মাঝিৱ ছেলে by মানিক বন্দোপাধ্যায় , chapter name বাৱো

বাৱো

সারাদিন টিপি টিপি বৃষ্টি পড়েছে আর মাঝে মাঝে ঝাপটী-মারা এলোমেলো বাতাস বয়েছে, -অলস নিজীবি বাতাস। এখন লঞ্চকে প্রাণপণে বন্দরের আশ্রয়ের দিকে ছুটতে দেখেই বোধ হয় বাতাস ধীরে ধীরে সজীব হয়ে উঠতে লাগল।


 যাদববাব জিজ্ঞাসা করলেন, “মন কি কয়, ভিমনা?”


 ভিমন কতকটা স্বন্তির সঙ্গেই জবাব দিল, “বন্দরে ভিড়ামু কর্তা। হঠাৎ বাড়বে না।”


 শুধু বাতাস নয় লঞ্চকে জোরে জোরে দোলা দিয়ে সমুদ্রও জানিয়ে দিতে থাকে ঝড় উঠছে। লিঞ্চের ওঠা-নামা কত হওয়ায় আগে একটা ছন্দ * ছিল, ক্রমে ক্রমে ছন্দ ভেঙ্গে সব যেন বেতালা হয়ে, উঠতে থাকে। এতক্ষণে অন্ধকারের জন্য আপসোস হতে লাগিল নাগার। নাগা ভাবে, হায়, এমুন্ন উত্তাল হয়ে উঠছে সমুদ্র তার কল্পনার সমুদ্রের মত কিন্তু শুধু অনুভব করা ছাড়া চোখ মেলে চেয়ে দেখবার উপায় নেই। দিনের বেলা যদি এই পোড় উঠত। আর চোখ মেলে যতদূর দৃষ্টি যায় এখানকার সমুদ্রের চেহারা সি দেখতে পারত! বন্দরের আলো যখন চোখে পড়ল, জলকন্যা মোচার },খালার মত নাচতে নাচতে কোনমতে এগিয়ে চলেছে। ডেকের উপর দাড়িয়ে থাকা রীতিমত কসরতে দাড়িয়ে গেছে। কখনো সামনের ডেক যেন মুখে এসে ধাক্কা দেবার জন্য উঠে আসছে, পরীক্ষণে আছড়ে পড়ছে ঢেউয়ের পিছনের ঢালু গহবরে। ছোট নৌকায় নাগা নদীতে ঝড়েৰু মুখে পড়েছে, মনে হয়েছে জল আর বাতাসে মিলে যে ভয়াবহ পাগলামি আরম্ভ করেছে, জগতে কি তার তুলনা আছে আর? আজি ছোট একটি জাহাজে তাকে নিয়ে সেই পাগলামির বৃহত্তর অভিনয় শুরু হয়েছে। হায়, পাগলা সাগরের পাগলামি যদি সে চোখে দেখতে পারত আজ।


 কিছুক্ষণ থেকে পঞ্চ ভয়ে প্রায় আধমরা হয়েছিল। কানের কাছে মুখ নিয়ে চীৎকার করে কথা না বললে এখন শোনা যায় না, পঞ্চ বা আপসোসের