ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার by আইজাক আসিমভ, chapter name প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল - ১. জাদুকরের সন্ধানে

প্রথম পর্ব : দ্য জেনারেল - ১. জাদুকরের সন্ধানে

বেল রিয়োজ এসকর্ট ছাড়াই চলাচল করেন। গ্যালাকটিক এম্পায়ারের অগ্রযাত্রায় ক্ষুব্ধ হয়ে আছে এমন এক স্টেলার সিস্টেমে অবস্থানরত সামরিক বহরের প্রধানের জন্য কাজটা ইম্পেরিয়াল কোর্ট এর নিয়ম বহির্ভূত।

কিন্তু বেল রিয়োজ তরুণ এবং উদ্যমী-নিরাবেগ এবং হিসেবি রাজদরবারের নির্দেশে মহাবিশ্বের শেষ প্রান্তে ছুটে যাওয়ার মতো যথেষ্ট উদ্যমী-তা ছাড়াও তিনি কৌতূহলী। লোক মুখে ছড়ানো অদ্ভুত চমকপ্রদ কিছু কাহিনী তার কৌতূহল বাড়িয়ে তুলেছে। একটা সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা তার প্রথম বৈশিষ্ট্য দুটোকে একত্রিত করেছে। সব মিলে তিনি হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য।

পুরোনো গ্রাউণ্ড কার থেকে নেমে জীর্ণ ভবনের দরজার সামনে অপেক্ষা করতে লাগলেন। দরজার ফটোনিক দৃষ্টি জীবন্ত হয়ে উঠল। কিন্তু দরজা খোলার পর দেখা গেল সেটা হাতে ধরা।

বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে হাসলেন রিয়োজ। “আমি রিয়োজ-”

“চিনতে পেরেছি।” নিজের জায়গায় অনড় দাঁড়িয়ে থাকলেন বৃদ্ধ। “কী। প্রয়োজন?”

এক পা সরে আত্মসমর্পণের ভঙ্গি করলেন রিয়োজ। “শান্তি। যদি আপনি ডুসেম বার হন, তা হলে একটু কথা বলার সুযোগ চাই।”

ডুসেম বার সরে দাঁড়ালেন একপাশে, ঘরের দেয়ালগুলো আলোকিত হয়ে উঠল। জেনারেল যেন দিনের আলোয় প্রবেশ করলেন।

ভেতরের দেয়াল স্পর্শ করে তিনি আঙুলের দিকে তাকালেন। “আপনাদের সিউয়েনায় এই জিনিস আছে?”

বার-এর মুখে চিকন হাসি। “সবার কাছে নেই। নিজের হাতে যতদূর সম্ভব মেরামত করে আমি এতদিন টিকিয়ে রেখেছি। দরজায় অপেক্ষা করিয়ে রাখার জন্য দুঃখিত। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র অতিথির আগমন রেজিস্ট্রার করতে পারলেও দরজা খুলে দিতে পারে না।”

“ঠিক মতো মেরামত করতে পারেননি?” ঠাট্টার সুরে বললেন জেনারেল।

“যন্ত্রপাতিগুলো দুর্লভ হয়ে পড়েছে। বসুন, স্যার। চা খাবেন?”

“মাই গুড স্যার, স্যিউয়েনায় সামাজিক মেলামেশায় চা না খেয়ে পারা যায়?”

সম্ভ্রান্ত বৃদ্ধ লোকটি চলে গেলেন নিঃশব্দে, তার আগে আস্তে করে মাথা নিচু করে অভিবাদন করলেন। ভঙ্গিটা তিনি গত শতাব্দীর সোনালি দিনের অভিজাত পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন।

রিয়োজ তার মেজবানের অপসৃয়মান কাঠামোর দিকে অনিশ্চিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকলেন। তিনি পূর্ণ সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত। অভিজ্ঞতার ঝুলিও বেশ ভারী। কিন্তু তারপরেও একটা প্রাচীন কক্ষের সেকেলে পরিবেশে হঠাৎ করেই টুয়েন্টিয়েথ ফ্লিটের । পাষাণ হৃদয়ের নেতা কেমন যেন ঠাণ্ডা অনুভব করতে লাগলেন।

শেলফে সারি সারি সাজানো নিকষ কালো বক্সগুলোকে বই বলে চিনতে পারলেন জেনারেল। সব অপরিচিত শিরোনাম। ঘরের কোণায় বড় একটা যন্ত্রকে তিনি অনুমানে ধরে নিলেন রিসিভার যা বইগুলোকে শব্দ এবং দৃশ্যে পরিণত করে। কীভাবে কাজ করে তিনি স্বচক্ষে কখনো দেখেননি, তবে শুনেছেন।

বহু আগে যখন পুরো গ্যালাক্সি জুড়ে এম্পায়ার বেড়ে উঠছিল সেই সময় প্রতি দশটার মধ্যে নয়টা বাড়িতেই এরকম সারি সারি বই এবং রিসিভার থাকত।

কিন্তু সময় পাল্টেছে। বই এখন বৃদ্ধ লোকের সঙ্গী। এবং যে কাহিনী থাকে তার অর্ধেকেরও বেশি কাল্পনিক।

চা এসে গেছে, বসলেন জেনারেল। ডুসেম বার নিজের পেয়ালা তুলে বললেন, “আপনার সম্মানে।”

“ধন্যবাদ। আপনার সম্মানে।”

ডুসেম বার বললেন, “শুনেছি আপনি তরুণ। পঁয়ত্রিশ?”

“প্রায় কাছাকাছি। চৌত্রিশ।”

“সেক্ষেত্রে,” হালকা গুরুত্বের সাথে বললেন বার “দুঃখের সাথে জানাতে বাধ্য হচ্ছি আমি আপনার বিনোদনের কোনো ব্যবস্থাই করতে পারছি না। পানীয়, ধূমপান বা কোনো সুন্দরী তরুণীকে আপনার মনোরঞ্জনের জন্য হাজির করতে পারব না।”

“এসবের কোনো প্রয়োজন নেই, স্যার।” বলার সুরে পরিষ্কার বোঝা যায় মজা পেয়েছেন জেনারেল। “এরকম অনুরোধ কি আপনি অনেক বেশি পান?”

“যথেষ্ট। দুর্ভাগ্যক্রমে অজ্ঞ লোকেরা স্কলারশিপের সাথে জাদুবিদ্যাকে গুলিয়ে ফেলে এবং মনে করে যে ভোগবিলাসের জন্য অনেক বেশি জাদুকরী প্রলেপ প্রয়োজন।”

“এবং সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমি ভিন্নমত। আমার মতে স্কলারশিপ জটিল প্রশ্নের সমাধান বের করার একটা কায়দা।”

স্যিউয়েনিয়ান গম্ভীরভাবে কিছুক্ষণ ভাবলেন। “হয়তো আপনিও তাদের মতো ভুলপথে চলছেন।”

“সেটা পরে বোঝা যাবে।” তরুণ জেনারেল পুনরায় খালি কাপে চা ঢেলে নিলেন, তবে স্বাদ বৃদ্ধিকারক ক্যাপসুল নিলেন না।” বলুন প্যাট্রিশিয়ান, জাদুকর কারা? সত্যিকারের জাদুকর?”

বহুদিনের অব্যবহৃত উপাধিটি শুনে কেঁপে উঠলেন বার। “কোনো জাদুকর নেই।”

“কিন্তু তাদের কথা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। স্যিউয়েনার আকাশে বাতাসে তাদের কাহিনী ছড়িয়ে আছে। তাদের ঘিরে একটা কাল্ট তৈরি হয়েছিল। আপনার স্বদেশী যারা তথাকথিত স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করেছে তাদের সাথে এটার অদ্ভুত একটা যোগাযোগ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।”

মাথা নাড়লেন বৃদ্ধ। “আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন? আপনি বিদ্রোহের গন্ধ পেয়েছেন, যার নেতৃত্ব দিচ্ছি আমি?”

কাঁধ নাড়লেন রিয়োজ। “মোটেই না। মোটেই না। আবার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়াও যায় না। আপনার বাবা ছিলেন নির্বাসিত; আপনি নিজে উগ্র স্বদেশী। অতিথি হিসেবে কথাটা আমার বলা হয়তো একটু অশোভন। কিন্তু আমি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। তিন প্রজন্ম পরেও সিউয়েনার সাহসিকতা কমেনি।”

প্রতিউত্তর দিতে একটু সমস্যা হল বৃদ্ধের। “মেজবান হিসেবে কথাটা বলা আমার জন্যও অশোভন। আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই অনেক আগে একজন ভাইসরয় ঠিক আপনার মতোই সিউয়েনিয়ানদের পদানত রাখার কথা চিন্তা করেছিল। সেই একই ভাইসরয়ের নির্দেশেই আমার বাবা পলাতক এবং কপর্দকশূন্যে পরিণত হন, আমার ভাই হন শহীদ, আত্মহত্যা করে আমার বোন। আবার এই পরাধীন স্যিউয়েনিয়ানদের হাতেই সেই ভাইসরয় নৃশংসভাবে মৃত্যুবরণ করে।”

“ও হ্যাঁ, আর এখানে একটা কথা আমাকে বলতেই হচ্ছে। তিন বছর আগেই সেই ভাইসরয়ের মৃত্যুরহস্য আমি সমাধান করেছি। তরুণ এক সৈনিকের আচরণ ছিল কৌতূহলউদ্দীপক। আপনি সেই সৈনিক। আমার মনে হয় না বিস্তারিত বলার প্রয়োজন আছে।”

শান্ত হয়ে গেলেন বার।”কোনো দরকার নেই। আপনার প্রস্তাব?”

“কিছু প্রশ্নের উত্তর।”

“হুমকি দিয়ে লাভ হবে না। আমার বয়স হয়েছে, মৃত্যুর ভয় নেই।”

“মাই গুড স্যার। এখন কঠিন সময়,” অর্থবহ সুরে বললেন রিয়োজ, “এবং আপনার সন্তান আছে, বন্ধু আছে, একটা দেশ আছে যাকে আপনি প্রচণ্ড ভালবাসেন। শুনুন যদি আমি শক্তি প্রয়োগ করতে চাই, তা হলে আপনাকে আঘাত করার মতো দুর্বল কিছু করব না।”

“কী চান আপনি?” ঠাণ্ডা গলায় বললেন বার।

কথা বলার সময় খালি পেয়ালা তুলে নিলেন রিয়োজ। “শুনুন, প্যাট্রিশিয়ান, এখন একজন সফল সৈনিক বলা যায় তাকেই যার মূল দায়িত্ব হচ্ছে বিভিন্ন উৎসবে ইম্পেরিয়াল প্যালেসের ময়দানে ড্রেস প্যারেডে নেতৃত্ব দেওয়া এবং হিজ ইম্পেরিয়াল এর প্রমোদতরীগুলোকে জাঁকজমকপূর্ণ গ্রীষ্মকালীন অবকাশ গ্রহে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমি…আমি ব্যর্থ, চৌত্রিশ বছর বয়সেই ব্যর্থ, এবং আমি তাই থাকতে চাই। কারণ আমি যুদ্ধ পছন্দ করি আর সে কারণেই ওরা আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। রাজদরবারে আমি একটা উৎকট সমস্যা। নিয়ম নীতি মেনে চলতে পারি না। লর্ড অ্যাডমিরালদের বিরোধিতা করি। কিন্তু মহাকাশযান এবং যে সৈনিকরা মহাকাশে নির্বাসিত হতে চায় তাদের নেতা হিসেবে আমি যথেষ্ট ভালো। কাজেই বেছে নেওয়া হল স্যিউয়েনা। এটা সীমান্তবর্তী বিশ্ব; বন্ধ্যা এবং বিদ্রোহে পরিপূর্ণ। এটা যথেষ্ট দূরে, সবাইকে সন্তুষ্ট করার মতো দূরে।

“কিন্তু আমি নিরাশ। দমন করার মতো কোনো বিদ্রোহ ঘটেনি, এবং সীমান্তের ভাইসরয়রাও অনেকদিন থেকে বিদ্রোহ করছে না। অন্তত যতদিন হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির স্বর্গীয় পিতার মহিমান্বিত স্মৃতি মানুষের মনে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে ততদিন পর্যন্ত করবে না।”

“একজন শক্তিশালী সম্রাট।” ফিসফিস করে বললেন বার।

“হ্যাঁ, কিন্তু আমাদের প্রয়োজন আরো বেশি। তিনি আমার মালিক; কথাটা মনে রাখবেন। আমি শুধু তার ইচ্ছাই রক্ষা করছি।”

নিরাসক্ত ভঙ্গিতে কাঁধ নাড়লেন বার। “বর্তমান বিষয়ের সাথে এগুলোর কি সম্পর্ক?”

“দুই কথায় বুঝিয়ে দিচ্ছি। যে জাদুকরদের কথা বললাম তারা এসেছিল সীমান্তের অনেক দূর থেকে, যেখানে নক্ষত্ররা ছড়িয়ে আছে পাতলাভাবে”।

“যেখানে নক্ষত্রেরা ছড়িয়ে আছে পাতলাভাবে-” আবৃত্তি করলেন বার, “এবং মহাকাশ জমে আছে ঠাণ্ডায়।”

“এটা কবিতা?” কপাল কুঁচকালেন রিয়োজ। “যাই হোক, তারা পেরিফেরি থেকে এসেছিল- সম্রাটের মর্যাদা ধরে রাখার জন্য যে অংশে আমি স্বাধীনভাবে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারি, সেখান থেকে খুব বেশি দূরে নয় তারা।”

“এবং হিজ ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টির ইচ্ছা রক্ষা হবে আর আপনার একটা জবরদস্ত লড়াইয়ের আশা পূরণ হবে।”

“ঠিক। কিন্তু কিসের সাথে লড়ব সেটা জানতে হবে। আর এখানেই আপনার সাহায্য প্রয়োজন।”

“কীভাবে বুঝলেন?”

হালকা চালে বিস্কিটের কোণা ভাঙলেন রিয়োজ। গত তিন বছর আমি জাদুকরদের সম্বন্ধে প্রতিটা গুজব, গল্পকাহিনী অনুসরণ করেছি, বিভিন্ন লাইব্রেরি থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। আমার মনে হয়েছে দুটো পৃথক ঘটনা আসলেই সত্য এবং পরস্পর সম্পৃক্ত। প্রথমটা হচ্ছে জাদুকররা এসেছিল সিউয়েনার ঠিক উল্টোদিকের গ্যালাক্সির একেবারে শেষ সীমানা থেকে। দ্বিতীয়টা হচ্ছে আপনার বাবা একজন জীবিত সত্যিকার জাদুকরের সাথে কথা বলেছিলেন।”

বৃদ্ধ সিউয়েনিয়ানের দৃষ্টি নিরাসক্ত। রিয়োজ বললেন, “আমাকে সব খুলে বললেই ভালো করবেন

“কয়েকটা ব্যাপার বললে ভালোই হবে। নিজস্ব সাইকোহিস্টোরিক এক্সপেরিম্যান্ট হবে এটা।”

“কী ধরনের এক্সপেরিম্যান্ট?”

“সাইকোহিস্টোরিক।” বৃদ্ধের মুখে নিরানন্দ হাসি। “বরং আরো চা নেন। আমি অনেক কথা বলব।”

চেয়ারে আরো ভালোভাবে হেলান দিয়ে বসলেন তিনি। দেয়াল থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে স্নান লাল আলো। ফলে এমনকি সৈনিকের কঠোর মুখাবয়বও কেমন যেন নরম হয়ে এসেছে।

ডুসেম বার শুরু করলেন, “আমার সারা জীবনের অভিজ্ঞতা দুটো দুর্ঘটনার ফসল। প্রথম দুর্ঘটনা আমার পিতার সন্তান হিসেবে জন্ম নেয়া। দ্বিতীয়টা হচ্ছে এই বিশ্বের স্থানীয় অধিবাসী হিসেবে জন্ম নেওয়া। ঘটনার শুরু চল্লিশ বছর আগে, ভয়ানক গণহত্যার ঠিক পরপরই যখন আমার বাবা দক্ষিণের জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, আমি ছিলাম ভাইসরয়ের ব্যক্তিগত বাহিনীর একজন গোলন্দাজ। সেই একই ভাইসরয় যার নির্দেশে গণহত্যা সংগঠিত হয় এবং পরে সে নিজেও নৃশংস মৃত্যুবরণ করে।”

আমুদে ভঙ্গিতে হাসলেন বার, তারপর আবার শুরু করলেন, “আমার বাবা ছিলেন এম্পায়ারের একজন অভিজাত ব্যক্তি এবং স্যিউয়েনার সিনেটর। নাম ওনাম বার।

অধৈর্য ভঙ্গিতে বাধা দিলেন রিয়োজ, “কেন তিনি নির্বাসিত হয়েছিলেন আমি জানি। বিস্তারিত বলতে হবে না।”

সিউয়েনিয়ান তাকে পাত্তা না দিয়ে একই ভঙ্গিতে বলে যেতে লাগলেন, “নির্বাসিত থাকাকালে এক আগন্তুক দেখা করতে আসে তার সাথে গ্যালাক্সির শেষ সীমানার একজন বণিক; বয়সে তরুণ, অদ্ভুত বাচনভঙ্গি, সমসাময়িক ইম্পেরিয়াল হিস্টোরি সম্বন্ধে কোনো ধারণা নেই এবং নিজের নিরাপত্তার জন্য তার কাছে ছিল একটা ইনডিভিজুয়াল ফোর্স শিল্ড।”

“ইনডিভিজুয়াল ফোর্স শিল্ড? আপনি যা বলছেন তা একেবারেই অসম্ভব। কোন ধরনের শক্তিশালী জেনারেটর মাত্র একজন মানুষের দেহের আকৃতিতে শিল্ড জমাট বাধাতে পারবে? গ্রেট গ্যালাক্সি, সে কি চাকাঅলা ছোট গাড়িতে করে নিজের সাথে পাঁচ হাজার মিরিয়াটন নিউক্লিয়ার পাওয়ার সোর্স বহন করছিল?”

“এই জাদুকর সম্বন্ধেই আপনি গুজব, গল্প-কাহিনী শুনেছেন।” শান্ত গলায় বললেন বার। “জাদুকর উপাধি এত সহজে অর্জিত হয়নি। চোখে পড়ার মতো কোনো জেনারেটর তার সাথে ছিল না, অথচ সবচেয়ে ভারী যে অস্ত্র আপনি হাতে নিতে পারবেন সেটা দিয়ে তার শিন্ডে তিল পরিমাণ ফুটো করাও সম্ভব ছিল না।”

“পুরো গল্প এইটুকুই? নির্বাসিত এবং ভুক্তভোগী একজন বৃদ্ধের কল্পনা থেকে জাদুকরের জন্ম?”

“জাদুকরের গল্প আমার বাবার জন্মের আগে থেকেই প্রচলিত, স্যার। জোরালো প্রমাণও আছে তার। উক্ত বণিক যাকে আমরা জাদুকর বলি পরে শহরের একজন টেক-ম্যানের সাথে দেখা করে। আমার বাবাই নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ঠিক নিজেরটার মতো একটা শিল্ড জেনারেটর রেখে যায় সে। নিষ্ঠুর ভাইসরয়ের মৃত্যুদণ্ডের পর নির্বাসন থেকে ফিরে এসে বাবা সেটা উদ্ধার করেন। অনেক সময় লেগেছিল–

“জেনারেটরটা আপনার পিছনে দেয়ালে ঝোলানো আছে, স্যার। কাজ করে না। প্রথম দুইদিনের পর কখনোই কাজ করেনি। তবে দেখলেই বুঝবেন যে এম্পায়ারের কেউ এটার ডিজাইন তৈরি করেনি।”

দেয়ালে ঝোলানো ধাতব বেল্ট ভালোভাবে দেখার জন্য হাত বাড়ালেন রিয়াজ। মৃদু শব্দ করে দেয়াল থেকে খুলে এলো সেটা। বেল্টের কিনারায় ডিম্বাকৃতির জিনিসটা তার মনযোগ কেড়ে নিল। আয়তনে একটা বাদামের সমান।

“এটা–” বললেন তিনি।

“জেনারেটর” মাথা নাড়লেন বার। “কীভাবে কাজ করতো এখন আর বের করা সম্ভব নয়। সাব ইলেকট্রিক অনুসন্ধানে দেখা যাবে যে এটা এক টুকরো ধাতু গলিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং বর্ণালিছটার সতর্ক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেও গলিয়ে ফেলার আগে বিভিন্ন অংশগুলো কি ছিল সেটা বের করা যাবে না।”

“তা হলে আপনার জোরালো প্রমাণ শুধুই বাগাড়ম্বর যার শক্ত কোনো ভিত্তি নেই।”

“আপনি আমার কথা শুনতে চেয়েছেন, হুমকি দিয়েছেন যেন কোনো কিছু গোপন না করি। এখন সন্দেহ হলে তো আমার কিছু করার নেই। কথা বন্ধ করে দেব?”

“বলে যান!” কর্কশ সুরে বললেন জেনারেল।

“বাবার মৃত্যুর পর আমি তার গবেষণার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাই এবং তখনই দ্বিতীয় দুর্ঘটনা যার কথা আগে বলেছি সেটার সাহায্য পাই আমি, কারণ সিউয়েনা হ্যারি সেলডনের কথা জানতে পারে।”

“হ্যারী সেলডন কে?”

“সম্রাট চতুর্থ ডালুবেন এর শাসনামলের একজন বিজ্ঞানী। তিনি একজন সাইকোহিস্টোরিয়ান; সর্বশেষ এবং সবার সেরা। তিনি একবার এখানে এসেছিলেন, যখন সিউয়েনা ছিল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র, শিল্প এবং বিজ্ঞানে সমৃদ্ধশালী।”

“হুমম,” তিক্ত সুরে বললেন রিয়োজ, “কোন গ্রহটা দাবি করে না যে প্রাচীন যুগে তারাই ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী?”

“আমি দুইশ বছর আগের কথা বলছি, যখন সবগুলো নক্ষত্র ছিল সম্রাট এর শাসনাধীন: স্যিউয়েনা সীমান্তের কোনো আধা বর্বর বিশ্ব নয়, বরং ছিল গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় বিশ্ব। সেই সময় হ্যারি সেলডন ইম্পেরিয়াল পাওয়ারের পতন এবং পরবর্তীতে পুরো গ্যালাক্সি জুড়ে সীমাহীন বর্বরতার পদধ্বনি বুঝতে পারেন।”

হঠাৎ করেই হাসলেন রিয়োজ। “তিনি বুঝতে পেরেছিলেন? তা হলে ভুল বুঝেছিলেন, মাই গুড সায়েন্টিস্ট। নিজেকে বোধহয় তাই বলেন আপনি। গত এক হাজার বছরের মধ্যে এম্পায়ার এখন সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। সীমান্তের ঠাণ্ডা শূন্যতা আপনার বৃদ্ধ চোখকে অন্ধ করে দিয়েছে। ইনার ওয়ার্ল্ডগুলোয় আসুন একবার। কেন্দ্রের উষ্ণতা এবং প্রাচুর্য দেখে যান।”

“পচন ধরবে প্রথমে বাইরের প্রান্তে। সেটা কেন্দ্রে পৌঁছতে কিছুটা সময় লাগবে। এটাই স্বাভাবিক। গত পনের শতাব্দীর পুরোনো গল্প এটা।”

“তো, হ্যারি সেলডন বুঝতে পারলেন গ্যালাক্সিতে ধারাবাহিকভাবে সীমাহীন বর্বরযুগ শুরু হতে যাচ্ছে।” আমুদে গলায় বললেন রিয়োজ। “তারপর কী, হ্যাঁ?”

“তাই তিনি গ্যালাক্সির দুই বিপরীত শেষ প্রান্তে দুটো ফাউণ্ডেশন তৈরি করলেন-তরুণ, উদ্যমী এবং মেধাবীদের নিয়ে ফাউণ্ডেশন যেখানে তারা বংশ বৃদ্ধি করবে, বেড়ে উঠবে। সতর্কতার সাথে তাদের জন্য একটা গ্রহ নির্বাচন করা হল; একই সাথে সময় এবং পারিপার্শ্বিকতা। এমনভাবে ব্যবস্থা করা হল যেন সাইকোহিস্টোরির অপরিবর্তনীয় গণিতের সাহায্যে ভবিষ্যতের যে ছবি ফুটে উঠেছে সেটা থেকে এবং ইম্পেরিয়াল সিভিলাইজেশনের মূল স্রোত থেকে অনেক দূরে পুরোপুরি নিঃসঙ্গভাবে তারা বেড়ে উঠতে পারে-যেন ত্রিশ হাজার বছরের অবশ্যম্ভাবী বর্বরতার যুগকে কম বেশি এক হাজার বছরে কমিয়ে আনা যায়।”

“মনে হচ্ছে আপনি বিস্তারিত সবই জানেন। কীভাবে?”

“জানি না, জানতামও না।” শান্ত গলায় বললেন প্যাট্রিশিয়ান। পুরো বিষয়টাই আমার বাবার কিছু আবিষ্কার এবং আমার নিজের কিছু গবেষণার কষ্টকর যোগফল। ভিত্তিটা বেশ দুর্বল এবং এই কাঠামোর মাঝে অনেক ফাঁক আছে। সেগুলো পূরণ করার জন্য কোথাও কোথাও অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। তবে আমি ঘটনাটা সত্যি বলে বিশ্বাস করি।

“আপনি খুব সহজেই বিশ্বাস করেন?”

“তাই? এগুলো বের করতে আমার চল্লিশ বছর গবেষণা করতে হয়েছে।”

“হুম্। চল্লিশ বছর! আমি চল্লিশ দিনেই সমাধান করতে পারব। করতেই হবে। সেটা হবে-ভিন্নরকম।”

“কীভাবে করবেন?”

“যেভাবে করতে হয়। ফাউণ্ডেশন আমি খুঁজে বের করব, নিজের চোখে দেখব। দুটোর কথা বলেছেন?”

“রেকর্ডে দুটোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সহায়ক তথ্য প্রমাণ আছে শুধু একটার। বাকিটা সম্বন্ধে বলা হয়েছে সেটা গ্যালাক্সির দীর্ঘ অক্ষের একেবারে শেষ প্রান্তে অবস্থিত।”

“বেশ, আমরা যেটা কাছে হয় সেটাতেই যাব।” উঠে দাঁড়িয়ে কোমরের বেল্ট ঠিক করতে লাগলেন জেনারেল।

“কোথায় যেতে হবে আপনি জানেন?” জিজ্ঞেস করলেন বার।

“মোটামুটি। শেষ ভাইসরয়, আপনি যাকে খুন করেন তার রেকর্ডে আউটার বারবারিয়ানদের সম্বন্ধে সন্দেহজনক কিছু কথা আছে। সত্যি কথা বলতে কি একজন বারবারিয়ান প্রিন্সের সাথে তার মেয়ের বিয়ে হয়। আমি খুঁজে নেব।”

হাত বাড়ালেন তিনি। “আপনার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ।

ডুসেম বার আলতোভাবে তার আঙুল ছুঁয়ে কেতাদুরস্ত ভঙ্গিতে কুর্নিশ করলেন। “আপনি আসায় আমি সম্মানিত।”

“যে তথ্য আপনি দিয়েছেন, আবার বললেন রিয়োজ, “ফিরে আসার পর বুঝতে পারব কীভাবে তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানানো যায়।”

অতিথিকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন বার। অপসৃয়মান গ্রাউণ্ড কারের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললেন, “যদি ফিরতে পারেন।”

.

ফাউণ্ডেশন…চল্লিশ বছর পূর্ণ গতিতে অগ্রসর হওয়ার পর ফাউণ্ডেশন রিয়োজ এর আগ্রাসন এর স্বীকার হয়। হার্ডিন এবং ম্যালোর মহাকাব্যিক উত্থান পর্ব শেষ হয়েছে অনেক আগেই, সেই সাথে শেষ হয়েছে বীরত্ব এবং অসম সাহসিকতা…এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাকটিকা