাই নেই, এবং ফলে আমাদের কাজ অনেকটা সহজ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

 ভারতের স্বাধীনতা লাভের উপায় এখন দেখা যাচ্ছে একটি—সে উপায় যুদ্ধ করা। যাঁরা একদিন অহিংস সংগ্রামের দ্বারা স্বাধীনতা অর্জ্জন করবেন বলে আশা করেছিলেন তাঁরা আজ বুঝতে পারছেন, শক্তি প্রকাশ না করতে পারলে, তারা কখনও ভারতীয় দাবীর কাছে মাথা নত করবে না। কাজেই জনগণ যদি স্বাধীন হতে চায়, তবে তাদের এগিয়ে আসতে হবে, এ সংগ্রামকে সমর্থন করতে হবে।

 আর একটা প্রশ্ন সকলের মনে জাগছে—কংগ্রেসের সঙ্গে বৃটিশ গবর্নমেন্টের আপোষের সম্ভাবনা আছে কিনা। আমার মতে এ প্রশ্নের উত্তর—এইতত্ত্বের দিক থেকে আপোষরফার সম্ভাবনা সর্ব্বদাই আছে। বাস্তব বিচারে আপোষ প্রায় অসম্ভব। আমি যখন বলি যে তত্ত্বের দিক থেকে কংগ্রেস এবং বৃটিশ গবর্নমেন্টের আপোষ সম্ভব, তখন আমি বোঝাতে চাই যে বৃটিশ গবর্নমেন্টে যদি সত্য সত্যই আপোষরফা করে, তাহলে তারাই জিতবে, ভারতীয় জনসাধারণ হারবে। শুধু একটি ভিত্তিতেই আপোষ সম্ভব—অর্থাৎ ভারতীয় জনগণের একটি গবর্নমেন্ট গঠন করতে হবে এবং যুদ্ধে বৃটেন ও আমেরিকার সঙ্গে সে গবর্নমেন্টকে সহযগিতা করতে হবে। এই ভিত্তিতে বৃটিশরা আপোষ করতে পারে এবং করলে তাদের লাভ হবে এবং আমাদের হবে ক্ষতি। কাজেই তত্ত্বের দিক থেকে আপোষরফা সম্ভব এবং সে আপোষ বৃটিশদের পক্ষেই সুবিধাজনক।

 বাস্তব বিচারে কিন্তু আপোষরফা প্রায় অসম্ভব—কেননা ব্রিটিশ ভারতীয় জনসাধারণের হাতে গবর্নমেন্ট তুলে দিতে যাবে না। কয়েকজন ভারতীয় নেতা আছেন যাঁরা প্রকৃত ভারতীয় গবর্নমেন্ট গঠন করতে পারলে আপোষরফা করে বৃটেনের যুদ্ধে সহযোগিতা করতে রাজী। কিন্তু বৃটিশরা ভারতীয় জনসাধারণকে বিশ্বাস করে তাদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না—কেননা বৃটেনের সব সময় সন্দেহ, ক্ষমতা হাতে পেয়ে ভারতীয়রা যদি সাহায্য করতে অস্বীকার করে? কাজেই বাস্তব আপোষরফা প্রায় অসম্ভব।

 সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমার মতে আপোষরফার কোন সম্ভাবনা নেই। একমাত্র যে প্রশ্ন বাকী থাকে—সেটা হচ্ছে, মহাত্মা গান্ধী কিংবা অন্য কোন প্রধান কংগ্রেস নেতা বৃটিশ গবর্নমেন্টের কাছে বিনাসর্ত্তে আত্মসমর্পণ করে “ভারত ছাড়ো” প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেবেন কিনা। এ সম্বন্ধে এ পর্য্যন্ত মহাত্মা গান্ধীর মনোভাবে দুর্ব্বলতার সামান্য লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। তাঁর বার্দ্ধক্য এবং চরম দুর্ব্বল স্বাস্থ্য সত্ত্বেও, তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীতে কিছুমাত্র দুর্ব্বলতার লক্ষণ নেই। অপর পক্ষে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে বৃটিশ গবর্নমেন্টের যেসব পত্রালাপ হয়েছিল, তারা সে সব প্রকাশ করার জন্যে অতিমাত্রায় উৎসুক। আমার মতে এর অর্থ, মহাত্মা গান্ধীকে পুনরায় গ্রেপ্তার করার জন্যে তারা ভারত এবং অন্যান্য মিত্ররাষ্ট্রের জনসাধারণকে প্রস্তুত রাখতে চায়। ১৯৪২এর আগষ্ট মাসে গান্ধীকে কারাগারে প্রেরণের পর ওরা কতকগুলো দলিলপত্র প্রকাশ করে জনসাধারণকে বোঝাতে চেয়েছিল, গান্ধীজীর মনোভাবে আপোষ এবং মিলনের স্থান নেই। এই পত্রালাপ প্রকাশিত করেও তারা জনগণকে বোঝাতে চায়, তাঁকে গ্রেপ্তার করা ছাড়া বৃটিশ গবনমেন্টের গত্যন্তর ছিল না; কাজেই প্রকাশিত ঘটনাবলীর ভিত্তিতে আমি বিবেচনা করি মহাত্মা গান্ধী কিংবা অন্য কোন কংগ্রেস নেতা বিনাসর্ত্তে বৃটিশ গবর্নমেন্টের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন—এরূপ কোন সম্ভাবনা নেই। ভারতের আভ্যন্তরীণ অবস্থা আমাদের পক্ষে পরম অনুকূল—এই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। কংগ্রেস যতদিন আপোষ না করছেন এবং বিনাসর্ত্তে বৃটিশ গবর্নমেন্টের কাছে আত্মসমর্পণ না করছেন ততদিন জনসাধারণের মনোভাব থাকবে বৃটিশ-বিরোধী। আমাদের অভিযান যত অগ্রসর হবে, জনগণও ততই বুঝতে পারবে, স্বাধীনতা লাভের এই হচ্ছে উপায়। তারা হয় যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবে, নয়ত আমাদের যুদ্ধ-পরিচালনায় সাহায্য করবে।

 পূর্ব্ব-এশিয়া ও অন্যান্য রণক্ষেত্রে আমাদের কৃতিত্ব, অনুকূল বিশ্বপরিস্থিতি ও ভারতের আভ্যন্তরীণ অবস্থা—এই সব মিলে আমাদের মনে ভবিষ্যৎ স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্বন্ধে প্রচুর আশা এবং আশাবাদের সঞ্চার করছে।