ৱাশিয়াৱ চিঠি by ৱবীন্দ্ৰনাথ ঠাকুৱ, chapter name সাত

সাত

ছেলেদের আঁকা অনেকগুলি ছবি আমরা পেয়েছি—দেখে বিস্মিত হতে হয়—সেগুলাে রীতিমতো ছবি, কারো নকল নয়, নিজের উদ্ভাবন। এখানে নির্মাণ এবং সৃষ্টি দুইয়েরই প্রতি লক্ষ্য দেখে নিশ্চিন্ত হয়েছি। এখানে এসে অবধি স্বদেশের শিক্ষার কথা অনেক ভাবতে হয়েছে। আমার নিঃসহায় সামান্য শক্তি দিয়ে কিছু এর আহরণ এবং প্রয়ােগ করতে চেষ্টা করব। কিন্তু আর সময় কই—আমার পক্ষে পাঞ্চবার্ষিক সংকল্পও হয়তাে পূরণ না হতে পারে। প্রায় ত্রিশ বছর কাল যেমন একা-একা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লগি ঠেলে কাটিয়েছি—আরো দু-চার বছর তেমনি করেই ঠেলতে হবে; বিশেষ এগােবে না তাও জানি—তবু নালিশ করব না। আজ আর সময় নেই। আজ রাত্রের গাড়িতে জাহাজের ঘাটের অভিমুখে যেতে হবে, সমুদ্রে কাল পাড়ি দেব। ইতি ২ অক্টোবর ১৯৩০।




ব্রেমেন স্টীমার অতলান্তিক

 রাশিয়া থেকে ফিরে এসে আজ চলেছি আমেরিকার ঘটে। কিন্তু রাশিয়ার স্মৃতি আজো আমার সমস্ত মন অধিকার করে আছে। তার প্রধান কারণ অন্যান্য যে-সব দেশে ঘুরেছি তারা সমগ্রভাবে মনকে নাড়া দেয় না। তাদের নানা কর্মের উদ্যম আছে আপন আপন মহলে। কোথাও আছে পলিটিক্স, কোথাও আছে হাসপাতাল, কোথাও আছে বিশ্ববিদ্যালয়, কোথাও আছে ম্যুজিয়ম—বিশেষজ্ঞরা তাই নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এখানে সমস্ত দেশটা এক অভিপ্রায় নাস্তিকতা অনেক ভালাে। রাশিয়ার বুকের ’পরে ধর্ম ও অত্যাচারী রাজার পাথর চাপা ছিল; দেশের উপর থেকে সেই পাথর নড়ে যাওয়ায় কী প্রকাণ্ড নিষ্কৃতি হয়েছে, এখানে এলে সেটা স্বচক্ষে দেখতে পেতে। ইতি ৩ অক্টোবর ১৯৩০।


৪৬