আট কুঠুরি নয় দরজা - Aat kuthuri noi dorja by সমরেশ মজুমদার - Samaresh Majumder, chapter name আট কুঠুরি নয় দরজা - নয়

আট কুঠুরি নয় দরজা - নয়

বাবু বসন্তলালের শরীর তারই বাংলোর কফিনে পচছিল। খবরটা পেয়ে ভার্গিসের ভেতরটা নড়ে উঠল। হয়ে গেল, তার সর্বনাশ হয়ে গেল। খবরটা এখনই মিনিস্টারকে দিতে হবে এবং তারপরই শুরু হয়ে যাবে যা হবার। ম্যাডামের কানে খবরটা পৌছানোমাত্র, চোখ বন্ধ করলেন ভার্গিস। বাবু বসন্তলাল বিরাট ব্যবসায়ী, প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসনে এ দেশের জন্যে। রাজনীতিতে তিনি নেই। কিন্তু ম্যাডামের বন্ধু হিসেবে তার ক্ষমতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। মিনিস্টার কিংবা বোর্ড নয়, ম্যাডামের ভালোবাসার মানুষ যে বাবু বসন্তলাল তা ভার্গিসের চেয়ে বেশি আর কে জানে! আর ম্যাডাম মানেই মিনিস্টার, ম্যাডামের ইচ্ছেই বোর্ডের ইচ্ছে।

         
ভার্গিস টেবিলের উল্পোদিকে উদ্বিগ্ন স্বজনের দিকে তাকালেন, আপনি তো ডাক্তার। ভদ্রলোক কতদিন আগে মরে গেছেন বলে মনে হয়েছিল?

         
'পরীক্ষা না করে বলা মুস্কিল। অনুমান, দিন চারেক তো বটেই।'

        
‘এটা হত্যাকান্ড না স্বাভাবিক মৃত্যু? স্বাভাবিক মৃত্যু হলে কেউ মাটির নীচের ঘরের কফিনে নিজে হেঁটে গিয়ে শুয়ে থাকতে পারে না। তাছাড়া ওপরের বেডরুমের চাদরে রক্তের দাগ দেখেছি।"

       
‘হুম! আপনি নিহত মানুষটিকে চেনেন?

       
‘আপনাকে বলেছি এখানে এর আগে আমি কখনও আসিনি।'

       
ভার্গিস উঠে দাড়ালেন, আপনি যে ঠিকানা দিয়েছেন সেখানে আমরা খোজখবর করছি। যা বলেছেন তা যদি সত্যি হয় তাহলে আপনাকে আটকে রাখার প্রয়োজন হবে না।’

          
স্বজনের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, “আমি জানতে পারি কি আপনারা এত ভয় পাচ্ছেন কাকে ?

         
কঠোর চোখে তাকালেন ভার্গিস, আমরা কাউকেই ভয় পাই না। বিছানায় শোওয়ার সময় কাঠপিপড়ে উঠলে তাকে ঝেড়ে ফেলতে হয়। এটা সেরকম ব্যাপার। বাই দ্য ওয়ে, আপনি বলেছেন, এখানকার টুরিস্ট লজে কেউ ঘর বুক করে রেখেছিল যদিও এখানকার কাউকেই আপনি চেনেন না!

        
ঠোট টিপে মাথা নেড়ে হ্যা বলল স্বজন ।

      
 ‘সেই লোক কে?"

       
"তাও জানি না। আমার সিনিয়রের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছে ?

       
আপনাকে কি চিকিৎসা করার জন্য এখানে আনা হয়েছে ?

      
 ‘সম্ভবত তাই। কিন্তু পেশেন্টের নাম আমি জানি না।"

     
 ‘আপনার কি মনে হয় আমাদের শহরে ভাল ডাক্তার নেই ?

     
নিশ্চয়ই আছেন। তবে আমি যে বিযয় নিয়ে কাজ করি তা অনেকেই করেন না।’

       
আপনার বিষয় ?

       
স্বজন চিন্তা করল । তার হারানোর কিছুই নেই। পরিচয় গোপন রাখার কথা তাকে কেউ বলে দেয়নি। এরা যদি তার সম্পর্কে খোজ নেয় তাহলে সহজেই জানতে পেরে যাবে সত্যি কথা বলে সে কোনও অন্যায় করছে না। স্বজন বলল, মানুষের শরীর সৃষ্টি করার সময় ঈশ্বর কখনও বেশ অমনোযোগী থাকেন। কখনও দুর্ঘটনাজনিত কারণে শরীরে বিকৃতি আসে। বিজ্ঞান এখন সেই ক্রটিগুলো শুধরে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। আমি ওই বিষয় নিয়েই কাজ করছি।"

        
ভার্গিস হতভম্ব। তার মাথায় ঢুকছিল না এখানে এমন চিকিৎসা করানোর জন্য কে এই লোকটাকে আনাতে পারে। টেলিফোন বাজল চকিতে রিসিভার তুলে আওয়াজ করেই কুঁকড়ে গেল ভার্গিস। অত বড় শরীর থেকে দ্বিতীয় শব্দটা অস্পষ্ট বের হল, ইয়েস ।

        
আমি তো ভেবে পাচ্ছি না তুমি ওখানে কেন আছ ? তুমি জানো বাবু বসন্তলাল খুন হয়েছেন ?

      
"হ্যা স্যার । এই মাত্র জানলাম ।

      
'জেনেছ অথচ আমাকে জানাওনি ?

      
যে ফোর্সকে আমি সোমের জন্যে পাঠিয়েছিলাম তারা এইমাত্র ডেডবডি নিয়ে ফিরেছে।

        
তুমি ডেডবডি দেখেছ ?

       
‘না স্যার, এখনও– '

        
ভার্গিস । বোর্ড তোমাকে আর বেশি সময় দেবে না। বাবু বসন্তলালের এখন বিদেশে থাকার কথা । অথচ তিনি কয়েকদিন আগে খুন হয়ে তাঁরই বাংলোয় পড়ে আছেন। তুমি কি মনে করেছ এতে তোমার কৃতিত্ব বাড়বে ? তুমি ডেডবডি দেখে এখনই ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করে খবরটা দাও!

       
স্যার, আমি -?

        হ্যাঁ
, তুমি। মিনিস্টার লাইনটা কেটে দিলেন।

      
এই সাতসকালে রুমালে মুখ মুছলেন ভার্গিস। হঠাৎ স্বজনের দিকে তাকিয়ে তার মনে হল এই লোকটা কাজে আসতে পারে। তিনি একটু কাছে এগিয়ে গেলেন, লুক ডাক্তার, আমি তোমাকে এখনই ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমার একটা অনুরোধ তোমাকে রাখতে হবে।'

      
“কি অনুরোধ ?

তোমার সঙ্গে যারা কন্ট্রাক্ট করবে তাদের সব খবর আমাকে জানাবে। একটা কাগজে কয়েকটা নম্বর লিখে সামনে রাখলেন ভার্গিস, এইটে আমার ব্যক্তিগত টেলিফোন নম্বর। আমি না থাকলেও খবরটা রেকর্ডেড হয়ে থাকবে। কেউ জানতে পারবে না।’

        
'আপনি এমন অনুরোধ করছেন কেন ?

        
এই শহরে কোনও মানুষের তোমাকে প্রয়োজন এটা ভাবতে অবাক লাগছে, তাই। আমরা আকাশলালকে অনেকদিন দেখিনি। সে কি অবস্থায় আছে তাও জানি না। কে বলতে পারে ওর জন্যেই হয়তো তোমাকে এখানে আনা হয়েছে বেল টিপলেন ভার্গিস। তারপর স্বজনকে সেখানে বসিয়ে রেখেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। দরজার বাইরে ছুটে আসা এক অফিসারকে দেখে একটু দাড়ালেন, লোকটাকে রিলিজ করে দাও কিন্তু চব্বিশ ঘন্টা কেউ যেন ওর সঙ্গে ছায়ার মত লেগে থাকে। আমি ওর সমস্ত গতিবিধি জানতে চাই।'

        
হেডকোয়ার্টার্সে এই সকালেই বেশ সন্ত্রস্ত ভাব। বাবু বসন্তলালের মৃত্যু মানে শাসকদলের ওপর আকাশলালের আঘাত, এমন একটা ধারণা তৈরি হয়ে গেছে। আসিস্টেন্ট কমিশনাররা ভার্গিসকে দেখে স্যালুট করলেন। ভার্গিস গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার খবরটা পেয়েছেন মনে হচ্ছে।

        
একজন উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ স্যার।'

          
হুম। এই ফোর্সে সবার পরে আমাকেই খবর দেওয়া হয় দেখছি।

          
না স্যার, আপনি তখন রেস্ট নিচ্ছিলেন, তাই-।"

         
ওই বাংলোতে ফোর্স নিয়ে কে গিয়েছিল ?

           তৃতীয়
জন মাথা নাড়ালেন, 'আমি স্যার।'

          
লোকটার আদোণপান্ত জানেন ভার্গিস। প্রমোশন দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না তার, শুধু মিনিষ্টারের কথায় বাধ্য হয়ে সই করতে হয়েছে। ভার্গিস জিজ্ঞাসা করলেন, রিপোর্ট কোথায় ?

        
 ‘আমি ফিরে এসেই জানিয়ে দিয়েছি স্যার । ওটা আপনার ডেস্কে আছে।"

         
সোম কোথায় ?

         
পাইনি। আমরা বাংলোটা তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। আমরা যাওয়ার আগে সেখানে অন্তত দুটো মানুষ ছিল । তারা খাওয়াদাওয়া করেছে সেখানে । মনে হয় বিছানায় শুয়েছিল- '

        
‘আমি বেডরুম স্টোরি শুনতে চাই না। কিভাবে মারা গেছেন বাবু বসন্তলাল ?

         
মৃতদেহ পোস্টমর্টেম না করলে কিন্তু বোঝা যাবে না স্যার?

        
এখন থেকে বাংলোয় যাওয়ার রাস্তা একটাই। যদি কোনও মানুষ ওখানে তোমাদের আগে গিয়ে থাকে তাকে ধরতে পারলে না কেন ?"

         
স্যার এই রাত্রে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকলে কি করে খুঁজে বের করব । যাওয়ার পথে আমারা একটা ভাঙাচোরা গাড়িকে ওপরে উঠে আসতে দেখেছিলাম ।

       
'গাড়িটাকে থামিয়েছিলে ?

       
'না। কারণ ওর নেমপ্লেট আমাদের দেশের নয়।’

       
ইডিয়ট । ভার্গিস আর দাড়ালেন না । হাটতে হাটাতে তার মনে হল এই ডাক্তার দম্পতির সঙ্গে সোমের হয়তো যোগাযোগ হয়েছিল। ডাক্তারকে চেপে ধরল সেটা তিনি বের করতে পারতেন। কিন্তু না, শক্তি প্রয়োগ না করেও ওর কাছ থেকে খবর বের করা যাবে বলে এখনও তিনি বিশ্বাস করেন।

কেন্দ্রীয় শবাগারের সামনে ভার্গিসের কনভয় থামল। দ্রুত পায়ে তিনি ভেতরে ঢুকলেন। তাঁকে 
দেখে প্রহরীরা ব্যস্ত হয়ে দরজা খুলে দিয়েছিল । সোজা চলে গেলেন সেই কফিনটার সামনে যেখানে বাবু বসন্তলালের শুয়ে আছে। নাকে রুমাল চেপে তিনি ঝুঁকে দেখলেন। হ্যা চিনতে কোনও ভুল হয়নি। এখন বতই ফুলে-ফেপে উঠুক এই মানুষটি জীবিত অবস্থায় তাকে কম নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরায়নি। লোকটা মরে যাওয়ায় তার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু হতে পারছেন না। মরে গিয়ে লোকটা তাকে কোথায় নিয়ে যাবে তা একমাত্র শয়তান জানতে পারে। ভাল করে দেখলেন কোনও আঘাতের চিহ্ন আছে কি না । না নেই। ওই বাংলোটায় একজন কেয়ারটেকার ছিল, তার কথা কেউ বলছে না। সম্ভবত গা ঢাকা দিয়েছে ব্যাটা। ওটাকে ধরলেই হয়তো হত্যারহস্য আর রহস্য থাকবে না।

           
বাইরে বেরিয়ে এসে মিনিস্টারের আদেশ মনে করলেন ভার্গিস । খবরটা এখনই ম্যাডামের কাছে পৌছে দিতে হবে তাকে অথচ বাবু বসন্তলালের স্ত্রীকে আগে খবরটা জানানো দরকার ছিল। ভদ্রমহিলা নাকি খুব গোড়া, বাইরে বের হন না, ভার্গিস তাকে কখনও দ্যাখেননি। কিন্তু স্বামীর মৃত্যু সংবাদ তো স্ত্রীর আগে পাওয়া উচিত। ওয়ারলেসে হেডকোয়ার্টার্সে খবর পাঠালেন ভার্গিস, একজন অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার এখনই যেন দায়িত্বটা পালন করে।

          
শহরের সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকাটাকে ভি আই পি পাড়া বলা হয়। ভার্গিসের কনভয় বাড়িটার সামনে থামল তার সামনেটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেয়েলি সাজগোজের দোকান। প্রায় প্রতিটি জিনিসই বিদেশি এবং চড়া দামে বিক্রি হয়। দোকানের পাশ দিয়ে গাছপাতায় ঘেরা প্যাসেজ। বাকি গাড়িগুলোকে রাস্তায় রেখে ভার্গিসের জিপ ঢুকল সেখানে। সুন্দর সাদা দোতলা বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামতেই দারোয়ান ছুটে এল । ভার্গিস বলল, ম্যাডামকে খবর দাও, জরুরি দরকার।’

          
দারোয়ান মাথা নিচু করল, মাফ করবেন হুজুর আপনি সেক্রেটারি সাহেবের সঙ্গে কথা বলুন ।

         
কেন ? ভার্গিস বিস্মিত। হুকুম আছে সকাল নটার আগে ওঁকে যেন বিরক্ত করা না হয়।

         
ভার্গিস ঘড়ি দেখলেন, এখনও পয়ত্রিশ মিনিট বাকি। অগত্য সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠলেন। দারোয়ান আগে আগে ছুটে গিয়ে সেক্রেটারিকে খবর দিয়েছিল। মহিলাকে আগেও দেখেছেন ভার্গিস। পাচ ফুট লম্বা হাড়সর্বস্ত চিমসে মুখের মহিলা কখনও হাসেন বলে মনে হয় না। এই একটা ব্যাপারে তার সঙ্গে মিল থাকলেও বিরক্তি আসে ।

         
সেক্রেটারি বললেন, ইয়েস-।"

        
"ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করা দরকার । জরুরি।"

        
মাফ করবেন, আপনি ন’টার পরে আসুন ।

        
‘আমি বলছি ব্যাপারটা জরুরি।'

        
আমি আদেশ মান্য করতে বাধ্য।"

        
'টেলিফোনে কথা বলতে পারি ? ব্যাপারটা ওঁরই প্রয়োজনে ৷”

         
সেক্রেটারি একটু ইতস্তত বললেন, ম্যাডাম এখন আসন করছেন। এইসময় কনসেন্ট্রেশন নষ্ট করতে তিনি পছন্দ করেন না। তবু— ।

         
ইন্টারকমের বোতাম টিপে কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর সেক্রেটারি বললেন, ম্যাডাম, আমি অত্যন্ত দুঃখিত। কিন্তু কমিশনার অফ পুলিশ খুব জরুরি ব্যপারে নিজে কথা বলতে এসেছেন- ইয়েস, ঠিক আছে ম্যাডাম । রিসিভার নামিয়ে রেখে সেক্রেটারি বললেন, 'আসুন।'

         
সাধারণত দোকানের পেছন দিকের অফিসেই কয়েকবার তাকে যেতে হয়েছে। ম্যাডামের খাসমহলে ঢোকার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। সিড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় মনে হল এই ভদ্রমহিলার রুচি আছে। কী চমৎকার সাজানো সব কিছু। নির্দিষ্ট একটি ঘরের বন্ধ দরজায় টোকা দিলেন সেক্রেটারি। ভেতর থেকে আওয়াজ ভেসে এল, কাম ইন, প্লিজ।

        
সেক্রেটারি ইঙ্গিত করতেই ভার্গিস দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন। ম্যাডাম বসে আছেন একটা কাঠের চেয়ারে। তার উর্ধ্বাঙ্গে সাদা তোয়ালে জড়ানো। নিম্নাঙ্গে ট্র্যাকসুট গোছের কিছু।         
কাছে যেতেই বললেন, সুপ্রভাত । বসুন মিস্টার ভার্গিস।

        
বসার ইচ্ছে না থাকলেও আশে পাশে তাকিয়ে কোনও চেয়ার দেখতে পেলেন না ভার্গিস। একটা বেঁটে মোড়া সামনে রয়েছে। সেটাকেই টেনে নিতে হল। বসেই মনে হল অদ্রমহিলার অনেক নীচে তিনি মুখ তুলে কথা বলতে হবে।

       
“কি খাবেন ? চা না কফি ?

         
ধন্যবাদ। এখন আমি খুবই ব্যস্ত।

       
‘স্বাভাবিক। সময়সীমা পার হতে বেশি দেরি নাই।’

       
‘ম্যাডাম । আমি সবরকম উপায়ে চেষ্টা করছি। আগামী কাল সকালে লোকটাকে ঠিক গ্রেপ্তার করতে পারব।"

       
'হঠাৎ এই আত্মবিশ্বাস পেলেন কি করে ?

       
‘আমি নিশ্চিত ।”

        
বাঃ । তাহলে সবাই খুশি হবে। আমার এই লোকটাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করে। ধরামাত্র যেন ওকে না মেরে ফেলা হয়। ওর বিচার স্বাভাবিক নিয়মেই হওয়া উচিত। অবশ্য আমার যে কথা শুনতে হবে তার কোনও মানে নেই। আপনাদের মিনিস্টার আছেন— ।'

        
আপনার নির্দেশ আমার মনে থাকবে ম্যাডাম ।

             
‘এইসময আমি কারও সঙ্গে দেখা করি না । ম্যাডাম উঠলেন। ভার্গিসের মনে হল কে বলবে এই মহিলার যৌবন চলে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। এমন মাপা-শরীরের সুন্দরী তিনি কখনও দ্যাখেননি।

             
‘আমি দুঃখিত ম্যাডাম ।

             
ঠিক আছে । আমি দেখা করলাম কারণ আপনি বিয়ে করেননি।

            
ভার্গিস হতভম্ব। এই ব্যাপারটা যে তার যোগ্যতা হয়ে দাড়াবে তা কখনও ভাবেননি ।

            
বিবাহিত পুরুষদের আমি ঘেন্না করি। ওদের বাসনার শেষ হয় না। কেন এসেছেন ? শেষ শব্দ দুটো এত দ্রুত উচ্চারণ করলেন ম্যাডাম যে ভার্গিসের মাথায় ঢুকল না কেন তিনি এখানে এসেছেন। ম্যাডাম হাসলেন, 'আপনি নিশ্চয়ই আমার শরীর দেখতে এখানে আসেননি ?

           
এবার নড়েচড়ে বসলেন ভার্গিস। তারপর উঠে দাড়ালেন। আজ্ঞে না। ম্যাডাম আমি একটা খারাপ খবর নিয়ে এখানে এসেছি।’

           
বলে ফেলুন।"

           
ইয়ে, আমি খুবই দুঃখিত, বাবু বসন্তলাল আর জীবিত নেই।'

           
ম্যাডাম তার সুন্দর মুখটা ওপরে তুললেন, তাই ?

           
প্রচন্ড হতাশ হলেন ভার্গিস । তিনি ভেবেছিলেন এই খবরটা ম্যাডামকে খুব আহত করবে। নিজেকে সামলে বললেন, ‘হ্যা।’

            
গতরাত্রে তার মৃতদেহ আবিষ্কার হয়েছে।

           
‘কোথায় ?”

           
‘তারই বাংলোয়।’

           
কিন্তু তার তো এখন বিদেশে থাকার কথা ।

         
 ‘সেটাই রহস্যের । এমনকি বাংলোর বাইরে তার গাড়ি ছিল না।

          
আর কে ছিল সেখানে ?"

          
‘কেউ না! ভার্গিস বললেন, তবে হত্যাকারী ধরা পড়বেই।’

         
“কিরকম ?

         
‘ওঁর চৌকিদার উধাও হয়েছে। লোকটাকে ধরলেই রহস্যের কিনারা হয়ে যাবে।'

        
‘লোকটাকে ধরা আপনার কর্তব্য ।"

       
“হ্যাঁ, ম্যাডাম ।’

           
কিন্তু আপনি কতগুলো কাজ একসঙ্গে করবেন ? আকাশলালকে না ধরতে পারলে-

          
‘জানি ম্যাডাম ।’

         
‘কে ওর মৃতদেহ আবিষ্কার করেছিল ?

         
“এক ডাক্তার দম্পতি ওখানে আশ্রয়ের জন্যে গিয়ে প্রথম সন্ধান পায়। পরে আমি ফোর্স পাঠিয়ে ডেডবডি নিয়ে আসি। খুব দৃঢ়ভাবে সঙ্গে কখাগুলো বললেন ভার্গিস।

       
‘ওর স্ত্রীকে জানানো হয়েছে ?

      
“হ্যাঁ, ম্যাডাম ।’

       
তাহলে ওর শেষকাজ আজই করে ফেলা হোক ।

      
"একটু সময় লাগবে বোধহয়।"

      
"কেন ?"

      
"পোস্টমর্টেম করতে হবে। মৃত্যুর কারন জানা দরকার।

      
‘বাবু বসন্তলালের মৃত্যুর কারণ বিষ অথবা বুলেট হলে সেটা জানার পর তো তার প্রাণ ফিরে আসবে না। মিছিমিছি ওই শরীরটাকে কাটাছেড়া না করে শেষকৃত্যের জন্যে পাঠিয়ে দেওয়া যুক্তিসঙ্গত নয় কি 2' ম্যাডাম দু’পা এগিয়ে এলেন ।

       
ভার্গিস উঠে দাড়ালেন। তার শরীর শিরশির করছিল। বললেন, কিন্তু নিয়ম মানতে হলে)

মিস্টার ভার্গিস, আপনি নিয়ম সবক্ষেত্রে মানেন ?

       
না, তবে-।"

      
'আপনি আমার কাছে যে কারণে এসেছেন সেই কারণেই পোস্টমর্টেম করবেন না।"

      
‘বেশ ।”

      
"এবার আসতে পারেন।”

       
ভারী পায়ে ভার্গিস বেরিয়ে এলেন। বাইরে সেক্রেটারি অপেক্ষা করছিল। সেই মহিলাই তাকে পথ দেখিয়ে নীচে নামিয়ে আনল। সিড়িতে পা দেওয়ামাত্র ভার্গিস শুনলেন সেক্রেটারি তাকে ডাকছেন। তিনি কপালে ভাজ ফেলতেই মহিলা এগিয়ে এলেন, ম্যাডাম ইন্টারকমে— ।

       
অগত্যা আবার উঠে আসতে হল। রিসিভার তুলে হ্যালো বলতেই ভার্গিস ম্যাডামের গলা শুনতে পেলেন, “আপনাকে আমার মনে থাকবে ।" লাইন কেটে গেল।

       
হেডকোয়ার্টার্সের সামনে এসে দাড়াল স্বজন। একটা বীভৎস রাতের শেষ যে এত সহজে হবে তা সে ভাবেনি। এখন খুব ক্লান্তি লাগছে। কিভাবে টুরিস্ট লজে পৌছানো যায় ? সামনের রাস্তা ধরে হাটতে শুরু করল সে। এই শহরে খুব বড় ধরনের গোলমাল হচ্ছে বা হবে এবং সে নিজের অজান্তে সেই সময়ে এসে পৌছেছে। হাটতে হটতে সে পোস্টারগুলো দেখতে পেল। আকাশলাল। দশ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে লোকটাকে ধরিয়ে দিতে পারলে। তার মানে ওই লোকটাই পুলিশের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে এসবের তো কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ এই শহরে থাকতে হলে পুলিশ কমিশনারের অনুরোধ তাকে রাখতেই হবে। শব্দটা অনুরোধ কিন্তু মানে হল আদেশ ।

         
হঠাৎ একটা ট্যাক্সি সামনে এসে দাড়াল, স্যার ?

         
খুশি হল স্বজন, টুরিস্ট লজ যাবেন ভাই ?

         
নিশ্চয়ই। দরজা খুলে দিল লোকটা। তারপর সামনের ছোট আয়নায় পেছন দিয়ে তাকাল, আপনাকে অনুসরণ করা হচ্ছে স্যার।'

        
"তার মানে ?

        
ট্যাক্সি চলতে শুরু করল। ড্রাইবার বলল, পুলিশের লোক, আমরা বুঝতে পারি।"

        
স্বজন চকিতে পেছন ফিরে তাকাল । স্বাভাবিক রাস্তা। কাউকেই সন্দেহ করতে সে পারল না। টুরিস্ট লজের সামনে ট্যাক্সি থামলে স্বজন নেমে দাড়তেই ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে গেল। স্বজন অবাক । লোকটা ভাড়া নিল না কেন ? তার মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। টুরিস্ট লজে ঢুকতেই একটা বেয়ারা গোছের লোক এগিয়ে এল, আপনি ডাক্তার ?

        
"হ্যা ।”

        
সাত নম্বর ঘরে ফ্ল্যাশ কাজ করছে না বলে আপনাদের আট নম্বর ঘর দেওয়া হয়েছে আসুন। লোকটি সামনে এগিয়ে চলল ।