দ্বিতীয় পর্ব : দ্য মিউল - ২৫. সাইকোলজিস্টের মৃত্যু
ওই ঘটনার পর এবলিং মিস বেঁচেছিল মাত্র দুই সপ্তাহ।
এবং ওই দুই সপ্তাহে তার সাথে বেইটার দেখা হয়েছে মাত্র তিনবার। প্রথমবার, কর্নেল প্রিচার যেদিন এসেছিল সেই রাতে। দ্বিতীয়বার এক সপ্তাহ পরে। তৃতীয়বার আরো একসপ্তাহ পরে-শেষদিন-যেদিন মিস মারা যায়।
প্রথম, কর্নেল প্রিচার যে সন্ধ্যায় আসে সেই রাতের প্রথম কয়েক ঘণ্টা কাটে নিরানন্দ ভাবে।
“টোরি, চলো এবলিংকে সব জানাই।”
“তোমার ধারণা ওতে লাভ হবে?” টোরানের নিষ্প্রভ জিজ্ঞাসা।
“আমরা মাত্র দুজন। এই অসহনীয় স্নায়বিক চাপ অনেক বেশি। হয়তো সে সাহায্য করতে পারবে।”
“লোকটা বদলে গেছে অনেক। অল্প কয়েক দিনেই শুকিয়ে কেমন পাখির মতো হালকা হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় সে আমাদের সাহায্য করতে পারবে না-কোনোদিন। মাঝে মাঝে মনে হয়, কোনোকিছুই আর আমাদের সাহায্য করতে পারবে না।
“ওভাবে বলো না, টোরি। এরকম কথা শুনলে মনে হয় মিউল আমাদের ধরতে আসছে। চলো এবলিংকে জানাই সব-এক্ষুনি”
লম্বা ডেস্ক থেকে মাথা তুলে ঢুলু ঢুলু চোখে ওদের এগিয়ে আসতে দেখল এবলিং। তার পাতলা চুল এলোমেলো, কথা জড়িয়ে যাচ্ছে।
“কেউ দেখা করবে আমার সাথে?”
হাঁটু গেড়ে তার পাশে বসল বেইটা, “আমরা কী আপনার ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম? চলে যাবো?”
“চলে যাবে? কে? বেইটা? না, না, থাকো! ওখানে চেয়ার আছে না? আমি দেখতে পাচ্ছি-” আঙুল তুলে অস্পষ্টভাবে নির্দেশ করল একদিকে।
ঠেলে দুটো চেয়ার সামনে আনল টোরান। তাতে বসে সাইকোলজিস্ট এর শীর্ণ একখানা হাত নিজের হাতে তুলে নিল বেইটা, “আপনার সাথে কথা বলা যাবে, ডক্টর?” টাইটেল ধরে আগে কখনো সম্বোধন করেনি সে।
“কিছু হয়েছে?” তার নিষ্প্রাণ চোখে কিছুটা সজীবতা ফিরে এল, রং ফিরে এল ফ্যাকাশে চোয়ালে। “কিছু হয়েছে?”
“ক্যাপ্টেন প্রিচার এসেছিলেন। আমাকে বলতে দাও, টোরি। ক্যাপ্টেন প্রিচারের
“হ্যাঁ-হ্যাঁ-” ঠোঁটে চিমটি কেটে আবার ছেড়ে দিল মিস। “লম্বা লোক। ডেমোক্র্যাট।”
“হ্যাঁ। মিউলের মিউট্যাশনের ব্যাপারটা সে ধরতে পেরেছে। আমাদের জানাতে এসেছিল।”
“কিন্তু ওটা তো নতুন কিছু না। অনেক আগেই জানা হয়ে গেছে। প্রকৃতই বিস্মিত সে। “আমি তোমাদের জানাইনি? বলতে ভুলে গেছি?”
“কী বলতে ভুলে গেছেন?” দ্রুত জিজ্ঞেস করল টোরান।
“অবশ্যই মিউলের মিউট্যাশনের ব্যাপারটা। হি টেম্পারস উইথ ইমোশন। ইমোশনাল কন্ট্রোল! তোমাদের জানাইনি? ভুলে গেলাম কেন?” নিচের ঠোঁট মুখে পুরে ভাবতে লাগল সে।
ধীরে ধীরে সজীবতা ফিরে এল তার কণ্ঠে, চোখের পাতাগুলো চওড়া হল, যেন তার বিমুঢ় মস্তিষ্ক চট করে তেলতেলে মসৃণ এক পথে চলতে শুরু করেছে। কথা বলছে স্বপ্নে পাওয়া মানুষের মতো। শ্রোতাদের কারো দিকেই নির্দিষ্ট করে তাকাল না, বরং তাকাল দুজনের মাঝখানে। “আসলে খুব সহজ। কোনো বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে না। সাইকোহিস্টোরি গণিতের তৃতীয় মাত্রার সমীকরণের সাহায্যে দ্রুত নির্ণয় করা যাবে-কিছু মনে করো না। পুরো ব্যাপারটা সবার বোধগম্য ভাষায় রূপান্তর করা যাবে-সহজ কথায়-এবং যুক্তির ভিত্তিতে-সাইকোহিস্টোরিক্যাল ফেনোমেনার সাথে পুরোপুরি বেমানান।
“নিজেকেই প্রশ্ন করো-হ্যারি সেলডনের সযত্নে গড়ে তোলা স্কিম তথা হিস্টোরিকে কোন জিনিসটা আপসেট করতে পারবে, হাহ?” পিটপিট করে পালাক্রমে দুজনের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতে লাগল সে। “সেলডনের মূল অনুমিতি কী ছিল? প্রথম, এক হাজার বছরের মধ্যে মানব সমাজের মৌলিক কোনো পরিবর্তন হবে না।”
“এখন ধরা যাক, গ্যালাক্সির টেকনোলজিতে অনেক বড় পরিবর্তন দেখা দিল, যেমন, এনার্জি ব্যবহারের সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতির আবিষ্কার, যা ইলেকট্রনিক নিউরোবায়োলজির চূড়ান্ত উৎকর্ষতা। সামাজিক পরিবর্তনের কারণে সেলডনের মূল সমীকরণগুলো অকার্যকর হয়ে পড়বে। কিন্তু সেরকম কিছু ঘটেনি, ঘটেছে?”
“আবার ধরা যাক, ফাউণ্ডেশন-এর বাইরের কোনো শক্তি ভয়ংকর এক অস্ত্র তৈরি করল যা দিয়ে ফাউণ্ডেশন-এর সকল অস্ত্র থামানো সম্ভব। সেই কারণে হয়তো একটা ধ্বংসারক পরিবেশ তৈরি হত, যদিও সম্ভাবনা কম। কিন্তু সেরকম কিছুও ঘটেনি। মিউলের নিউক্লিয়ার ফিল্ড ডিপ্রেসর নিচুমানের অস্ত্র এবং প্রতিহত করা কঠিন কিছু না। এক মাত্র এখানেই সে শক্তির পরিচয় দিয়েছে, যদিও দুর্বলভাবে।
“কিন্তু দ্বিতীয় একটা অনুমিতি আছে। অনেক বেশি সূক্ষ্ম! সেলডন ধরে নিয়েছেন উদ্দীপনার সাথে মানুষের আচরণ স্থির থাকবে। মেনে নিলাম, প্রথম অনুমিতিটা সঠিক, তা হলে কোনো-না-কোনোভাবে দ্বিতীয় অনুমিতিটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো উপাদান নিশ্চয়ই মানবজাতির ইমোশনাল রেসপন্স এর ভিত নড়িয়ে দিয়েছে, নইলে সেলডন ব্যর্থ হতেন না এবং ফাউণ্ডেশন-এর ও পতন ঘটত না। এবং সেই উপাদান মিউল ছাড়া আর কী হতে পারে?
“ঠিক বলেছি? আমার রিজনিং এ কোনো ভুল আছে?”
সুডৌল হাত পিঠে বুলিয়ে তাকে আশ্বস্ত করতে লাগল বেইটা, “কোনো ভুল নেই, এবলিং।”
শিশুর মতো উফুল্ল হল মিস। “এরকম অনেক কিছুই এখন সহজে বুঝতে পারি। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি আমার ভেতরে কী ঘটছে এসব। আগে যা ছিল কঠিন রহস্য, এখন সেগুলোই জলের মতো সহজ। কোনো সমস্যা নেই। আমার অনুমান, থিওরি সবই যেন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে জন্ম নিচ্ছে। ভেতরের একটা শক্তি আমাকে চালাচ্ছে…ফলে থামতে পারছি না…আমার খেতে বা ঘুমাতে ইচ্ছা করেনা…শুধু কাজ…আর কাজ…আর কাজ…”
কণ্ঠস্বর ফিসফিসানিতে পরিণত হল; নীল শিরা বের হয়ে যাওয়া দুর্বল হাত আলতোভাবে ফেলে রেখেছে কপালের উপর। দৃষ্টিতে একটা উন্মাদনা এসেই চলে গেলো।
আগের চেয়ে শান্ত গলায় বলল, “তো, মিউলের মিউট্যাশনের ব্যাপারটা তোমাদের জানাইনি, তাই না? কিন্তু… তোমরা জানো?”
“ক্যাপ্টেন প্রিচার, এবলিং, মনে আছে?”
“ও তোমাদের বলেছে?” কণ্ঠে রাগের ছোঁয়া। কিন্তু জানল কীভাবে?”
“মিউল তাকে কণ্ডিশনড করে ফেলেছে। এখন সে কর্নেল, মিউলের অনুগত। সে আমাদের বোঝাতে এসেছিল যেন মিউলের কাছে আরসমর্পন করি। এবং সে তাই বলেছে-আপনি যা বললেন।”
“তা হলে মিউল জানে আমরা এখানে? দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে-ম্যাগনিফিসো কোথায়? তোমাদের সাথে নেই।?”।
“ঘুমাচ্ছে। মাঝরাত পেরিয়ে গেছে, আপনি জানেন।” অধৈর্য গলায় বলল টোরান।
“তাই? তোমরা যখন আসে তখন কী আমি ঘুমাচ্ছিলাম?”
“হ্যাঁ। এখন আর কাজ করতে পারবেন না। সোজা বিছানায়। টোরি, একটু সাহায্য করো। আমাকে ধাক্কা দিয়ে লাভ হবে না, এবলিং, ভাগ্য ভালো যে আপনাকে শাওয়ারের নিচে দাঁড়া করাইনি। জুতোগুলো খুলে দাও, টোরি, আর আগামী কাল তুমি এসে পুরোপুরি ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়ার আগেই উনাকে খোলা বাতাসে ঘুরিয়ে আনবে। নিজের অবস্থা একবার দেখুন, এবলিং, কেমন বুড়িয়ে গেছেন। খিদে পেয়েছে?”
মাথা নাড়ল এবলিং এবং ঘুম জড়ানো চোখে বিছানা থেকে তাকাল। “আগামী কাল ম্যাগনিফিসোকে পাঠাবে।”
বেড শিটটা ভালো করে ঘাড়ের কাছে গুঁজে দিল বেইটা। “আগামী কাল আমি নিজে আসব পরিষ্কার কাপড় নিয়ে। প্রথমে গোসল করবেন, তারপর ফার্মগুলোতে বেড়াতে যাবেন। গায়ে সূর্যের আলো লাগাবেন।”
“আমি পারবো না, দুর্বল গলায় বলল মিস। “শুনেছো? আমি ভীষণ ব্যস্ত।”
তার লম্বা চুলগুলো বালিশের উপর মাথার চার পাশে রুপোলী তারের মতো ছড়িয়ে আছে। এমনভাবে ফিসফিস করল যেন গোপন সংবাদ জানাচ্ছে, “তোমরা সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন পেতে চাও, তাই না?”
দ্রুত তার বিছানার পাশে এসে দাঁড়াল টোরান, “সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন? বলুন এবলিং।”
বেডশিটের নিচ থেকে একটা হাত বের করে দুর্বল আঙুল দিয়ে টোরানের আস্তিন আঁকড়ে ধরল মিস। “হ্যারি সেলডনের সভাপতিত্বে একটা সাইকোলজিক্যাল সম্মেলনে ফাউণ্ডেশনগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঐ সম্মেলনের ছাপানো প্রতিবেদন গুলো পেয়েছি। পঁচিশটা মোটা মোটা ফিল্ম। এরই মধ্যে ভালোভাবে চোখ বুলিয়েছি।”
“তো?”
“তো, ফার্স্ট ফাউণ্ডেশন বের করা খুব সহজ। যদি তুমি সাইকোহিস্টোরি জানো। সমীকরণগুলো বুঝতে পারলে দেখবে বারবার ওটার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু টোরান, সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন-এর কথা কেউ বলেনি। ওটার ব্যাপারে কোথাও কোনো রেফারেন্স নেই।”
“তা হলে নেই?”
“অবশ্যই আছে,” রাগে চিৎকার করল মিস “কে বলেছে নেই? কিন্তু ওটার ব্যাপারে বলা হয়েছে খুব কম। ওটার গুরুত্ব এবং সবকিছু-গোপন থাকলেই ভালো, রহস্যের আড়ালে থাকাই ভালো। বুঝতে পারছো না? দুটোর মধ্যে ওটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর সেলডন সম্মেলনের সব প্রতিবেদন আমি পেয়েছি। মিউল এখনো জিততে পারেনি।”
দৃঢ়তার সাথে আলো নিভিয়ে দিল বেইটা। “ঘুমান!”
নিঃশব্দে উপরের শোবার ঘরে ফিরে এল বেইটা আর টোরান।
পরের দিন এবলিং মিস গোসল করে নিজে নিজেই পোশাক পরল। বেরিয়ে ট্রানটরের সূর্য দেখল, গায়ে লাগলো ট্র্যানটরের বাতাস। দিন শেষে ফিরে এসে আবার ঢুকল লাইব্রেরির বিশাল কুঠুরিতে। আর কোনোদিন বেরোয়নি সেখান থেকে।
.
পরের সপ্তাহে, জীবন যথা নিয়মে বয়ে চলেছে। নিত্ত ট্রানটরের সূর্য ট্রানটরের রাতের আকাশে নিরুত্তাপ, উজ্জ্বল নক্ষত্র। ফার্মগুলো ব্যস্ত বসন্তকালীন চাষাবাদের কাজে। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর মরুভূমির মতো নীরব। গ্যালাক্সি একেবারে ফাঁকা। যেন মিউলের কোনো অস্তিত্ব ছিল না কোনো কালে।
বেইটা ভাবছে। টোরান একটা সিগারেট ধরাল। দিগন্ত ঘিরে থাকা অগণিত গম্বুজের ফাঁকে একটুকরো নীল আকাশ চোখে পড়ে। সেদিকে তাকিয়ে টোরান বলল, “দিনটা খুব চমৎকার।”
“হ্যাঁ। লিস্টের সবকিছু দেখে নিয়েছ, টোরি?”
“নিশ্চয়ই। আধা পাউণ্ড মাখন, কয়েক ডজন ডিম, সিম-সব আছে এখানে। কোনো ভুল হবে না।”
“চমৎকার। দেখো সবজিগুলো যেন তাজা হয়, জাদুঘরের প্রাচীন নিদর্শন নিয়ে এসো না আবার। ভালো কথা, ম্যাগনিফিসোকে দেখেছো?”
“সকালের নাস্তার পরে তো আর দেখিনি। বোধহয় এবলিং মিস এর সাথে নিচে আছে। বুক ফিল্ম দেখছে কোনো।”
“ঠিক আছে। সময় নষ্ট করো না; ডিনারের জন্য ডিমগুলো লাগবে আমার।”
মৃদু হাসি এবং হাত নেড়ে চলে গেল টোরান।
ধাতব জঙ্গলের ওপাশে টোরান চলে যাওয়ার পর ফিরল বেইটা। কিছুক্ষণ ইতস্তত করল রান্নাঘরের দরজার সামনে। তারপর ঘুরে সরাসরি এগোল নিচের কুঠুরীগুলোতে নামার এলিভেটরের দিকে।
প্রজেক্টরের আইপিসে চোখ ঠেকিয়ে স্থাণুর মতো বসে আছে এবলিং। তার পাশেই একটা চেয়ারে আঠার মতো সেটে আছে ম্যাগনিফিসো, তীক্ষ্ণ ধারালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিস এর দিকে।
কোমলগলায় ডাকল বেইটা, “ম্যাগনিফিসো।” লাফিয়ে দুপায়ে সোজা হল ম্যাগনিফিসো, আন্তরিক সুরে জবাব দিল, “মাই লেডি!”
“ম্যাগনিফিসো, টোরান ফার্মের দিকে গেছে। ফিরতে দেরি হবে। তুমি কী একটা মেসেজ নিয়ে লক্ষ্মী ছেলের মতো ওর কাছে যাবে? আমি লিখে দিচ্ছি।”
“সানন্দে, মাই লেডি। আপনাকে খুশি রাখার জন্য আমি সব করতে পারি।”
মিস এর সাথে এখন সে একা, লোকটা একবিন্দু নড়েনি, তার কাঁধে দৃঢ়ভাবে হাত রেখে ডাক দিল সে, “এবলিং-”
জড়ানো কান্নার সুরে জবাব দিল সাইকোলজিস্ট, “কী ব্যাপার?” নাক কুঁচকালো। “বেইটা তুমি? ম্যাগনিফিসো কোথায়?”
“একটু বাইরে পাঠিয়েছি। আপনার সাথে কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই।” প্রতিটা শব্দ আলাদা আলাদা করে উচ্চারণ করল সে। “আপনার সাথে কথা বলতে চাই এবলিং।”
আবার প্রজেক্টরের দিকে ফেরার চেষ্টা করল সাইকোলজিস্ট, কিন্তু কাঁধের হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে তাকে। পোশাকের নিচে হাড়গুলো স্পষ্ট অনুভব করল বেইটা। ট্রানটরে আসার পর তার গায়ের মাংসগুলো যেন স্রেফ উবে গেছে। মুখটা পাতলা, হলুদ বর্ণ, দু সপ্তাহের না কামানো দাড়ি। কাঁধ দুটো বেশ ঝুলে পড়েছে। বসে থাকা অবস্থাতেও সেটা বেশ বোঝা যায়।
“ম্যাগনিফিসো আপনাকে বিরক্ত করছে না তো, এবলিং? দিন রাত তো আপনার সাথে পড়ে থাকে।”
“না, না, না! মোটেই না। কেন? ও থাকলে আমার কোনো অসুবিধা নেই। চুপচাপ বসে থাকে, আমাকে বিরক্ত করে না। মাঝে মাঝে আমাকে ফিল্মগুলো এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করে; যেন বলার আগেই সে জানে কখন কোনটা দরকার। ওকে থাকতে দাও?”
“ঠিক আছে-কিন্তু, এবলিং, ও আপনাকে অবাক করে না? আমার কথা শুনছেন? ও আপনাকে অবাক করে না?”
মাথা ঝাঁকালো এবলিং মিস। “না। কী বোঝাতে চাও?”
“বোঝাতে চাই, কর্নেল প্রিচার এবং আপনি দুজনেই বলেছেন মিউল মানুষের ইমোশন কণ্ডিশন করতে পারে। কিন্তু আপনি কী নিশ্চিত? মনে হয় না এই থিওরির মাঝে ম্যাগনিফিসো একটা ভ্রান্তি?”
নীরবতা।
সাইকোলজিস্টকে ধরে ঝাঁকুনি দেওয়ার একটা প্রবল ইচ্ছা দমন করল বেইটা। “কী হয়েছে আপনার, এবলিং? ম্যাগনিফিসো ছিল মিউলের ক্লাউন। তা হলে তাকে কণ্ডিশনড করে তার আবেগকে অনুরাগ এবং বিশ্বাসে পরিণত করা হয়নি কেন।”
“কিন্তু…কিন্তু তাকে অবশ্যই কণ্ডিশনড করা হয়েছে, বে! তোমার কী ধারণা জেনারেলদের যেভাবে বিচার করে ক্লাউনকেও একইভাবে বিচার করবে মিউল? পরের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন আনুগত্য এবং বিশ্বাস, কিন্তু ক্লাউনের ক্ষেত্রে তার শুধু প্রয়োজন ভয়। তুমি লক্ষ্য করোনি যে ম্যাগনিফিসোর অবিরাম আতঙ্ক অনেকাংশেই শারীরিক? তোমার কী মনে হয় একজন মানুষের সবসময় আতঙ্কিত হয়ে থাকাটা স্বাভাবিক? এরকম সীমাহীন ভয় কৌতুকে পরিণত হয়। সম্ভবত মিউলের কাছে এটা ছিল কৌতুকের বিষয়-এবং প্রয়োজনীয় যেহেতু এটা ম্যাগনিফিসোর কাছ থেকে আমাদের সাহায্য পাবার আশা কমিয়ে দেবে।
“তার মানে মিউলের ব্যাপারে ম্যাগনিফিসো আমাদের যা বলেছে তা মিথ্যে?”
“আমাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে। শারীরিক ভয়ের আবরণ দিয়ে আসল সত্যটার উপর রং চড়ানো হয়েছে। ম্যাগনিফিসো যেমন বর্ণনা করেছে শারীরিক দিক দিয়ে মিউল ওরকম ভয়ংকর কিছু না। মেন্টাল পাওয়ার বাদ দিলে সে অতি অতি সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু ম্যাগনিফিসোর কাছে নিজেকে সুপারম্যান হিসাবে উপস্থাপন করে সে মজা পায়-শ্রাগ করল মিস। “ম্যাগনিফিসোর দেওয়া তথ্যের আর কোনো গুরুত্ব নেই।”
“তা হলে কী?”
কিন্তু ঝাড়া দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল মিস। ফিরে গেল প্রজেক্টরে।
“তা হলে কী? সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন?”
ঝট করে চোখ ফেরালো সাইকোলজিস্ট। “ওই সম্বন্ধে তোমাদের কিছু বলেছি। মনে পড়ছে না। সময় হয়নি এখনো। কী বলেছি?”
“কিছুই না,” জবাব দিল বেইটা। “ওহ, গ্যালাক্সি আপনি কিছুই বলেননি, কিন্তু আমি শুনতে চাই, কারণ আমি ভীষণ ক্লান্ত। কখন শেষ হবে এইসব কিছু?”
কিছুটা অনুতপ্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল এবলিং মিস, “বেশ, মাই…মাই ডিয়ার। তোমাকে আমি কষ্ট দিতে চাইনি। মাঝে মাঝে আমি ভুলে যাই…কারা আমার বন্ধু। মাঝে মাঝে মনে হয় কোনো কথাই আমার বলা উচিত নয়। গোপনীয়তার প্রয়োজন আছে কিন্তু মিউলের কাছ থেকে তোমার কাছ থেকে না, মাই ডিয়ার।” বেইটার কাঁধে হাত বুলিয়ে শান্তনা দিতে লাগল সে।
“সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন-এর ব্যাপারে কদুর জানেন?”
নিজের অজান্তেই ফিসফিস করতে লাগলো সে। “তুমি জানো সেলডন কীভাবে পুরো ব্যাপারটা গোপন রেখেছেন? সেলডন সম্মেলনের রিপোর্টগুলো আমাকে মোটেই সাহায্য করেনি। অন্তত আমার ভেতরে একটা অদ্ভুত উপলব্ধি না আসা পর্যন্ত। এখনো সেটাকে মনে হয়-অস্পষ্ট। সম্মেলনের প্রতিবেদনগুলো অপ্রাসঙ্গিক; সবসময় অস্পষ্ট। অনেকবারই আমার মনে হয়েছে, ওই সম্মেলনে যারা যোগ দিয়েছে তারা পর্যন্ত জানতো না কী আছে সেলডনের মনে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়েছে সম্মেলনটাকে সেলডন ব্যবহার করেছেন একটা ঢাল হিসেবে এবং পুরো কাঠামোেটা তৈরি করেছেন তিনি একা-”
“ফাউণ্ডেশনগুলোর?”
“সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন-এর! আমাদের ফাউণ্ডেশন একেবারেই সাধারণ। কিন্তু সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন শুধুই একটা নাম। ওটার বিস্তারিত পরিচয় লুকিয়ে আছে জটিল গণিতের ভেতর। এখনো অনেক ব্যাপার বুঝতে পারছি না কিন্তু গত সাতদিন থেকে সেগুলো পরিষ্কার হতে শুরু করেছে, একটা অস্পষ্ট ছবি তৈরি হচ্ছে।
“এক নম্বর ফাউণ্ডেশন হল ফিজিক্যাল সায়েন্টিস্টদের বিশ্ব। গ্যালাক্সির মৃতপ্রায় বিজ্ঞানকে এখানে জমিয়ে রাখা হচ্ছে যেন নির্দিষ্ট শর্তাধীনে আবার বাঁচিয়ে তোলা যায়। কোনো সাইকোলজিস্ট পাঠানো হয়নি। অদ্ভুত হলেও নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য আছে। সাধারণ ব্যাখ্যা হল, সেলডনের সাইকোহিস্টোরি তখনই ভালো মত কাজ করবে যখন পৃথক কার্যকরী এককগুলো-হিউম্যান বিয়িং–জানবে না অনাগত ভবিষ্যতে কী হবে, এবং পরিস্থিতির সাথে স্বাভাবিক আচরণ করবে। বুঝতে পারছো, মাই ডিয়ার”
“হ্যাঁ, ডক্টর।”
“তা হলে মন দিয়ে শোন। দুই নাম্বার ফাউণ্ডেশন হল মেন্টাল সায়েন্টিস্টদের বিশ্ব। আমাদের বিশ্বের মিরর ইমেজ। ফিজিক্স নয়, সাইকোলজিই হচ্ছে মূল ক্ষমতা। বুঝতে পারছ।”
“না।”
“চিন্তা করো, বেইটা মাথা খাটাও। সেলডন জানতেন যে তার সাইকোহিস্টোরি শুধু সম্ভাবনার কথা বলতে পারে। নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারে না। সবসময়ই ভুলের একটা সীমা ছিল। সময়ের সাথে সেই সীমা বৃদ্ধি পেয়েছে জ্যামিতিক হারে। স্বভাবতই সেলডন যতদূর পেরেছেন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমাদের ফাউণ্ডেশন সাইন্টিফিক্যালি প্রচণ্ড শক্তিশালী। এটা যে-কোনো আর্মি বা অস্ত্রকে পরাজিত করতে পারে। শক্তির বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু মিউলের মতো একজন মিউট্যান্ট এর মেন্টাল অ্যাটাকের বিরুদ্ধে কী করতে পারে?”
“সেটা ঠেকানোর দায়িত্ব সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন-এর সাইকোলজিস্টদের!” উত্তেজনা বোধ করল বেইটা।
“হ্যাঁ, হা, হা! অবশ্যই!”
“কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কিছুই করেনি।”
“কিছুই যে করেনি, তুমি কীভাবে জানো?”
চিন্তা করল বেইটা। “জানি না। আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে?”
“না। অনেক ব্যাপারই আমি জানি না। সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন- একেবারে তৈরি অবস্থায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমাদের মতোই চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে এগোতে হয়েছে। নক্ষত্রই জানে এখন তারা কতখানি শক্তিশালী। তারা কী মিউলকে ঠেকানোর মতো শক্তিশালী হতে পেরেছে? সবচেয়ে বড় কথা তারা কী মিউল নামক বিপদের ব্যাপারে সচেতন? তাদের কী যোগ্য কোনো নেতা আছে?”
“কিন্তু যদি তারা সেলডন প্ল্যান অনুসরণ করে, তা হলে সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন অবশ্যই মিউলকে ঠেকাবে।”
“আহ,” মিস এর মুখে চিন্তার ভাজ, “সেই একই কথা? কিন্তু সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন প্রথমটার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। অনেক অনেক বেশি জটিলতা, এবং সেইসাথে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা। এবং যদি সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন মিউলকে পরাজিত না করতে পারে, তা হলে খুব ভয়ংকর অবস্থা-সত্যিই ভয়ংকর। সম্ভবত মানব জাতির পরিসমাপ্তি।”
“না।”
“হ্যাঁ। যদি মিউলের বংশধররাও তার মতো ক্ষমতা পায়-বুঝতে পারছ? হোমা স্যাফিয়েন্সরা বাধা দিতে পারবে না। তখন একটা কর্তৃত্বশালী জাতির উদ্ভব ঘটবে-একটা নতুন শাসকগোষ্ঠী-সেইসাথে মানুষ পরিণত হবে নিচু জাতের দাস শ্ৰেণীতে। তাই না?”
“হ্যাঁ।”
“আর যদি মিউল একটা ডাইন্যাস্টি স্থাপন করতে সক্ষম নাও হয়, সে তার ক্ষমতা দিয়ে একটা জঘন্য সাম্রাজ্য তৈরি করবে। তার মৃত্যুর পরেই এটা শেষ হয়ে যাবে। সে আসার আগে গ্যালাক্সি সেখানে ফিরে যাবে যেখানে শুধু তখন আর কোনো ফাউণ্ডেশন থাকবে না একটা সুসংগঠিত শক্তিশালী সেকেণ্ড এম্পায়ার গড়ে ভোলার জন্য। অর্থাৎ হাজার বছরের অরাজকতা। তার মানে দাঁড়ায় কোনো দিকেই ভরসা নেই।”
“কী করতে পারি আমরা? সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশনকে সতর্ক করে দেওয়া যায় না।?” |||||||||| “করতেই হবে, নইলে ওরা না জেনেই বিপদে পড়বে, সেই ঝুঁকি নেওয়া যাবে । কিন্তু তাদেরকে সতর্ক করার কোনো উপায় নেই।”
“কোনো উপায় নেই?”
“ওদের অবস্থান আমি জানি না। দে আর অ্যাট দ্য আদার এণ্ড অব দ্য গ্যালাক্সি’ ব্যাস এইটুকুই। এই কথাটার হাজার রকম অর্থ হয়।”
“কিন্তু এবলিং, ওখানে কিছু নেই।” অস্পষ্টভাবে মোটা মোটা ফিল্মগুলো দেখাল সে।
“না, নেই। যেখানে আমি খুঁজে পেতে পারি, সেখানে নেই। এই গোপনীয়তার নিশ্চয়ই কোনো অর্থ আছে। অবশ্যই কোনো কারণ আছে-” আবার একটা বিমুঢ় ভাব ফিরে এল দৃষ্টিতে। “তুমি এখন যাও। অনেক সময় নষ্ট করেছি আর সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে-সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।”
চোখের পিঁচুটি পরিষ্কার করে ভুরু কুঁচকালো সে।
ম্যাগনিফিসোর মৃদু পায়ের শব্দ শোনা গেল, “আপনার স্বামী বাড়ি ফিরেছে মাই লেডি।”
এবলিং মিস ক্লাউনকে কিছু বলল না। মনযোগ দিল প্রজেক্টরে।
সন্ধ্যায় সব শুনে মন্তব্য করল টোরান। “তোমার মতে ওর কথায় কোনো ভুল নেই, বে? সে আসলেই-” ইতস্তত করল।
“সে ঠিকই বলেছে। সে অসুস্থ-আমি জানি। যে পরিবর্তন, ওজন কমে যাওয়া, কথা বলার ভঙ্গি-সে অসুস্থ। কিন্তু মিউল বা সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন-এর বিষয়টা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত, ওর কথা শোেন। আউটার স্পেসের আকাশের মতোই পরিষ্কার সে। সে জানে কী নিয়ে কথা বলছে। আমি তাকে বিশ্বাস করি।”
“তা হলে আশা আছে।” অর্ধেক মন্তব্য অর্ধেক স্বগতোক্তির মতো শোনাল কথাটা।
“আমি…আমি জানি না। হয়তো! হয়তো না! এখন থেকে আমি একটা ব্লাস্টার রাখব সাথে।” চকচকে ব্যারেলের অস্ত্রটা হাতে নিয়ে দেখাল সে, যদি টোরি। যদি-”
“যদি কী?”
হিস্টিরিয়া গ্রস্তের মতো হাসল বেইটা। “কিছু মনে করো না। হয়তো আমিও একটু পাগলামি করছি-এবলিং মিস এর মতো।”
তারপর এবলিং মিস এর জীবনের বাকি ছিল মাত্র সাত দিন। সেই সাতদিনও পেরিয়ে গেল একটার পর একটা নিঃশব্দে।
টোরানের কাছে মনে হল চারপাশে কেমন একধরনের নেশায় আচ্ছন্ন ভাব। উষ্ণ দিন এবং নীরব নিঃশব্দতা তাকে আলস্যে ভড়িয়ে তুলল। যেন জীবনের সব বৈচিত্র্য হারিয়ে গেছে, পরিণত হয়েছে অসীম শীত নিদ্রায়।
মিস পুরোপুরি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। তার অসম্ভব পরিশ্রম থেকে এখনো কিছু ফল লাভ হয়নি। বেইটা বা টোরান কেউ তাকে দেখছে না। শুধু ম্যাগনিফিসোর যাওয়া আসা দেখে বোঝা যায় সে এখনো বেঁচে আছে। ম্যাগনিফিসোও অনেক বদলে গেছে। গম্ভীর চিন্তামগ্ন, খাবার নিয়ে গিয়ে উজ্জ্বল তীক্ষ্ণ চোখে শুধু তাকিয়ে থাকে।
বেইটা গুটিয়ে গেছে নিজের ভেতর। আগের সেই প্রাণোচ্ছলতা নেই, আরবিশ্বাসে চিড় ধরেছে। সে নিজেও দুঃশ্চিন্তা কমানোর জন্য সঙ্গীর কাছে আশ্রয় খোঁজে। এবং যখন টোরান ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গনে ধরে রেখে ব্লাস্টারে আঙুল বোলাচ্ছিল, সে দ্রুত সরিয়ে নেয় অস্ত্রটা, তারপর জোর করে হাসে।
“এটা দিয়ে তুমি কী করবে, বে?”
“শুধু কাছে রাখছি। সেটা কোনো অপরাধ?”
“একদিন তোমার মোটা মাথাটাই উড়ে যাবে।”
“গেলে যাবে। খুব বেশি ক্ষতি হবে না।” বিবাহিত জীবন টোরানকে শিখিয়েছে যে যখন স্ত্রীর মুড ভালো থাকে না তখন তার সাথে তর্ক করাই ভালো। সে একটু শ্রাগ করে চলে গেল।
শেষ দিন, ওদের উপস্থিতিতে ভয়ে আতকে উঠল ম্যাগনিফিসো। সন্ত্রস্তভাবে আঁকড়ে ধরল তাদের। “জ্ঞানী ডক্টর আপনাদের ডাকছে। তার শরীর ভালো নেই।
আসলেই অসুস্থ। বিছানায় শোয়া। চোখগুলো অস্বাভাবিক রকম বড়, অস্বাভাবিক উজ্জ্বল। চেনাই যাচ্ছে না।
“এবলিং!” কেঁদে ফেলল বেইটা।
“আমাকে কথা বলতে দাও,” মিনমিনে গলায় বলল সাইকোলজিস্ট, দুর্বল বাহুতে ভর দিয়ে খানিকটা উঁচু হল। “বলতে দাও। আমি শেষ; দায়িত্বটা তোমাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছি। আমি কোনো নোট রাখিনি; খসড়া হিসাবগুলো সব নষ্ট করে ফেলেছি। কেউ যেন না জানে। সব তোমাদের মনে রাখতে হবে।”
“ম্যাগনিফিসো,” কড়া গলায় আদেশ করল বেইটা। “উপরে যাও।”
অনিচ্ছাসত্ত্বেও উঠল ক্লাউন। তার বিষণ্ণ চোখ দুটো মিস এর উপর।
দুর্বলভাবে ইশারা করল মিস, “ও থাকলে কোনো অসুবিধা নেই; থাকো ম্যাগনিফিসো।
দ্রুত বসে পড়ল ক্লাউন। বেইটা চোখ নামিয়ে নিল মেঝের দিকে। ধীরে, খুব ধীরে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল।
কর্কশ ফিসফিস সুরে মিস বলল, “আমি জানি সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন জয়ী হবে, যদি সময়ের আগেই ধরা না পড়ে। নিজেদের তারা গোপন রেখেছে; সেই গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে; তার কারণ আছে। তোমরা যাবে সেখানে। আমার কথা শুনছ?”
প্রায় যন্ত্রণায় কেঁদে উঠল টোরান, “হ্যাঁ, হা! বলুন কীভাবে যেতে হবে। এবলিং? কোথায়?”
“বলছি,” মিস-এর কণ্ঠ দুর্বল।
কিন্তু বলতে পারেনি কখনো।
বেইটা, বরফের মতো সাদা মুখ, ব্লাস্টার তুলে গুলি করল, হাততালির মতো একটা শব্দ প্রতিধ্বনি তুলল বদ্ধ জায়গায়। কোমর থেকে উপরের দিকে মিস-এর। শরীরের কোনো চিহ্ন নেই, শুধু পিছনের দেয়ালে একটা পোড়া গর্ত। বেইটার শিথিল আঙুল থেকে ব্লাস্টার খসে পড়ল মেঝেতে।
*