নয়
ঘরের দাওয়া থেকে যাদববাবু, ধমক দিলেন। তখন গলা নামিয়ে নকুল বলতে লাগল, “তর মতলব বুঝি নাই আমি ভাবছস, মাইয়ার মন ভাঙাইতে গেছিলি তুই! পরাশারে বিয়া করব না। কয়,—ক্যান বিয়া করব না। পরশারে? আমি যার লগে বিয়া দিমু তারেই বিয়া করব—একশ’ বার করব।”
নাগা মাথা নীচু করে বলল, “তুমি গুরুজন, কাইল তোমারে কষ্ট দিয়া দোষ করছি মামু, আমারে মাপ কইরো। আরেক কথা কই শোন, আমি তোমারে একশ’ বিশ টাকা পণ দিমু, পরশার লগে বিয়া দি ও না রূপার।’
নকুল ফোস করে উঠল। ‘পরশার লগে দিমু না, তার লগে দিমু? চাল চুলা নাই তর, বিয়া কইরা বেী নিয়া যাবি কই?”
একথা মিথ্যা নয়। গরীব হলেও পরেশের বাপ . ভাই আছে, ঘুরবাড়ী আছে, তার কিছুই নেই। নাগা চুপ করে রইল।
নকুল চোখ পাকিয়ে বলল, “তরে কষ্টয়া দিতেছি শোন” নাগা, আবার যদি পা দিবি আমার বাড়ীতে, ঠ্যাং তার খোড়া কইরা দিমু আমি।”
নকুল, চলে গেলে পরেশ নাগাকে জিজ্ঞাসা করল, “বুড়া চটছে ক্যান তর উপর?”
একটা কড়া জবাব দিতে গিয়ে নাগা প্রাণপণে আত্মসংবরণ করল, কারণ, পরেশ আতি নম্রভাবে আশ্চর্য বিনয়ের সঙ্গে কথাটা জিজ্ঞাসা করেছে—বদমেজাজী গুরুজনকে ছোট ছেলে যেভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে।
“চটব ক্যান, চটে নাই।” বলে নাগা সেখান থেকে সরে গেল। পরেশ যেন হঠাৎ বড় বেশী ভদ্র আর বিনয়ী হয়ে গেছে। পরেশের সঙ্গে হাতাহাতি মারামারি বরং করা চলে, বন্ধুর মত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আলাপ করবার মত ধৈর্য নাগার নেই।