ৱাশিয়াৱ চিঠি by ৱবীন্দ্ৰনাথ ঠাকুৱ, chapter name তিন

তিন

বহুকাল গত হল তােমাদের উভয়কে পত্র লিখেছিলুম। তােমাদের সম্মিলিত নৈঃশব্দ্য থেকে অনুমান করি সেই যুগলপত্র কৈবল্য লাভ করেছে॥ এমনতরাে মহতী বিনষ্টি ভারতীয় ডাকঘরে আজকাল মাঝে মাঝে ঘটেছে বলে শঙ্কা করি। এই কারণেই আজকাল চিঠি লিখতে উৎসাহ বােধ করি নে। অন্তত তােমাদের দিক থেকে সাড়া না পেলে চুপ করে যাই। নিঃশব্দ রাত্রির প্রহরগুলােকে দীর্ঘ বলে মনে হয়—তেমনিতরােই নিশ্চিঠি কাল কল্পনায় অত্যন্ত লম্বা হয়ে ওঠ। তাই থেকে থেকে মনে হয় যেন লােকান্তর প্রাপ্তি হয়েছে। তাই পাঁজি গেছে বদল হয়ে, ঘড়ি বাজছে লম্বা তানে। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের মতাে আমার দেশে যাবার সময়কে যতই টান মারছে ততই অফুরান হয়ে বেড়ে চলেছে। যেদিন ফিরব সেদিন নিশ্চিতই ফিরব—আজকের দিন যেমন অব্যবহিত নিকটে সেদিনও তেমনিই নিকটে আসবে, এই মনে করে সান্ত্বনার চেষ্টা করি।


 তা হােক, আপাতত রাশিয়ায় এসেছি—না এলে এজন্মের তীর্থদর্শন অত্যন্ত অসমাপ্ত থাকত। এখানে এরা যা কাণ্ড করেছে তার ভালােমন্দ বিচার করবার পূর্বে সর্বপ্রথমেই মনে হয়, কী অসম্ভব সাহস। সনাতন বলে পদার্থটা মানুষের অস্থিমজ্জায় মনেপ্রাণে হাজারখানা হয়ে আঁকড়ে আছে, তার কতদিকে কত মহল, কত দরজায় কত পাহারা, কত যুগ থেকে কত ট্যাকসো আদায় করে তার তহবিল হয়ে উঠেছে পর্বতপ্রমাণ। এরা তাকে একেবারেজটে ধরে টনি মেরেছে—ভয় ভাবনা সংশয় কিছুই মনে নেই। সনাতনের গদি দিয়েছে ঝাঁটিয়ে, নূতনের জন্যে একেবারে নূতন আসন বানিয়ে দিলে। পশ্চিম-মহাদেশ বিজ্ঞানের জাদুবলে দুঃসাধ্য