ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার by আইজাক আসিমভ, chapter name দ্বিতীয় পর্ব : দ্য মিউল - ২৪. কনভার্ট

দ্বিতীয় পর্ব : দ্য মিউল - ২৪. কনভার্ট

ওরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ভবনগুলোতে ঢুকল তখন ট্রানটরের বিরল জনজীবনে কোনো ছেদ পড়ল না। পরিবেশটা গম্ভীর এবং নিঃসঙ্গ নীরবতায় পূর্ণ।

ফাউণ্ডেশনের আগন্তকরা জানে না কীভাবে মহাবিপর্যয়ের রক্ত ঝরানো দিন এবং রাতগুলো পাড়ি দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় অক্ষত থেকেছে। জানে না কীভাবে যখন এমনকি ইম্পেরিয়াল ক্ষমতা পর্যন্ত শেষ হয়ে গেছে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থী ধার করা অস্ত্র এবং অনভিজ্ঞ সাহসিকতা নিয়ে গ্যালাক্সির তাবৎ জ্ঞান বিজ্ঞানের সংরক্ষক এই পুণ্য স্থানকে রক্ষা করার জন্য একটা প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত রাখার জন্য সাতদিনব্যাপী যুদ্ধ এবং একটা যুদ্ধবিরতির চুক্তির কথা তারা জানে না যখন এমনকি ইম্পেরিয়াল প্রাসাদ পর্যন্ত গিলমার এবং তার সৈনিকদের পদভারে মুখরিত ছিল।

ফাউণ্ডেশনার, যারা প্রথমবার এখানে এসেছে তাদের মনে হল যে, যে বিশ্ব চাকচিক্যময় অতীত থেকে কঠিন এক নতুন বিশ্বে পরিণত হচ্ছে তার মাঝে এই জায়গা শান্ত, গৌরবময় অতীতের চমৎকার নিদর্শন।

একদিক থেকে তারা অনুপ্রবেশকারী। বিষণ্ণ নীরবতা তাদেরকে প্রতাখ্যান করল। মনে হল একাডেমিক অ্যাটমোস্ফিয়ার এখনো টিকে আছে এবং তারা এসে বিরক্ত করায় যেন তাকিয়ে আছে রাগত চোখে।

লাইব্রেরি ভবনটা ছোট, অবাক হতে পারে অনেকেই। কিন্তু আসলে এটা আণ্ডারগ্রাউণ্ডে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। এবং এর নৈঃশব্দ তুলনাহীন। রিসেপসন রুমের দেয়াল চিত্রগুলোর সামনে থামল এবলিং মিস।

কথা বলল ফিসফিস করে এখানে ফিসফিস করে কথা বলাই নিয়ম : “আমার মনে হয় ক্যাটালগ রুম পিছনে ফেলে এসেছি। এখান থেকেই আমাকে শুরু করতে হবে।”

তার কপালে এক ধরনের তেলতেলে ভাব, হাত কাঁপছে, “আমাকে বিরক্ত করা যাবে না, টোরান। আমার খাবার তুমি নিচে দিয়ে যেতে পারবে?”

“আপনি যেভাবে বলবেন। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করব। আপনি চাইলে আমরা আপনার অধীনে-”

“না, আমাকে একা থাকতে হবে।”

“আপনার ধারণা আপনি যা চাইছেন সেটা পাবেন।

এবং মৃদু আরবিশ্বাসী গলায় জবাব দিল এবলিং মিস, “আমি জানি আমি পারব!”

টোরান এবং বেইটা এই প্রথমবারের মতো বিবাহিত জীবনের কয়েক বছরের মধ্যে পুরোপুরি স্বাভাবিক সংসার শুরু করতে পারল। অদ্ভুত ধরনের সংসার। রাজকীয় পরিবেশে তারা অস্বাভাবিক সাধারণ জীবনযাপন করছে। খাবার সংগ্রহ করছে প্রধানত লি স্যান্তারের ফার্ম থেকে বিনিময়ে তারা দেয় ছোট ছোট নিউক্লিয়ার গ্যাজেট, যা যে-কোনো ট্রেড শিপেই পাওয়া যায়।

ম্যাগনিফিসো কীভাবে যেন লাইব্রেরির প্রজেক্টর ব্যবহার করা শিখে নিয়েছে এবং এবলিং মিস এর মতোই নাওয়া খাওয়া ভুলে অ্যাডভেঞ্চার বা রোমান্টিক গল্প কাহিনীতে ডুবে থাকছে।

নিজেকে পুরোপুরি কবর দিয়ে রাখল এবলিং। সাইকোলজি রেফারেন্স রুমে একটা দোল খাঁটিয়ার ব্যবস্থা করে নিয়েছে। ওজন কমছে দ্রুত, গায়ের রং বদলে ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। তার কর্কশ কথোপকথন আর প্রিয় অভিশাপ বাক্যগুলো হালকা মৃত্যুবরণ করেছে। অনেক সময়তো টোরান বা বেইটাকে চিনতেও কষ্ট হয়।

পুরোপুরি সে নিজের ভেতরে মগ্ন। ম্যাগনিফিসো খাবার নিয়ে এসে প্রায়ই অদ্ভুত মুগ্ধ মনোযোগী দৃষ্টিতে দেখে বৃদ্ধ সাইকোলজিস্ট একটার পর একটা সমীকরণ রূপান্তর করে যাচ্ছে। অসংখ্য বুক ফিল্ম ঘেটে তথ্য সংগ্রহ করছে, সীমাহীন মানসিক শ্রম ব্যয় করে কোন গন্তব্যে পৌঁছতে চাইছে শুধু সেই জানে।

অন্ধকার কামরায় ঢুকে তীক্ষ্ণ গলায় ডাকল টোরান, “বেইটা!”

একটা অপরাধবোধের কাটা খচ করে বিধল বেইটার মনে। “হ্যাঁ? তুমি আমাকে চাও, টোরি?”

“অবশ্যই আমি তোমাকে চাই। স্পেস, অন্ধকারে বসে কী করছ তুমি। ট্রানটরে আসার পর থেকেই তোমার আচরণ বদলে গেছে। কী হয়েছে?”

“ওহ্, টোরি, থামো,” ক্লান্ত গলায় বলল সে।

“ওহ টোরি থামো,” অধৈর্য ভঙ্গিতে মুখ ভেংচালো টোরান। তারপর হঠাৎ কোমল গলায় বলল, “আমাকে বলবে না কী হয়েছে, বে? কিছু একটা তোমাকে বিরক্ত করছে।”

“না! কিছু না, টোরি। তুমি যদি অনবরত এরকম খুঁত খুঁত করো, আমি পাগল হয়ে যাবো। আমি শুধু-ভাবছি।”

“কী ভাবছো?”

“কিছুই না। ঠিক আছে, ঠিক আছে, ভাবছি মিউলের কথা, হেভেন, ফাউণ্ডেশন এবং সবকিছু। ভাবছি এবলিং মিস এর কথা, সেকি সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন খুঁজে বের করতে পারবে, পারলেও কী উপকার হবে-এরকম হাজার হাজার বিষয়। খুশি?” তার কণ্ঠস্বর উত্তেজিত।

“শুধু চিন্তাভাবনা হলে থামিয়ে দাও। ওতে কোনো ফায়দা হবে না। তুমি কী পরিস্থিতি পাল্টাতে পারবে?”

উঠে দাঁড়িয়ে দুর্বলভাবে হাসল বেইটা। “ঠিক আছে। আমি খুশি। এই দেখো কেমন সুন্দর করে হাসছি।”

বাইরে ম্যাগনিফিসোর উত্তেজিত চিৎকার শোনা গেল, “মাই লেডি-”

“কী ব্যাপার? এসো-”

দরজার সামনে বিশালদেহী, কঠিন মুখের লোকটাকে দেখে কথা বন্ধ হয়ে গেলো বেইটার

“প্রিচার,” আর্তনাদ করল টোরান। শ্বাসরুদ্ধ গলায় বেইটা বলল, “ক্যাপ্টেন! আমাদের কীভাবে খুঁজে বের করলেন?”

পা বাড়িয়ে ভিতরে ঢুকল হ্যান প্রিচার। তার কণ্ঠস্বর পরিষ্কার, সমতল এবং অনুভূতি শূন্য, “আমার র‍্যাঙ্ক এখন কর্নেল-মিউলের অধীনে।”

“মিউলের…অধীনে!” ধীরে ধীরে টোরানের কণ্ঠস্বর নির্জীব হয়ে পড়ল। তিনজনে মিলে একটা অদ্ভুত নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ম্যাগনিফিসে গিয়ে লুকালো টোরানের পিছনে, বাধা দিল না কেউ।

হাত দুটো পরস্পরের সাথে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল বেইটা, তারপরেও কাঁপুনি থামল না। “আপনি আমাদের গ্রেপ্তার করবেন? সত্যি সত্যি ওই পক্ষে যোগ দিয়েছেন?”

দ্রুত জবাব দিল কর্নেল “আমি আপনাদের গ্রেপ্তার করতে আসিনি। আপনাদের সাথে দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি আমাকে। আমি শুধু এসেছি পুরোনো বন্ধুত্ব ঝালাই করতে। অবশ্য আপনারা যদি সুযোগ দেন।”

রাগে টোরানের মুখের কাঠামো বদলে গেছে, “আমাদের কীভাবে খুঁজে পেলেন? ওই ফিলিয়ান শিপে ছিলেন তা হলে? অনুসরণ করে এসেছেন?”

প্রিচারের কাঠের পুতুলের মতো মুখে হয়তো কিছুটা বিব্রত ভাব, “আমি ফিলিয়ান শিপে ছিলাম! আসলে আপনাদের সাথে আমার দেখা… অনেকটা… দৈবক্রমে।”

“এটা এমন এক দৈবঘটনা গাণিতিকভাবে যা অসম্ভব।”

“না, শুধু অভাবনীয়। কাজেই আমার বক্তব্য মেনে নেওয়া যায়। যাই হোক, ফিলিয়ানদের কাছে আপনি স্বীকার করেছিলেন-নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ফিলিয়া নামে কোনো জাতি নেই আসলে-যে আপনারা ট্র্যানটরে আসবেন। যেহেতু মিউল এরই মধ্যে নিওট্রানটরের সাথে যোগাযোগ করেছে, আপনাদের ওখানে আটক করা সহজ ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমি পৌঁছানোর আগেই চলে আসেন। তবে বেশিক্ষণ আগে না। ট্রানটরের ফার্ম মালিকদের সতর্ক করার মতো যথেষ্ট সময় ছিল। তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যেন আপনাদের পৌঁছানোর খবর আমাকে জানায়। সেই খবর পেয়েই এসেছি। বসতে পারি? আমি বন্ধু হিসেবেই এসেছি, বিশ্বাস করুন।”

বসল সে। মাথা নিচু করে ঝড়ের বেগে চিন্তা করছে টোরান। বেইটা চা তৈরিতে ব্যস্ত।

ঝট করে মাথা তুলল টোরান, “বেশ অপেক্ষা করছেন কেন-কর্নেল? কী রকম বন্ধুত্ব করবেন আপনি? যদি গ্রেপ্তার না হয় তা হলে কী? নিরাপত্তা হেফাজত। আপনার লোকদের ডেকে নির্দেশ দিন।”

ধৈর্য ধরে মাথা নাড়ল প্রিচার। “না, টোরান। আমি স্বেচ্ছায় এসেছি, শুধু বোঝাতে এসেছি আপনারা যা করছেন তা কতখানি অকার্যকর। যদি বোঝাতে ব্যর্থ হই তা হলে চলে যাবো। ব্যস আর কিছু না।”

“আর কিছু না? বেশ, আপনার মতবাদ প্রচার করুন, বক্তৃতা শুনিয়ে বিদায় হোন। আমাকে চা দিও না, বেইটা।”

প্রিচার এক কাপ নিল, ধন্যবাদ জানাল গম্ভীর গলায়। চায়ে চুমুক দিয়ে সরাসরি তাকাল টোরানের দিকে, “ মিউল একটা মিউট্যান্ট। মিউট্যাশনের স্বাভাবিক প্রকৃতি বিচার করলে তাকে পরাজিত করা যাবে না।”

“কেন? কী ধরনের মিউট্যাশন?” ঝাঁজালো তিরস্কারের সুরে জিজ্ঞেস করল টোরান। “নিশ্চয়ই আপনি আমাদের জানাবেন, অ্যাঁ?”

“হ্যাঁ, জানাবো, আপনি জানলেও তার কোনো ক্ষতি হবে না। মিউল মানুষের ইমোশনাল ব্যালেন্স অ্যাডজাস্ট করতে পারে। সস্তা কৌশলের মতো শোনাচ্ছে। কিন্তু এটাকে প্রতিহত করা যায় না।”

“ইমোশনাল ব্যালেন্স?” বলল বেইটা, “একটু ব্যাখ্যা করবেন কি? আমি বুঝতে পারিনি।”

“আমি বলছি যে একজন দক্ষ জেনারেলের ভেতর যে-কোনো আবেগ-যেমন ধরা যাক, মিউলের প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য, বা মিউলের বিজয়ের প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের মতো আবেগ-নিবেদিত করা তার জন্য খুব সহজ। তার জেনারেলদের সবাই ইমোশন্যালি কন্ট্রোল্ড। ওরা কখনো বেঈমানি করতে পারবে না; কখনো দুর্বল হবে না-এবং এই কন্ট্রোল স্থায়ী। তার ভয়ংকর শত্রুও মুহূর্তের মধ্যে তার বিশ্বাসী অধীনস্থে পরিণত হয়। কালগানের ওয়ারলর্ড নিজ গ্রহ তার হাতে ছেড়ে দিয়ে এখন ফাউণ্ডেশন-এর ভাইসরয়।”

“আর আপনি,” বেইটার কথায় তিক্ততার ছাপ। “নিজের আদর্শের সাথে বেঈমানি করে ট্রানটরে মিউলের প্রতিনিধি। আই সি!”

“আমার কথা শেষ হয়নি। মিউলের ক্ষমতা উল্টো দিক থেকে কাজ করে আরো ভালো। হতাশা এক ধরনের ইমোশন! ঠিক সময় মতো, ফাউণ্ডেশন-এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা-হেভেনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা-হতাশায় ডুবে যায়। ঐ বিশ্বগুলো প্রায় বিনাযুদ্ধে পরাজিত হয়।”

“আপনি বলতে চান,” চাপা উত্তেজনায় কঠিন সুরে জিজ্ঞেস করল বেইটা। “টাইম ভল্টে যে অনুভূতি তার কারণ মিউল আমার ইমোশনাল কন্ট্রোল নিয়ে প্রতারণা করছিল।

“আমার, আপনার, সবার। হেভেনের শেষ দিনগুলো কেমন ছিল?”

মুখ ঘুরিয়ে নিল বেইটা।

আন্তরিকভাবে বলে চলেছে কর্নেল প্রিচার, “একটা বিশ্বের উপর যখন তার শক্তি কাজ করে, তখন একজনের উপর ও কাজ করবে। এমন একটা শক্তির বিরুদ্ধে আপনি কী করবেন যে শক্তি ইচ্ছে হলেই আপনার নিজের ইচ্ছায় আরসমর্পণ করাতে পারে; ইচ্ছে হলেই আপনাকে বানিয়ে নিতে পারে বিশ্বস্থ চাকর?”

“কথাগুলো যে সত্যি, আমি কীভাবে বুঝব?” ধীরে ধীরে বলল টোরান।

“ফাউণ্ডেশন বা হেভেন কেন পরাজিত হয়েছে আপনি বলতে পারবেন? আমার কনভার্সনের কোনো ব্যাখ্যা আপনি দিতে পারবেন? থিংক ম্যান, আমি-আপনি-বা পুরো গ্যালাক্সি মিউলের বিরুদ্ধে কী করতে পেরেছি এতদিনে?”

চ্যালেঞ্জ অনুভব করল টোরান, “বাই দ্য গ্যালাক্সি, আমি পারব!” হঠাৎ হিংস্র আত্মতৃপ্তিতে চিৎকার করে উঠল সে, “আপনার চমৎকার মিউল নিওট্রানটরের সাথে চুক্তি করেছিল। সেখানে আমাদের আটক করার কথা, তাই না? ওই কন্টাক্টগুলো এখন মৃত বা আরো খারাপ অবস্থায় আছে। ক্রাউন প্রিন্সকে আমরা মেরে ফেলেছি এবং অন্য লোকটাকে গর্দভ বানিয়ে রেখে এসেছি। মিউল আমাদের থামায়নি, চাইলেও পারত না।

“মোটেই না। ওরা আমাদের লোক ছিল না। ক্রাউন প্রিন্স ছিল সাধারণ এক মদ্যপ লোক। অন্য লোকটা ছিল আসলেই একটা গর্দভ। নিজের গ্রহে অনেক ক্ষমতা থাকলেও যোগ্যতা ছিল না। ওরা ছিল নিষ্ঠুর। আমাদের কাজ হত না।”

“ওরাই আমাদের বন্দি করেছিল বা করার চেষ্টা করেছিল।”

“আবারো না। কোম্যাসনের ব্যক্তিগত দাস-নাম ইচনী। বন্দি করার বুদ্ধিটা তারই। লোকটা বৃদ্ধ হলেও আমাদের সাময়িক উদ্দেশ্য পূরণ ঠিকই হয়েছে। ওকে আপনারা চেষ্টা করলেও মারতে পারতেন না।”

চরকির মতো পাঁক খেয়ে তার দিকে ঘুরল বেইটা। চায়ের কাপে একবারও চুমুক দেয়নি সে। “আপনার মন্তব্য অনুযায়ী, আপনার ইমোশন টেম্পার* [*মানসিক অবস্থা বা মেজাজ কোমল এবং শান্ত হওয়া বা করা] করা হয়েছে। মিউলের প্রতি আপনার আনুগত্য বিশ্বাস এক ধরনের মেকি এবং আরোপিত বিশ্বাস। আপনার মতামতের আর কোনো মূল্য নেই। বাস্তব বোধ বুদ্ধি হারিয়েছেন আপনি।”

“আপনার ধারণা ভুল,” ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল কর্নেল। “আমার ইমোশন শুধুমাত্র ফিক্সড। আমার যুক্তি বুদ্ধি ঠিক আগের মতোই আছে। হয়তো কন্ট্রোল্ড ইমোশনের কারণে একটা নির্দিষ্ট পথে চলতে প্রভাবিত হবে। কিন্তু সেটা সকল ধরনের চাপ মুক্ত। এবং এখন আমি অনেক কিছুই বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারছি, পূর্বের স্বাধীন ইমোশনাল ট্রেণ্ড দিয়ে যা বুঝতে পারিনি।”

“আমি এখন জানি যে মিউলের কর্মসূচি একটা চমৎকার বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনা। কনভার্ট করার পর থেকে আমি সাত বছর আগে তার পরিকল্পনার শুরু থেকে সবটাই জানতে পারি। মিউট্যান্ট মেন্টাল পাওয়ার দিয়ে সে প্রথমে একদল দস্যুকে বশীভূত করে। তাদের সাহায্যে-এবং নিজের ক্ষমতা দিয়ে সে একটা গ্রহ দখল করে। তার সাহায্যে-এবং নিজের ক্ষমতা দিয়ে নিজের হাত প্রসারিত করতে থাকে যতক্ষণ না কালগানের ওয়ারলর্ড তার বশীভূত হয়। প্রতিটা কাজের ভেতর যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা এবং যুক্তির ছাপ স্পষ্ট। কালগান নিজের পকেটে আসার পর তার হাতে চলে আসে একটা প্রথম শ্রেণীর ফ্লিট। এবং সেটার সাহায্যে-এবং নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে-সে ফাউণ্ডেশনে আক্রমণ করে।

“ফাউণ্ডেশন হচ্ছে মূল চাবিকাঠি। গ্যালাক্সির এই অংশই শিল্পে সর্বাধিক অগ্রসর। আর এখন যেহেতু ফাউণ্ডেশন-এর নিউক্লিয়ার কৌশল তার হাতে চলে এসেছে, সেই গ্যালাক্সির আসল মাস্টার। ঐ কৌশলের সাহায্যে-এবং নিজের ক্ষমতা দিয়ে-এম্পায়ারের অবশিষ্ট অংশকে আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য করবে। বৃদ্ধ সম্রাট এখন প্রায় উন্মাদ-বাঁচবে না বেশিদিন, এমনকি ছেলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়ও তার নেই। তারপর গ্যালাক্সির কোন বিশ্ব তার বিরোধীতা করতে পারবে?”

“গত সাত বছরে সে একটা এম্পায়ার গড়ে তুলেছে। সেলডনের সাইকোহিস্টোরি আগামী সাত শ বছরেও যা সম্পন্ন করতে পারবে না, মিউল তা পরবর্তী সাত বছরেই সম্পন্ন করবে। গ্যালাক্সিতে আবার ফিরে আসবে শান্তি এবং শৃঙ্খলা।

“আপনারা ঠেকাতে পারবেন না-কাঁধের ধাক্কায় একটা গ্রহকে কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতোই বোকামি এটা।”

প্রিচারের বক্তব্যের পর দীর্ঘ নীরবতা নেমে এল। কাপের অবশিষ্ট চা অনেক আগেই ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, সেটা খালি করে আবার পূরণ করে নিল। চুমুক দিতে লাগলো ধীরে সুস্থে। অন্যমনস্কভাবে বুড়ো আঙুলের নোখ খুটছে টোরান। বেইটার অভিব্যক্তি শীতল, চেহারা ফ্যাকাশে।

তারপর চিকন গলায় বেইটা বলল, “আমাদের কনভিন্স করতে পারেননি। যদি মিউল আমাদের চায় তা হলে তাকে নিজে এসে আমাদের কনভার্ট করতে হবে। আমার ধারণা, কনভার্সনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত আপনি লড়াই চালিয়ে গেছেন, তাই না।”

“হ্যাঁ,” কর্নেল প্রিচারের গম্ভীর জবাব।

“তা হলে আমরাও সেই সুযোগ চাই।”

উঠে দাঁড়াল কর্নেল প্রিচার। চূড়ান্ত গলায় বলল, “তা হলে বিদায়। আগেই বলেছি আমার বর্তমান মিশনের সাথে আপনাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কাজেই এখানে আপনাদের উপস্থিতি রিপোর্ট করার প্রয়োজন নেই। এটাকে দয়া বলে ভাববেন না। মিউল আপনাদের থামাতে চাইলে, নিঃসন্দেহে আরেকজনকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠাবে। আপনারা থামতে বাধ্য হবেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু করার দরকার নেই আমার।”

“ধন্যবাদ”, দুর্বলভাবে বলল বেইটা।

“ম্যাগনিফিসো, কোথায় সে? বেরিয়ে এসো, ম্যাগনিফিসো। আমি তোমাকে মারবো না-”

“ওকে নিয়ে কী করবেন?” হঠাৎ উদ্দীপনার সাথে জিজ্ঞেস করল বেইটা।

“কিছুই না। ওর ব্যাপারে ও কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। শুধু জানি যে ওকে খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু সময় হলে মিউল ঠিকই খুঁজে নেবে। আমি কিছুই বলব না। আপনারা হাত মেলাবেন না আমার সাথে?”

মাথা নাড়ল বেইটা, টোরান তার হতাশ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল।

কর্নেলের ইস্পাতের মতো দৃঢ় কাঁধ সামান্য ঝুলে পড়েছে। দরজার সামনে গিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াল :

“আরেকটা কথা, ভাববেন না যে আপনাদের আরবিশ্বাসের কারণ আমি জানি না। সবাই জানে আপনারা সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন খুঁজছেন। মিউল সময় মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কোনো কিছুই আপনাদের সাহায্য করবে না কিন্তু আপনাদের আমি অন্য এক সময়ে চিনতাম, হয়তো আমার চেতনার কোনো একটা বোধ কাজটা করতে আমাকে বাধ্য করেছে; আমি আপনাদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি, চূড়ান্ত বিপদ হওয়ার আগেই চেষ্টা করেছি সরিয়ে নেওয়ার, গুড বাই।”

স্যালুট করে চলে গেল সে।

মূর্তির মতো নীরব নিশ্চল টোরানের দিকে ঘুরে ফিসফিস করে বলল বেইটা, “ওরা সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন-এর কথাও জানে।”

লাইব্রেরির এক গুপ্তস্থানে উপরের ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাপারে অচেতন এবলিং মিস ঘোড় অন্ধকারাচ্ছন্ন কুঠুরীর ভেতরে আলো জ্বালিয়ে বিজয়ের আনন্দে আপন মনে বিড় বিড় করে উঠল।

*