এক - খবরের কাগজের রিপোর্ট
“বঙ্গদেশ” হচ্ছে একখানি সাপ্তাহিক পত্র। তাতে এই খবরটি বেরিয়েছে—
‘সুন্দরবনের নিকট মানসপুর। মানসপুরকে একখানি বড়সড়ো গ্রাম বা ছোটখাটো শহর বলা চলে। কারণ সেখানে প্রায় তিন হাজার লোকের বসবাস।
সাম্প্রতি মানসপুরের বাসিন্দারা অত্যন্ত সস্ত্রস্ত হইয়া উঠিয়াছে। প্রতি অমাবস্যার রাত্রে সেখানে এক অলৌকিক বিভীষিকার আর্কিভাব হয়।
আসল ব্যাপারটা যে কি, কেহই সেটা আন্দাজ করিতে পারিতেছে না। পুলিশ প্রাণপণে তদন্ত করিয়াও বিশেষ কিছুই স্থির করিতে পারে নাই। গ্রামের চারিদিকে কড়া পাহারা বসিয়াছে। বন্দুকধারী সিপাহীরা সর্বদাই প্রস্তুত হইয়া থাকে। তথাপি প্রতি অমাবস্যার রাত্রে মানসপুর হইতে এক-একজন মানুষ অন্তৰ্হিত হয়।
আজ এক বৎসর কাল ধরিয়া এই অদ্ভুত কাণ্ড হইতেছে। গত বারোটি অমাবস্যার রাত্রে বারোজন লোক অদৃশ্য হইয়াছে। প্রতি দুর্ঘটনার রাত্রেই একটা আশ্চর্য বিষয় লক্ষ্য করা গিয়াছে। মানসপুর সুন্দরবনের কাছাকাছি হইলেও, তাহার ভিতরে এতদিন ব্যাঘ্রের উৎপাত বড়ো-একটা ছিল না। কিন্তু দুর্ঘটনার আগেই এখন ঘটনাস্থলের চারিদিকে ঘন ঘন ব্যাঘ্রের চীৎকার শোনা যায়। ঠিক অমাবস্যার রাত্রি ছাড়া আর কোনোদিনেই এই অদ্ভুত ব্যাঘ্রের সাড়া পাওয়া যায় না! এ ব্যাঘ্র যে কোথা হইতে আসে এবং কোথায় অদৃশ্য হয় কেহই তা জানে না। আজ পর্যন্ত কেহই তাকে চোখে দেখে নাই।
আর একটি আশ্চর্য ব্যাপার এই যে, যারা অদৃশ্য হইয়াছে তাদের মধ্যে একজনও পুরুষ নাই! প্রত্যেকেই স্ত্রীলোক এবং প্রত্যেকেরই গায়ে ছিল অনেক টাকার গহনা।
পুলিশ প্রথমে স্থির করিয়াছিল যে, এ-সমস্ত অনিষ্টরই মূল হইতেছে কোনো নরখাদক ব্যাঘ্র। কিন্তু নানাকারণে পুলিশের মনে এখন অন্যরকম সন্দেহের উদয় হইয়াছে। সুন্দরবনের ভিতরে আছে ভুলু-ডাকাতের আস্তানা এবং তার দল ও-অঞ্চলে প্রায়ই অত্যাচার করিয়া থাকে। অনেক চেষ্টা ও পুরস্কার ঘোষণা করিয়াও পুলিশ আজ পর্যন্ত ভুলু-ডাকাতকে গ্রেপ্তার করিতে পারে নাই। পুলিশের বিশ্বাস, মানসপুরের সমস্ত দুর্ঘটনার জন্য ঐ ভুলু-ডাকাতই দায়ী।
কে যে দায়ী এবং কে যে দায়ী নয়, এ-কথা আমরা জানি না বটে, কিন্তু এটা বেশ বুঝা যাইতেছে যে, মানসপুরের দুর্ঘটনার মধ্যে আশ্চর্য কোনো রহস্য আছে। আমরা বিংশ শতাব্দীর মানুষ না হইলে এ-সব ব্যাপারকে হয়তো ভুতুড়ে কাণ্ড বলিয়া মনে করিতাম। ডাকাত করে ডাকাতি, ঠিক অমাবস্যার রাত্রেই চোরের মতো আসিয়া তারা কেবল এক-একজন স্ত্রীলোককে চুরি করিয়া লইয়া যাইবে কেন? আর এই ব্যাঘ্র রহস্যটাই বা কি? এ কোন দেশী ব্যাঘ্র। এ কি পাঁজি পড়িতে জানে? পাঁজি-পুঁথি পড়িয়া ঠিক অমাবস্যার রাত্রে মানসপুরের আসরে গর্জনগান গাহিতে আসে? কে এ প্রশ্নের উত্তর দিবো?”