এগাৱো
১১
পিছিয়ে-পড়া জাতের শিক্ষার জন্যে সােভিয়েট রাশিয়ার কী রকম উদ্যোগ চলছে সে-কথা তােমাকে লিখেছি। আজ দুই-একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক।
উরাল পর্বতের দক্ষিণে বাষকিরদের বাস। জারের আমলে সেখানকার সাধারণ প্রজার অবস্থা আমাদের দেশের মতােই ছিল। তারা চির-উপবাসের ধার দিয়েই চলত। বেতনের হার ছিল অতি সামান্য, কোনাে কারখানায় বড়াে রকমের কাজ করবার মতাে শিক্ষা ছিল না, অবস্থাগতিকে তাদের ছিল নিতান্তই মজুরের কাজ। বিপ্লবের পরে এই দেশের প্রজাদের স্বতন্ত্র শাসনের অধিকার দেবার চেষ্টা আরম্ভ হল।
প্রথমে যাদের উপর ভার পড়েছিল তারা অগেকার আমলের ধনী জোতদার, ধর্মযাজক এবং বর্তমানে আমাদের ভাষায় যাদের বলে থাকি শিক্ষিত। সাধারণের পক্ষে সেটাতে সুবিধা হল না। আবার এই সময়ে উৎপাত আরম্ভ করলে কচাকের সৈন্য। সে ছিল জার-আমলের পক্ষপাতী, তার পিছনে ছিল ক্ষমতাশালী বহিঃশত্রুদের উৎসাহ এবং আনুকূল্য। সােভিয়েটরা যদি বা তাদের তাড়ালে, এল ভীষণ দুর্ভিক্ষ। দেশে চাষবাসের ব্যবস্থা ছারখার হয়ে গেল।
১৯২২ খ্রীস্টাব্দ থেকে সােভিয়েট আমলের কাজ ঠিকমতো শুরু হতে পেরেছে। তখন থেকে দেশে শিক্ষাদান এবং অর্থোৎপত্তির ব্যবস্থা প্রবলবেগে গড়ে উঠতে লাগল। এর আগে বাষকিরিয়াতে নিরক্ষরতা ছিল প্রায় সর্বব্যাপী। এই কয় বছরের মধ্যে এখানে আটটি নর্মাল স্কুল, পাঁচটি কৃষিবিদ্যালয়, একটি ডাক্তারি শিক্ষালয়, অর্থকরী বিদ্যা শেখবার
৭১
ভারতবর্ষের রাজত্বে লজ্জা প্রকাশের চলন নেই, গৌরব প্রকাশেরও রাস্তা দেখা যায় না।
এই লজ্জা স্বীকারের উপলক্ষ্যে একটা কথা পরিষ্কার করে দেওয়া দরকার। বুলেটিনে আছে সমস্ত তুর্কমেনিস্তানে শিক্ষার জন্য জন-পিছু পাঁচ বল খরচ হয়ে থাকে। রুবলের মূল্য আমাদের টাকার হিসাবে আড়াই টাকা। পাঁচ রুবল বলতে বােঝায় সাড়ে বারাে টাকা? এই বাবদ কর আদায়ের কোনাে একটা ব্যবস্থা হয়তো আছে, কিন্তু সেই কর আদায় উপলক্ষ্যে প্রজাদের নিজেদের মধ্যে আত্মবিরােধ ঘটিয়ে দেবার কোনাে আশঙ্কা নিশ্চয় সৃষ্টি করা হয় নি। ইতি ৮ অক্টোবর, ১৯৩০।